BRAKING NEWS

ওরাল ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা এবং তামাক থেকে নেশামুক্তি

ওরাল ক্যানসার হল ভারতে সর্বাধিক হওয়া ক্যানসারগুলির মধ্যে একটি। এর প্রধান কারণগুলি হল তামাক খাওয়া, দাঁতের পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, দাঁত ধারালো হওয়া ইত্যাদি। উভয় লিঙ্গেরই এই রোগ হয়, তবে পুরুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। এই রোগের ফলে জিব, ঠোঁট, ও মুখের অভ্যন্তর, চোয়ালের হাড়, দাঁত ও গলার লসিকা গ্রন্থিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই অসুস্থ থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাময় লাভ করা সম্ভব এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ে ধরা পড়লে 90% এর বেশী সাফল্য পাওয়া যায়।

ক্যানসারের সূত্রপাত বোঝা যায় সাদা ছোপ, যন্ত্রণাহীন যা যা সহজে সারতে চায় না, মাড়ি থেকে রক্তপাত ও ঘাযুক্ত দাঁত পড়ে যাওয়া থেকে। গলার ব্যাথা, কর্কশতা বা গলার স্বর পরিবর্তিত হওয়া, গলা ফোলার মত লক্ষণ যা সাধারণ চিকিৎসায় সাড়া দেয় না, সেগুলিও ক্যানসার নির্দেশ করতে পারে।

চিকিৎসা চলা সত্ত্বেও যদি এই উপসর্গগুলি 3 সপ্তাহের বেশী সময় ধরে বজায় থাকে তাহলে একজন অঙ্কোলজিস্ট সার্জন বা পারিবারিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন যিনি যথাযথ নির্দেশ দিতে পারবেন। ক্যানসারের সম্ভাবনা বাদ দিতে বায়োপ্সি করতে বলা হয়। রোগ ধরার ক্ষেত্রে এটি হল প্রথম পদক্ষেপ যা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া করে সম্পন্ন করা যায়। ক্যানসার ধরা পড়লেও, জীবন শেষ হয়ে যাবে না। আধুনিক অঙ্কোলজিকাল সার্জারি অসুখের যেকোন পর্যায়ে থাকা রোগীর কাছেই আশির্বাদস্বরূপ। ডঃ সচিন মার্দা, সোমাজিগুড়া, হায়দ্রাবাদের যশোদা হসপিটালের একজন সিনিয়র ক্যানসার স্পেশালিষ্ট ও রোবটিক সার্জন বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেন “আধুনিক ও উন্নত সার্জারি প্রক্রিয়া শুধুমাত্র রোগের বিরুদ্ধেই লড়াই করে না, পাশাপাশি অঙ্গের গঠন ও কার্যকারিতাও সংরক্ষণ করে। আধুনিক প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাক্টিভ মাইক্রো ভাস্কুলার সার্জারির সাথে কথা বলা ও খাবার গিলতে পারার মত সাধারণ কাজ, ঘাড় ও চোয়ালের নড়াচড়া যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক থাকে। 60 থেকে 70% রোগীই ডাক্তারের কাছে আসেন যখন ক্যানসার তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যখন টিউমার হাড় পর্যন্ত প্রবেশ করে বা গলার গ্রন্থিগুলিতে ছড়িয়ে যায়। অত্যাধুনিক সার্জারি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা সম্ভাব্য সেরা ফল পেতে সক্ষম হয়েছি যার দ্বারা আমাদের রোগীদের সর্বোচ্চ মানের জীবন ফিরে পাওয়া নিশ্চিত করা হয়। “

নেগেটিভ মার্জিন সহ টিউমারের পর্যাপ্ত সার্জারিগত অপসারণ এবং গলার গ্রন্থির ব্যবচ্ছেদ হল সমস্ত ওরাল ক্যানসারের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা ব্যবস্থা, জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে এরপর রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পরে অনেক সময়ই রোগী মুখের বিকৃতির সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করে থাকেন।

ডঃ সচিন জানাচ্ছেন, “রোগীর হাত বা পায়ের হাড়, পেশী ও ত্বক থেকে কৃত্রিম চিবুক, চোয়ালের হাড়, জিব পুনর্গঠন করা সম্ভব। সার্জারির পরে অস্টিও-ইন্টিগ্রেটেড ইমপ্ল্যান্ট সহ সম্পূর্ণ দাঁতের পাটি বসানো হয়, ফলে দেখতে মানানসই হয়, আত্মবিশ্বাস বজায় থাকে, পাশাপাশি কার্যকারিতাও যথাযথভাবে বজায় থাকে।

অঙ্কোলজির সাম্প্রতিক উন্নতি যদিও ক্যানসার থেকে নিরাময় পাওয়া ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে, তবে সম্পূর্ণ সাফল্যের জন্য দ্রুত শনাক্তকরণ হওয়া অত্যন্ত জরুরী। ডঃ সচিন মার্দা যে বিষয়গুলির উপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন সেগুলি হল- দাঁত ব্রাশ করার সময় প্রতিদিন নিজের মুখগহ্বর ও গলা দেখা, বিপদের লক্ষণ দেখলে অবহেলা না করা, নিয়মিত চেক-আপ করানো এবং সবথেকে জরুরী হল তামাক ও ধূমপান থেকে দূরে থাকা। আপনি যদি ধূমপান না করেন তাহলে ভবিষ্যতেও তা করতে যাবেন না আর যদি ধূমপান করেন, তবে এখনই তা বন্ধ করুন। অর্থ আর জীবন উভয়ই বাঁচানো যাবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *