নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ মার্চ৷৷ জিরানীয়া মহকুমা এলাকায় শাসক দলের গেরুয়াবাহিনীর আক্রমনে সন্ত্রাস কবলিত বিভিন্ন বাড়ী ঘর, পার্টি অফিস গুলি পরিদর্শন করেন সিপিএম রাজ্য ও মহকুমা নেতৃবৃন্দ৷ শনিবার সকাল থেকে দুপুর অব্দি খয়েরপুর, মজলিশপুর, মান্দাই বিধানসভা কেন্দ্র এবং ১২ টাকারজলা কেন্দ্রের একাংশের বিভিন্ন এলাকা সফর করেন৷ পরে সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিপিএম রাজ্য ও মহকুমা নেতৃবৃন্দ গেরুয়া সন্ত্রাসে অগ্ণিদগ্দ বাড়ীগুলি এবং অগ্ণিদগ্দ পার্টি অফিস ও ভাঙচুর করা অফিসগুলি সরজমিলে পরিদর্শন করেন৷ প্রতিনিধি দলে ছিলেন পার্টি রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে, পশ্চিম জেলা কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধানসভার উপাধ্যক্ষ পবিত্র কর, রাজ্য কমিটির সদস্য তথা এডিসি সি’ই এম রাধাচরন দেববর্মা, সাংসদ ঝর্না দাস বৈদ্য, পার্টি জিরানীয়া মহকুমা সম্পাদক মধুসুদন দাস, পার্টি সম্পাদকন্ডলীর অন্যতম সদস্য তপন দাস, সুকুমা দেববর্মা সহ অন্যন্য নেতৃবৃন্দ৷
নেতৃবৃন্দ প্রথমে যান খয়েরপুর বণিক্য চৌমুহনী হয়ে লক্ষ্মীপুর ভিলেজ৷ সেখানে স্থানীয় নেতৃত্ব কৃষ্ণ গোপাল দেবনাথ ও নারায়ণ দেবনাথের পরিবারের ৩টি বসত ঘর সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করে দেওয়া হয়েছে৷ এরপর নেতৃবৃন্দ যান পূর্ব নোয়াবাদী ভিলেজের সঞ্জিত দেববর্মার বাড়ীতে৷ তার বাড়ির সবকয়টি বসত ঘর সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করা হয়৷ এরপর নেতৃত্ব যান জিরানীয়া জয়নগর পঞ্চায়েতে৷ সেখানে জিরানীয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা প্রতিমা বনিকের বাড়ীর সমস্ত কিছু ভাঙ্গচুর করা হয় এবং ঘরের জিনিষ পত্র আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এই বাড়ীটি এর আগেও ২ বার আক্রান্ত হয়েছে৷ এই পঞ্চায়েতেই পার্টির সদস্য তপন দেবনাথের বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে ঘর গুলি সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করা হয়েছে৷ পার্টি কর্মী বিপ্লব দেবনাথের বসত ঘরগুলি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুবৃর্ত্তরা৷ এরপর নেতৃবৃন্দ যান খুমুলুঙ এলাকায়৷ সেখানে পূর্ব বেলবাড়ী ভিলেজের পার্টি কর্মী বীরকুমার দেববর্মা (দুরন্তপাড়া) -র বসত ঘরগুলি সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করা দেওয়া হয়েছে৷ একই ভাবে রাধাপুর ভিলেজে পার্টি স্থানীয় নেতৃত্ব অধীন দেববর্মা বাড়ীতে যান৷ তাঁর বসত ঘরগুলি এবং বিকাশ দেববর্মার ঘরগুলি সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করা হয়৷ নেতৃত্ব সবগুলি বাড়ীই পরিদর্শন করেন৷
শাসক দলের গেরুয়াবাহিনী বিজেপি ও আইপিএফটি দুবৃর্ত্তরা বাড়ী ঘরে আগুন ভাঙ্গচুর করার পাশাপাশি পার্টি অফিসেও আগুন ভাঙ্গচুর হওয়া অফিসগুলি পরিদর্শন করেন৷ পার্টি অফিস গুলির মধ্যে ছিল কৃষ্ণনগর পার্টি লোক্যাল অফিস (সম্পূর্ণ ভাঙচুর করা হয়েছে), ব্রজনগর পার্টি অফিস (সম্পূর্ণ ভূস্মিভূত করা হয়), পূর্ব নোওয়াবাড়ী পার্টি অফিস, হরিনামুড়া অফিস, ব্রজবাসী পার্টি অফিস, বেলবাড়ী পার্টি অফিস সহ আরও কয়েকটি পার্টি অফিস ভাঙচুর এবং কয়েকটি আগুন দিয়ে ভস্মিভূত করা হয়েছে৷ নেতৃত্ববৃন্দ উল্লিখিত আক্রান্ত স্থানগুলি পরিদর্শন করেন৷
এলাকা পরিদর্শন শেষে দুপুরে পার্টি নেতৃবৃন্দ জিরানীয়া বাজারস্থিত পার্টি মহকুমা অফিসে যান৷ কিছু সময়ের মধ্যেই বিজেপি দলের কিছু সংখ্যক দুবৃর্ত্তরা গৌতম পালের নেতৃত্বে পার্টি অফিসের সামনে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে৷ সে সময় কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকরা তাদের সরিয়ে দেন৷ তাদের হুমকি ছিল পার্টি অফিস খোলা যাবে না৷ এখানে উল্লেখ্য যে, সেই আরেকবার পার্টি মহকুমা অফিস খোলার পর শাসক দলের কিছু সংখ্যক গেরুয়াবাহিনী অফিস খোলা যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল৷
পার্টি নেতৃত্ববৃন্দ যান রানীরবাজার কৃষ্ণটালীতে৷ সেখানে পার্টি নেতা এবং রানীরবাজার পৌর পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান চন্দন দাসের বাড়ীতে যান এবং তাকে দেখেন ও কথাবার্তা বলেন৷ তার মাথায় ব্যান্ডেড লাগানো৷ ম্যাথায় ৪টি সেলাই লেগেছে৷ উল্লেখ্য যে, গত ২২ মার্চ দুবৃর্ত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক জখম হয়েছে চন্দন দাস৷
উল্লেখিত ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে পার্টি পশ্চিম জেলা কমিটি শাসক দলের গেরুয়াবাহিনী দুবৃর্ত্তদের এহেন অমানবিক হিংস্র কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা এবং ধীক্কার জানাচ্ছে৷ তৎসঙ্গে প্রতিটি ঘটনার সাথে যুক্ত দুবৃর্ত্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছে৷ পাশাপাশি যেসব বাড়ী ঘর গুলি ভস্মিভূত ও ভাঙচুর করা হয়েছে তাদের প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেবার দাবী জানাচ্ছে৷ পার্টি জেলা কমিটি গোটা জেলা গেরুয়াবাহিনীর সন্ত্রাস বন্ধে রাজ্য সরকার, শাসক দলকে সদর্থক কার্যকরী ভূমিকা নিতে এবং আরক্ষা দপ্তরকে অপরাধীদের গ্রেপ্তার সহ সন্ত্রাস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছে৷