BRAKING NEWS

জঙ্গি দমনের পথ তৈরি করতে হবে নিজেদেরই, বললেন তথাগত রায়

কলকাতা, ৪ ফেব্রুয়ারি (হি স): “সন্ত্রাসবাদ দমনের সঠিক পথ কী হতে পারে, নিজেদের মত করে তা আমাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে।” ‘শ্যাডো অফ দি ড্রাগন অ্যান্ড রিসেন্ট ডেভলপমেন্ট’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে রবিবার কলকাতায় এ কথা বলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদে আমাদের অনেক ক্ষতি সয়েছে। অনেক প্রাণ গিয়েছে। সফ্ট ডেমোক্রাসি, হার্ড ডেমোক্রাসি— এই সব কথায় গিয়ে লাভ নেই।”
তথাগতবাবু এ দিন বলেন, “চৌ এন লাই-কে কলকাতায় শহিদ মিনারের সমাবেশে উষ্ণ সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। ধ্বনি উঠেছিল ‘হিন্দি চিনি ভাই ভাই’। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখানকার সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’। এই সব দৃষ্টিভঙ্গী সঠিক ছিলনা। নেহরুর বিদেশ-নীতির মাশুলও গুনতে হয়েছে ভারতকে। ভারতের সমর-সিদ্ধান্ত সঠিক হলে চিন অসমের তেজপুর পর্যন্ত ঢুকে আসতে পারত না। পরাজয় স্বীকার করতে হত না আমাদের। চিন কিন্তু ভারতকে উপনিবেশ বানাতে আগ্রহী নয়। চাপে রেখে, এ দেশকে কোনঠাসা অবস্থায় রাখাই চিনের লক্ষ্য।“
“চিনের সঙ্গে আমাদের সহাবস্থান করতেই হবে। সেই সঙ্গে সংঘাতও চলবে।“ এই মন্তব্য করে প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ শঙ্কর রায়চৌধুরী এ দিন সমাবেশে বলেন, “দু’দেশের সম্পর্কটা মোটেই সহজ নয়! এর মধ্যে টিঁকে থাকা কেবল নয়, ভাবতে হবে টেক্কা দেওয়ার কথা। আর সেটা করতে গেলে আমাদের নিজেদের মগজ ধোলাই নিজেদেরই করতে হবে। ভাবতে হবে আমরাই এক নম্বর!“
শঙ্করবাবু বলেন, “১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। আর, গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের যাত্রা শুরু ১৯৪৮-এ। সেদিক থেকে দু‘টি দেশ প্রায় সমবয়স্ক। আমরা গত কয়েক দশকে অনেক এগিয়েছি! কিন্তু সংস্কৃতি, রাজনীতি, দৃষ্টিভঙ্গীর ভিন্নতার জন্য চিনের অগ্রগতি বা উন্নয়ন হয়েছে আরও বেশি। সমতা আনতে গেলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে আমাদের।” প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা সিকিম পুলিশের প্রাক্তন ডিজি আর কে হান্ডা এ দিন বলেন, ”সিকিমকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে চিনের আগ্রাসন থেকে।“
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “চিন-ভারত সম্পর্ক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর নানা দিক নিয়ে এ রকম মূল্যবান লেখার সংকলনের বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে।“ কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক স্নেহাশিস সুর বলেন, “রাজনীতি, পর্যটন, ভৌগোলিক গুরুত্ব— সব কিছুর নিরিখেই কয়েক দশক ধরে বদলিয়েছে সিকিমের গুরুত্ব। কাছে থেকে এ সব দেখেছেন, অনুভব করেছেন অমলেন্দু কুন্ডু। এই বইয়ের তাই বিশেষ গুরুত্ব আছে।“ অনুষ্ঠানে ছিলেন বইটির প্রকাশক ‘পোয়েটস ফাউন্ডেশন”-এর সভাপতি জগদীন্দ্র মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক প্রতীপ কুমার চৌধুরী প্রমুখ| অনুষ্ঠানে দর্শকদের মধ্যে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, ক্যালকাটা ক্লাবের সভাপতি তমাল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বইতে আছে অভিজ্ঞ ১২ জন সাংবাদিকের লেখা ১৩টি লেখা। বইতে আছে চারটি পৃথক পরিচ্ছেদ— চিন, সিকিম, দার্জিলিং এবং অন্যান্য। প্রতিটি পরিচ্ছেদে অমলেন্দুবাবুর কিছু হার্ড নিউজ, মানে যাকে আমরা বলি ”ঘোড়ার মুখের খবর’। এবং নয়নমনোহর কিছু আলোকচিত্র। লেখাগুলির প্রথমেই আছে ইন্ডিয়ান ইনফরমেশন সার্ভিসের সনৎ মুখোপাধ্যায়ের ’এ পিপ ইনটু চায়না‘। এর পর সামরিক বিশেষজ্ঞ কে কে গাঙ্গুলির ’শ্যাডো অফ দি ড্রাগন’। তৃতীয় লেখাটিও সনৎবাবুর, শিরোনাম ’দি নিউ গ্রেট গেম ইন দি ইন্ডিয়ান ওসেন’। চতুর্থ লেখাটিতে পিটি গিয়াম্পট্সোর ’ডোকলাম মিলিটারি স্ট্যান্ডঅফ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড চায়না’।
বইয়ে অমলেন্দুবাবুর মূল্যবান লেখা অবশ্যই বড় আকর্ষণ। অন্যান্য লেখার মধ্যে আছে তাপস গঙ্গোপাধ্যায়, বিনোদ অগ্রবাল, শঙ্কর সেন, নির্মাল্য গঙ্গোপাধ্যায়, স্মরজিৎ কুমার চট্টোপাধ্যায়, বিভাস কুন্ডু, প্রদীপ কুমার চৌধুরী প্রমুখের অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *