BRAKING NEWS

এনআরসি : খুশিতে মাতলেন বিশ্বভারতীর অসমীয়া পড়ুয়া ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা

শান্তিনিকেতন, ১ আগস্ট (হি.স.) : অসমে প্রকাশিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র পুর্নাঙ্গ খসড়া নিয়ে দেশ জোড়া বিতর্কের মাঝে উলট পুরান পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে। অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর বুধবার খুশিতে মাতলেন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীতে অসমীয়া পড়ুয়া ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা। তাদের মতে দীর্ঘ দিনের একটি অন্দোলন সফলতা লাভ করেছে। প্রকৃত অসমবাসী এবার বেশি সুযোগ সুবিধা পাবেন বলে মনে করছেন তারা।একই সঙ্গে বাঙালি দের তাডিযে দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মত তাদের।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালের পর ভারতবর্ষে নাগরিক পঞ্জি হয়নি। অসমে অনুপ্রবেশের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এই নিয়ে বহু আন্দোলন চলছিল অসম রাজ্যে। সেই মত ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর ভারত সরকার, অসম সরকার ও অসম ছাত্র সংস্থা একটি বৈঠক করে রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জির বিষয়টি ঠিক করে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে প্রবেশকারীদের অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ধরা হবে।

দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে গত সোমবার ৩০ জুলাই অসমে প্রকাশিত হয় রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)।৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ নাম তালিকা ভূক্ত করার আবেদন করলেও ওই তালিকা থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ে। এই নিয়ে বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতি সরগরম।

তবে অসমে রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হতেই উচ্ছ্বাসিত বিশ্বভারতীর অসমীয়া পড়ুয়া থেকে শুরু করে অধ্যাপক অধ্যাপিকারা। তাদের মতে, এটি একটি বড় পদক্ষেপ। তাদের মতে বর্তমানে অসম সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। কারন স্বাধীনতা অনেক আগে থেকেই অসমে বহু বাঙালি, মাডোযারী, সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে অযথা অপপ্রচার করা হচ্ছে। অসমীয়া দের সঙ্গে তাদের ও সে রাজ্যে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তবে দীর্ঘ ৩ দশক ধরে যে এক নাগারে আসাম জুড়ে অনুপ্রবেশ ঘটেছে তাতে অসমীয়া রা নিজে রাজ্যে ভূমিহীন হবার আশঙ্কা । এমন কি কাজি ডাঙা অভয়ারণ্য জায়গায় রাতারাতি দখল করে অনুপ্রবেশকারী গ্রাম তৈরি করে ফেলছে সরকারি জায়গা দখল করে বসে পরছে।

বিশ্বভারতীর অসমীয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সঙ্গীতা সাইকিয়া বলেন, \”বিদেশী অনুপ্রবেশকারী দের অনুপ্রবেশ সমস্যায় আমরা জর্জরিত। উচ্চন্যালযের নির্দেশ এ এই কাজ হচ্ছে। যা দীর্ঘ দিনের একটা প্রচেষ্টা ভালো রূপ পেল৷ আমরা এতে খুবই খুশি। অনুপ্রবেশকারীদের জন্য অসমের সংস্কৃতি, অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এই বিষয়ে অসমে আন্দোলন চলছিল।তবে এনআরসি নামে অসম থেকে বাঙালি তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে যে প্রচার চলছে তা ভিত্তিহীন। অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। স্বাধীনতা বহু আগে থেকেই অসমে বহু বাঙালি বাস তারা আমাদের রাজ্যের বাসিন্দা। \”

প্রায় একই কথা বলেন বিশ্বভারতীর আরেক অসমীয়া অধ্যাপক শান্তিপ্রসাস সিংহ। তিনি বলেন, \” আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। তা পূরণ হতে চলেছে। সারা অসমবাসী একে স্বাগত জানাবে নিশ্চয়ই। \”

অসমের বাসিন্দা বিশ্বভারতীর গবেষক ছাত্র আজিজুর রহমান সরকার নিজে এনআরসি কাজ চলাকালীন হাত লাগিয়ে সেই কাজ করেছে। তিনি নিজে সরকার নিযুক্ত হয়ে ফিল্ড ভেরিফিকেশন কাজ করেছেন। তিনি বলেন, \” আমার মনে হয এনআরসি হলে বাংলাদেশী বলে যে রাজনীতি হচ্ছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। এটা হলে রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। এটা হওয়া জরুরি ছিল। একটা সমস্যা এতদিন ধরে চলছে। তার সমাধান হবে। বাংলা ভাষী হলেই হলে বাংলাদেশী বলে যে অপবাদ তা আর থাকবে না। আর যতটা এনআরসি নিয়ে গেল গেল রব তোলা হচ্ছে ততটা নয় কিন্ত। \”

বিশ্বভারতীর পড়ুয়া অসমের বাসিন্দা বাঙালি ছাত্রী সাগরিকা চক্রবর্তী বলেন, \”আমরা এই নাগরিকপঞ্জির জন্য খুব খুশি। আমরা অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পাব৷ আগে আমরা বঞ্চিত হতাম অনুপ্রবেশকারীদের জন্য। তবে অসমে যেন কোন গন্ডোগোল না হয়। আমার পরিবার সেখানে আছে।বাঙালিদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এই প্রচার ঠিক নয় \”

অসমের বাসিন্দা বিশ্বভারতী অসমীয়া ছাত্রী চিন্ময়ী দাস এনআরসি-কে স্বাগত। এনআরসি জন্য জানতে পারলাম আমার রাজ্যে কত জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া সব রাজ্যে এনআরসি হওয়া উচিত পশ্চিমবঙ্গ, বিহারে, ত্রিপুরা, মেঘালয়। সব জায়গায় এটা হলে জানা যাবে কত জন ভারতীয় এবং কত জন ফরেনার রয়েছে এই সব রাজ্যে। এর সঙ্গে আমাদের দেশের নিরাপত্তা বিষয ও জড়িয়ে আছে এক কথায় অসমে রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)র জন্য খুশির হাওয়া কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর অসমবাসী পড়ুয়া, অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *