BRAKING NEWS

মিজো পুলিশের লাগাতার গুলি বর্ষণ, হত সাত অসম পুলিশের জওয়ান, গুরুতর জখম পুলিশ সুপার

ধলাই (অসম), ২৬ জুলাই (হি.স.) : মিজো পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের গুলি হামলায় গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন কাচাড়ের পুলিশ সুপার বৈভব চন্দ্রকান্ত নিম্বালকর আইপিএস। তাঁকে সংকটজনক অবস্থায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অসম এবং প্রতিবেশী মিজোরাম, দুই রাজ্য পুলিশ এবং মিজো দুষ্কৃতীদের মুখোমুখি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কাছাড়ের আন্তঃরাজ্য সীমান্ত এলাকা। এক সূত্রের খবর, পুলিশ সুপারের ওপর হামলার খবর পেয়ে গুয়াহাটি থেকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছেন মন্ত্ৰী পীযূষ হাজরিকা এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য।

মিজোদের লাগাতার এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে ইতিমধ্যে অসম পুলিশের সাত জওয়ান শহিদ হয়েছেন। পাশাপাশি অসম পুলিশের জওয়ান এবং অসমের স্থানীয় বাসিন্দা সহ কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। এই খবর লেখা পর্যন্ত এখনও মিজোরা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করছে এবং গুলিবিদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দা এবং অসম পুলিশের আহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছে। ঘটনা কাছাড়ের মিজোরাম সীমান্তের লায়লাপুল-খুলিছড়ায় আজ সোমবার বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ থেকে শুরু হয়েছে।

এদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর অফিশিয়াল টুইটে লিখেছেন, কাছাড়ের অসম-মিজোরাম সীমান্তের লায়লাপুরে যুদ্ধসদৃশ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলিতে প্ৰাণ হারিয়েছেন অসমের ছয় বীর জওয়ান। তিনি লিখেছেন, অসমের ভূমি রক্ষা করতে শহিদ বীর জওয়ান এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি।

অসমের জমি থেকে মিজো জবরদখলকারীদের তাড়াতে ব্যাপক প্রয়াস করেছিল অসম পুলিশ। কিন্তু আজ দুপুরে হঠাৎ অসম পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রথমে পাথরবৃষ্টি, পরে ধারালো অস্ত্রসমেত আক্রমণ করছে মিজোরামের দুর্বৃত্তরা। অসম পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া শুরু করে মিজোরামের পুলিশ বাহিনী, ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সহ মিজো দুর্বৃত্তরা। প্রত্যুত্তরে অসম পুলিশও গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়। উভয় পক্ষে চলে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া ও গোলাগুলি। এরা এমন-কি কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি এবং পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে।

উল্লেখ্য, গত বছর-দেড়েক থেকে অবৈধভাবে মিজোরামের দুর্বৃত্তরা অসমের কাছাড় সীমান্তের প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার জমি আগ্রাসন করেছে। কাছাড় জেলার বাংলা মিডিয়ামের দুটি এলপি স্কুলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে মিজো দুর্বৃত্তরা। কিছুদিন আগে ফের পর পর তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে মিজোরামের উশৃঙ্খল বাহিনী। এছাড়া হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জের সীমান্তে একই কায়দায় অসমের জমি জবরদখল করে আসছে তারা। আন্তঃরাজ্য সীমান্তের আতঙ্কগ্রস্ত জনগণ ভয়ে নিজের বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু মিজোরামের বেআইনি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আক্ষরিক অর্থে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি অসম সরকার। বস্তুত অসম পুলিশ তথা স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই তিলে তিলে অসমের জমিতে আগ্রাসন চালিয়েছে মিজোরাম।

গত প্রায় দেড় বছর থেকে লাগাতার জমি জবরদখল করে আসছে মিজোরাম। কিন্তু কার্যত অসম সরকারের পক্ষে সে রকম কোনও প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি। অবশেষে অসমের সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার নীরবতার অবসান ঘটিয়ে অসমের জমি থেকে মিজো দুর্বৃত্তদের তাড়াতে তৎপর হয়েছে অসম পুলিশ। ফলে অসমের জনগণের মধ্যে সন্তুষ্টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিজের জমি উদ্ধারে প্রয়োজনে অসম পুলিশের সঙ্গে প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত সীমান্ত-ঘেঁষা অসংখ্য সাধারণ মানুষ। আজ মিজো আক্রমণে কাছাড়ের জেলাশাসকের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়ন করা হচ্ছে। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি থমথমে। যে কোনও সময় পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই খবর লেখা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। গোলাগুলির জেরে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার প্রবল আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না তথ্যাভিজ্ঞ মহল। তবে এ মুহূর্তে অসম পুলিশ কিছুটা পিছনে সরে এসেছে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *