BRAKING NEWS

তৃণমূলের বিক্ষোভে বন্ধ সিঁদুলি খোলামুখ খনি সম্প্রসারণের কাজ, লোকসানের মুখে ইসিএল

র্গাপুর, ১ নভেম্বর (হি. স.) লিখিত আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়ার পরও পরিত্রাণ মিলল না খনি সম্প্রসারণে। একগুচ্ছ দাবী নিয়ে পাল্টা আন্দোলন তৃণমূলের। আর তার জেরে সিদুলী খোলামুখ খনি সম্প্রসারণের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ল। আর তাতেই দৈনিক প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা লোকসানের মুখে পড়ল রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল। নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে অন্ডালের সিঁদুলি কোলিয়ারীতে। আন্দোলনকারীরা দলের কেউ নয় বলে সাফাই ব্লক নেতৃত্বের। ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে শাসকদল তৃণমূল।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক ইসিএলের কেন্দা এরিয়ার সিদুলি কোলিয়ারি সম্প্রসারিত প্রজেক্টের করার জন্য অনুমোদন দেয়। জানা গেছে, ২৩ বছরে প্রায় ২৬ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদিত হবে ওই প্রজেক্ট। খোলামুখ ও ভুগর্ভস্ত খনি হবে। তার জন্য প্রায় ২৫৪ হেক্টর জমির প্রয়োজন। যার মধ্যে ১২৪ হেক্টর জমি ইসিএলের রয়েছে। কিছু খাস জমি রয়েছে। এছাড়াও আর জমি প্রয়োজন।
ইসিএল সুত্রে জানা গেছে, প্রজেক্টের মুল কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে সিঁদুলির ভুগর্ভস্থ খনির ড্রাইভের জন্য জায়গা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। তাতে ইসিএলের একটি স্টেডিয়াম ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। ওই কাজ করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই খনি সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে সিদুলি গ্রাম। প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা রয়েছে গ্রামে। রয়েছে স্কুল। খেলার জন্য স্টেডিয়াম। তার ফলে খনির সম্প্রসারণে ভাঙ্গা হচ্ছে সিদুলি স্টেডিয়াম মাঠ। কেটে ফেলা হচ্ছে কয়েক হাজার গাছ। ভূগর্ভস্থ খনিতে ক্রমাগত ব্লাস্টিং এর ফলে এলাকার বহু ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ। যার ফলে আতঙ্কিত বাসিন্দারা। আতঙ্কিত বাসিন্দারা পূনর্বাসনের দাবিতে সরব হয়।

“সিঁদুলি গ্রাম বাঁচাও কমিটি”র ব্যানারে গত ২৯ ডিসেম্বর কমিটির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দেখায় সিঁদুলি কোলিয়ারি এজেন্ট অফিসে। ১৪ দফা দাবি সহ স্মারকলিপি জমা দেয় ওই কমিটি। বিক্ষোভের জেরে খনি সম্প্রসারণের প্রাথমিক কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত গত ১৪ অক্টোবর ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় বসে ইসিএল। তাতে ইসিএল আধিকারিকরা ছাড়াও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসন ও আন্দোলনকারীরা ছিলেন। তাতে গ্রামবাসীদের দাবী মেনে ক্ষতিপুরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয় ইসিএল। তারপরই আন্দোলন তুলে নেয় সিঁদুলি বাঁচাও কমিটি’। এবং খনি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু, গত সোমবার থেকে আবার পুনর্বাসন, বিকল্প খেলার মাঠ ও স্থানীয়দের কাজে অগ্রাধিকার সহ একগুচ্ছ দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে কাজ বন্ধ করে দেয় তৃণমূল। রীতিমতো তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে মাইক লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষে তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা যুব সহ সভাপতি এমডি ওয়াসিম জানান,” সিঁদুলি এলাকার সাধারণ মানুষজনের দাবি নিয়েই আমাদের আন্দোলন। এলাকার ৯ টি গ্রাম সাংসদের মানুষদের পুনর্বাসন, বিকল্প খেলার মাঠ ও স্থানীয়দের কাজে অগ্রাধিকারের দাবি জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। “সিঁদুলি গ্রাম বাঁচাও” কমিটির যে চুক্তি তার অস্তিত্ব মানি না। গ্রামবাসীদের অন্ধকারে রেখে সেই চুক্তি হয়েছে। তাই গ্রামবাসীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে দাবী পুরন করতে হবে।” এহেন ঘটনায় শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসায় রীতি মত চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে শাসকদলের ব্লক ও জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কালোবরন মন্ডল জানান,” আন্দোলনকারীরা দলের কেউ নন। এধরনের বিক্ষোভে দলের কোন অনুমতি নেই। বিষয়টি প্রশাসন দেখছে। এবং দলের পতাকা নিয়ে আন্দোলনের বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।”

এদিকে খনি সম্প্রসারণের কাজ বন্ধ হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ে ইসিএল। সিঁদুলি কোলিয়ারির এজেন্ট রাজেন্দ্র কিশোর প্রসাদ সিং জানান,” জাতীয় স্বার্থে কয়লা উত্তোলনের জন্য খনি প্রয়োজন। ২০১৮ সালে প্রজেক্টের অনুমোদন হয়েছে। নতুন ওই প্রজেক্টে দৈনিক দেড় হাজার থেকে দু হাজার টন কয়লা উৎপাদিত হবে। মুল প্রজেক্টের সম্প্রসারনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এখন ইনক্লাইন্ট প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে।
সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপুরণ পাবে৷ ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় তার লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও আবারও একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে একইদাবীতে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তার জেরে দৈনিক ২৪ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” যদিও
এ বিষয়ে খান্দরা পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামলেন্দু অধিকারী জানান,” খনির সম্প্রসারণে আমাদের আপত্তি নেই। গ্রামবাসীদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবী মতো সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপুরণ ও পুনরবাসনের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারপর আন্দোলন তুলে নিয়েছে সিঁদুলি বাঁচাও কমিটি। তারপর কে বা কারা নতুন করে আন্দোলন করছে, বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।” তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় জানান,” বন্ধের রাজনীতি করে না তৃণমূল। দলের নাম নিয়ে কে বা কারা এধরনের আন্দোলন করছে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *