BRAKING NEWS

নিশানায় বাসস্থান ও মন্দির, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন অব্যাহত

ঢাকা, ১১ আগস্ট (হি.স.): বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতি আক্রমণ, নির্যাতন থামছেই না। বরং অত্যাচার ও নিপীড়ন ক্রমশই বাড়ছে, নিশানায় হিন্দুদের মন্দির, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে দেব-দেবীর মূর্তিও। আগেও বহুবার বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হিন্দুরা। অতি সম্প্রতি ঘটনা গত ৭ আগস্টের। বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালি গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালায় ‘স্বঘোষিত’ জেহাদি মুসলিম সম্প্রদায়। শুধু বাসস্থানই নয়, হামলা চালানো হয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরেও। উপর্যুপরি এই হামলার ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত হিন্দুরা। বাংলাদেশের হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে-র মতে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের উপরে নির্যাতনের কোনও বিচার হয়নি। এমন চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে যাবে।

গত ৭ আগস্টের ঘটনা। ওই দিন সন্ধ্যায় খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালি গ্রামে আক্রান্ত হন হিন্দুরা। অভিযোগ, হিন্দুদের বাসস্থান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা চালায় স্থানীয় জেহাদি মুসলিম সম্প্রদায়। ঘটনার সূত্রপাত ৬ আগস্ট। ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় এক ব্যক্তির মরদেহ নিয়ে শ্মশানে যাচ্ছিলেন শিয়ালি গ্রামের বাসিন্দারা। হিন্দু রীতি অনুযায়ী হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে তাঁরা শ্মশানের দিকে যাচ্ছিলেন। শিয়ালি গ্রামের মসজিদের কাছে তাঁরা পৌঁছলে ইমাম মসজিদ থেকে বেরিয়ে হরিনাম সংকীর্তন থামাতে বলেন। ইমামের কথা মতো হিন্দুরা হরিনাম সংকীর্তন বন্ধ করে দেন। এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকই ছিল। অভিযোগ, ইমামের ইন্ধনেই পরবর্তী দিন, ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রায় দুই শতাধিক উগ্র জেহাদি মুসলিমরা শিয়ালি গ্রামে অবস্থিত চারটি মন্দিরে ভাঙচুর করে, ছ’টি দোকান ও বেশ কিছু বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। দোকান থেকে মূল্যবান সামগ্রী, বাড়ি থেকে সোনা ও নগদ টাকা লুট করা হয়। মহিলাদের সঙ্গেও অভব্য আচরণ করা হয়। রূপসা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে খোলসা করে কিছুই জানায়নি পুলিশ। তাই পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা সর্দার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি।” রূপসা উপজেলার নির্বাহী অফিসার বলেছেন, ওই ঝামেলার সমাধান সেই দিনই (৬ আগস্ট) হয়ে গিয়েছিল ও ৭ আগস্টের হামলার সঙ্গে ৬ আগস্টের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ যাই বলুক না-কেন, এই প্রথম নয় এর আগেও বহুবার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিপীড়িত হয়েছেন হিন্দুরা।

বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতি অত্যাচারের ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে। তাঁর কথায়, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের উপরে নির্যাতনের কোনও বিচার হয়নি। তিনি বলেছেন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকলের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানেও আমরা নিজ দেশে পরবাসী। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশে ২২ শতাংশ হিন্দু ছিল, এখন সেই সংখ্যা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূন্য হবে। তিনি আরও বলেছেন, প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোনও না কোনও গ্রামে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কোনও ঘটনার বিচার হয়নি এখনও। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রায় এককোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন যার মধ্যে প্রায় ৯৬ লক্ষ ছিলেন হিন্দু। আর এতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল বলেই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সমর্থন করেছিরেন। প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ, ওই ৩০ লক্ষের মধ্যে ২৬ লক্ষই ছিলেন হিন্দু।

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকে দুষে তিনি বলেছেন, হিন্দুদের উপর ৯০ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রচার করে না। খুলনার রূপসায় হিন্দুদের উপরে এত বড় হামলার ঘটনা ঘটল, অথচ দু-একটি সংবাদ মাধ্যম তা প্রকাশ্যে এনেছে। বাধ্য হয়েই নিজেদের বাসস্থান স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে, অথবা ফেলে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন হিন্দুরা। পলাশবাবুর মতে, শুধুমাত্র হিন্দুরাই নন, বাংলাদেশে নিপীড়ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজনও। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একদা বৌদ্ধ সম্প্রদায় ছিল, তাঁরা মায়ানমারে চলে গিয়েছেন। আবার রাঙ্গামাটী-সহ বাংলাদেশের অন্যত্র যে সমস্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষজন আছেন তাঁরাও ভারত অথবা মায়ানমারে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *