BRAKING NEWS

কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ

৷৷ সায়ন্তক চৌধুরী৷৷

ঃ সাতশ টাকা হাজিরা দেওন লাগব৷

কাঠমিস্ত্রির কথা শুনে গৃহকর্তার হেঁচকি উঠার দশা৷ ঢোক গিলে বললেন কস্ কিতা? পাঁচশ থেইক্যা এক লাফে সাতশ?

ঃ আগে হুনেন কর্তা৷ দেড় হাজিরা হইলে পঞ্চাশ টাকা কম রাখুম৷ এক হাজার টাকা দিবেন৷

গৃহকর্তা জানতে চাইলেন- হঠাৎ কইর্যা হাজিরা বাড়াইলি কেন রে?

ঃ কিতা করুম কর্তা? সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাড়তাছে৷ বেতন বাড়ার লগে লগে জিনিষ পত্রের দামও বাইড়্যা যাইবো৷

ঃ আরে বাবা! অহনও তো বেতন বাড়ে নাই৷ আগে বাড়ুক৷ তারপর তোরাও বাড়াস৷

ঃ না কর্তা! অহন থেইক্যা না বাড়াইলে অইবো না৷ আপনাদেরও তো ধাতে সইতে অইবো৷ গৃহকর্তার মুখে আর কথা নেই৷ কেননা, প্রসঙ্গটা জটিল এবং স্পর্শকাতর৷ বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে সপ্তম পে কমিশন চালুর কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ সেই হিসাবে ইতিমধ্যে সরকার পে কমিশন চালুর বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কমিটিও গঠন করেছে৷ তিনমাসের মধ্যে ভার্মা কমিটি রাজ্য সরকারের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে৷ এনিয়ে রাজ্যের সরকারী কর্মীরা ফুটন্ত খৈ এর মত ছটফট করছে৷ নতুন বেতন কত হবে এনিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ৷ এক শিক্ষিকার আশা তার নতুন বেতন হবে উনচল্লিশ হাজার টাকা৷ তাই যদি হয় তবে তাকে আর কেউ পায়৷ এভাবে সরকারী কর্মীদের বেতন বাড়বে৷ আর স্বামী-স্ত্রী যদি দুজনে সরকারী কর্মী হোন তাহলে তো সোনায় সোহাগা৷ তাইতো স্বপ্ণের জাল বোনা শুরু হয়ে গেছে সরকারী কর্মচারীদের মাঝে৷ চলছে চুলচেরা হিসাব নিকাশের পালা৷

ঠিক তার বিপরীত দিকে ব্যবসায়ী মহলেও চলছে নতুন এক হিসাব নিকাশ৷ অস্বীকার করা যাবে না সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাড়লে তার আঁচ রাজ্যের বাজারে এসে পড়ে৷ তর তর করে সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়৷ সেই সাথে জ্বালানীর দাম বাড়লে তো গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার অবস্থা হয়৷ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় জিনিসপত্রের দাম৷ রাজ্যে সরকারী কর্মচারীর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েক লাখ৷ সপ্তম পে কমিশন মানে তাদের হাতে টাকার ছড়াছড়ি৷ আর এ কয়েক লাখের বাইরে যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ বেসরকারী কর্মী, কেউ ব্যবসায়ী এবং সিংহভাগ মানুষ শ্রমজীবি৷ তারাই পড়বে বিপাকে৷ কেননা, সরকারী কর্মচারীদের পোয়াবারো হলেও তাদের কপালে পোড়ার দশা হয়েছে৷ কেননা, বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানী তাদের কর্মীদের বেতন কেন বৃদ্ধি করবে? আর করলেও বা কত করবে? আর সেই সাথে সিংহভাগ শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত হবে৷ বর্তমানেও সব জিনিসের দাম নাগালের বাইরে৷ সরকারী কর্মীদের বেতন বাড়লে রকেটের গতিতে যে জিনিসের দাম বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তাইতো দিনমজুর শ্রমিকরা এখন থেকে নিজেদের মজুরি বাড়াতে চাইছে৷ আর সাধারণ মধ্যবিত্ত যারা কায়ক্লেশে কোনও বেসরকারী ফার্মে চাকুরী করে জীবনের ঘানি টানছেন তারা যেন সেই সময়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখবেন৷ কেননা, প্রতিবারই সরকারী কর্মীদের বেতন বাড়লে তার হ্যাঁপা সামলাতে হয় সাধারণ ছা পোষা মানুষদের৷ তারা না ঘরকা না ঘাটকা৷ থলে হাতে মাছ বাজারে গিয়ে তারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে বড় মাছের দিকে৷ আর তাদের চোখের সামনে এক ঝটকায় বড় মাছটা তুলে নিয়ে যাবেন কেনে রাজ কর্মচারী৷ গরিবরা যে ছোট মাছেও তুষ্ট থাকবে তারও উপায় নেই৷ কেন না, ছোট মাছের দামও আকাশ ছোঁয়া৷ সুতরাং গরিবের পাতে ডাল ভাত, আলু সিদ্ধ৷ নিদেন পক্ষে সুটকীর চাটনি৷ মনে হচ্ছে যেন এখানে বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠছে৷ কেউ খাবে, কেউ খাবে না এমন ধরনের একটা ব্যাপার স্যাপার যেন ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে৷ এ যেন কারও পোষ মাস, আবার কারও সর্বনাশের মত অবস্থা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *