BRAKING NEWS

মোদীর আমলে ভারতের এক ইঞ্চি জমি দখল করতে পারেনি চিন, বলেছেন অমিত শাহ

– ১৯৬২ সালের চিনা আগ্রাসন ভুলতে পারে না অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ

– অসমে শান্তি স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই

লখিমপুর (অসম)৯ এপ্রিল (হি.স.) : মোদী সরকারের আমলে ভারতের এক ইঞ্চি জমি দখল করতে পারেনি চিন। অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ ১৯৬২ সালের চিনা আগ্রাসন ভুলতে পারে না, বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

আজ মঙ্গলবার লখিমপুরে বিজেপি-প্রার্থী প্রদান বরুয়ার সমর্থনে আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্র এবং সমবায় দফতরের মন্ত্ৰী অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতের অবিচলতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অমিত শাহ তাঁর ভাষণে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তদানীন্তন জওহরলাল নেহরু নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ করে শাহ ১৯৬২ সালের চিনা আগ্রাসনের প্ৰসঙ্গ টেনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ওই সালে চিনা আগ্রাসনের সময় নেহরু অসম এবং অরুণাচল প্রদেশকে ‘বাই-বাই’ বলেছিলেন। এই দুই রাজ্যের মানুষ কখনও ওই ঘটনা ভুলতে পারে না। তিনি বর্তমান প্রশাসনের সক্রিয় পদ্ধতি ও পদক্ষেপের সঙ্গে নেহরু সরকারের বৈসাদৃশ্যের ব্যাখ্যা করেছেন।

ভারতের সীমান্ত রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে শাহ জোর দিয়ে বলেন, ‘চিন নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে আমাদের এক ইঞ্চি জমিও দখল করতে পারেনি।’ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষিত করতে, অনুপ্রবেশ রোধে এবং দখল প্রতিরোধে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি।

বিরোধী, বিশেষ করে কংগ্রেসকে বিঁধে অমিত শাহ চিনের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে ডোকলামে অচলাবস্থার মতো উদাহরণ টেনে বলেন, বর্তমান মোদীর ভারত সরকার সফলভাবে চিনা আগ্রাসন প্রতিহত করেছে।

অমিত শাহ বলেন, দশটির বেশি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে অসমে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই মোদী। তাই আসন্ন লোকসভা নিৰ্বাচনে প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি এবং রাহুল গান্ধী নেতৃত্বাধীন ইন্ডি জোটের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে নিৰ্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিগত ৭০ বছর অসমের উন্নয়ন না হওয়ার জন্য তিনি কংগ্ৰেসের সমালোচনা করে দশ বছরে মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের তুলনা করেছেন। তিনি লাচিত বড়ফুকনের মতো বীরকে সম্মান জানানোর পাশপাশি অসমের স্বাস্থ্যসেবা, সীমান্ত সুরক্ষা এবং কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে বিজেপি সরকারের প্ৰচেষ্টার ওপর আলোকপাত করেন।

কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী অমিত শাহ বলেন, আজ একদিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ইন্ডি জোট, অন্যদিকে নরেন্দ্ৰ মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পাৰ্টি পূৰ্ণ শক্তির ওপর অবস্থান করছে। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰভাইয়ের নেতৃত্বে এবার ৪০০-এর বেশি আসন লাভ করে আগামী পাঁচ বছর বিজেপি পূৰ্ণ শক্তিতে সরকার চালাবে, বলেন তিনি।

শাহ বলেন, রাহুল গান্ধী অসমের সংস্কৃতির কথা বলেন। কিন্তু তাঁর ঠাকুমার (ইন্দিরা গান্ধী) আমল থেকে অসমের প্রতি কী ভয়ানক অন্যায় করা হচ্ছিল তা এই রাজ্যের সবাই জানেন। কংগ্রেসের অন্যায়ের সুবাদে হাজার হাজার যুবক বিপথে গিয়ে উগ্রপন্থার পথ নিয়েছিল। এক সময় হাজার হাজার যুবক-যুবতীর মৃত্যুও হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী বলেন, কংগ্ৰেসের আমলে উগ্ৰপন্থী, ধৰ্মঘট এবং সন্ত্ৰাসবাদ ছাড়া অসমে কিছুই ছিল না। কংগ্ৰেসের ভুল নীতির জন্যই অসমবাসীর মধ্যে ব্যাপক অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছিল।

তিনি বলেন, নরেন্দ্ৰ মোদীর নেতৃত্বে কেবল শান্তি প্ৰতিষ্ঠাই নয়, আজ পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে একটি পাখিও ভারতে প্ৰবেশ করতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে অনুপ্ৰবেশ।

অমিত শাহ বলেন, কংগ্ৰেসের আমলে কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানে ব্যাপক হারে গণ্ডার বধ করত চোরাশিকারিরা। এখন হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকার গণ্ডারকে সুরক্ষা দিয়ে অসমের পৰ্যটন সুরক্ষিত করেছে। তিনি বলেন, হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার সরকার কাজিরঙা এবং শংকরদেব প্রচলিত সত্ৰের ভূমি অনুপ্ৰবেশকারীর দখল থেকে মুক্ত করাই নয়, কাজিরঙায় গণ্ডার শিকারও সম্পূৰ্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে।

প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদীর উদ্ধৃতি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী বলেন, অসম সহ উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তন হলে দেশের ভাগ্য বদল হয়। অসম সহ উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের বিকাশ হলে দেশের বিকাশ হয়।

তিনি বলেন, উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের ৮০ শতাংশ ভূখণ্ড থেকে সশস্ত্ৰ বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফসপা) প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিজেপি সরকার স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তা সম্ভব হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী বলেন, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সোনিয়া গান্ধী এবং মনমোহন সিঙের কংগ্ৰেস সরকার অসমের উন্নয়নে মাত্র ১ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল। অথচ নরেন্দ্ৰ মোদী ২০১৪ থেকে ২০২৪, তাঁর ১০ বছরের আমলে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার টকা দিয়েছেন। এছাড়া রেলওয়ের উন্নয়নে ৯৫ হাজার কোটি, ভূতল সড়কপথের জন্য ৩০ হাজার কোটি এবং বিমান সংস্থার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা অসমকে দিয়েছেন মোদী।

অসম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কৰ্কট রোগমুক্ত করতে ক্যানসার হাসপাতালের নেটওয়াৰ্ক গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এমন এক সময় আসবে, যখন অসমে কোনও রোগীকে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য দিল্লি বা অন্য রাজ্যে যেতে হবে না। তিনি বলেন, অসমের প্রায় সব কয়টি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ গুয়াহাটিতে নির্মিত এইমস প্রসঙ্গেও বলেছেন অমিত শাহ। বলেন, প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী প্রচলিত কিষাণ সম্মান নিধি যোজনার বলে ১৮ লক্ষ সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। নল-জল প্রকল্পে ৫৫ লক্ষ পরিবার উপকৃত হয়েছে, ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে পাঁচ লক্ষ টাকা পৰ্যন্ত সম্পূৰ্ণ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন, ৪৩ লক্ষ শৌচাগার নিৰ্মাণ করে মা-বোনদের সম্মান রক্ষার কাজও করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই, বলেন শাহ।

আজকের নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। ছিলেন অসম প্রদেশ বিজেপি সভাপতি ভবেশ কলিতা, বিজেপির অসম লোকসভা নিৰ্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভারী ক্যাপ্টেন অভিমন্যু, বিধায়ক মানব ডেকা, লখিমপুরের বিজেপি-প্ৰাৰ্থী প্ৰদান বরুয়া সহ বহু নেতা-কার্যকর্তা-সমর্থক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *