BRAKING NEWS

সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন রাজ্যের কোষাগার থেকে দিতে বলল কেন্দ্র, অনিশ্চিয়তায় প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ ডিসেম্বর৷৷ চরম অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে সর্বশিক্ষা প্রকল্প৷ ফলে, সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের ভবিষ্যতও অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন রাজ্যের কোষাগার থেকে খরচ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে৷ তাই, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার৷ শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে চিঠিতে জানিয়েছেন, রাজ্যের আর্থিক অসংগতির কারণে সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের বেতনের বোঁঝা বহন করা সম্ভব নয়৷ তাই এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক৷
গত ১৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্য শিক্ষাদপ্তরকে এক চিঠিতে জানিয়েছে সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন রাজ্যকে বহন করতে হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকার সর্বশিক্ষার হাতে এই ব্যয়ভার বহন করবেনা৷ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বেকায়দায় পড়েছে রাজ্য সরকার৷ তাই, এই চিঠির জবাবে শিক্ষামন্ত্রী কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সর্বশিক্ষা খাতে পিএবি অনুমোদিত পুরো অর্থ শীঘ্রই বরাদ্দ করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যের অসহায়ত্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বীকার করেছেন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে রাজ্য অধিকতর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল৷ তাই সর্বশিক্ষায় নিযুক্ত শিক্ষকদের বেতন রাজ্যের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়৷ তিনি চিঠিতে আরো জানিয়েছেন, রাজ্যের সঙ্কটজনক আর্থিক পরিস্থিতির ফলে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক৷ তাঁর দাবি, সর্বশিক্ষা রাজ্য মিশনের অধিন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের বেতন আগের মতই একই হারে রাখা হোক৷ তিনি আরো অনুরোধ জানিয়েছেন, বেতনের দায়ভার বহনের বর্তমান পদ্ধতি চালু রাখা হোক৷ তবেই তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, সংখ্যালঘু এবং ওবিসি অংশের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে৷
এবিষয়ে সর্বশিক্ষার শিক্ষক বাস্তব দেববর্মা বলেন, কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে৷ কিন্তু, অবাক করার বিষয় হল, কেন্দ্রের নির্দেশ পরিবর্তনের অনুরোধ রাজ্য সরকার জানালেও সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরনের জন্য কোন আবেদন জানানো হয়নি৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের এই মনোভাব সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের সাথে সরাসরি সংঘাতের পথে নিয়ে যাবে৷ তাতে, রাজ্য সরকারের পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি তা মানবেনা সর্বশিক্ষার শিক্ষকরা৷ এদিন মহাকরণে এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, এধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্যের সাথে কোন আলোচনা করেনি৷ তিনি বলেন, শিক্ষা যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত৷ তাই যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে রাজ্যকে বাদ দিয়ে নেওয়া যায়না৷ রাজ্যের সাথে কোন আলোচনা না করেই কিভাবে এতবড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছে তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী৷
এদিন তিনি বলেন, সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়ে নয়া নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহিত একতরফা সিদ্ধান্ত৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে তা কখনোই কাম্য নয়৷ তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সর্বশিক্ষা খাতে পিএবি অনুমোদন দিয়েছিল ৩৪০ কোটি টাকা৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার মাত্র ২০০ কোটি বরাদ্দ করে বাকিটা রাজ্যের কোষাগার থেকে ব্যয় করার জন্য বলেছিল৷ তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের বেতন রাজ্যের বাজেট থেকে ব্যয়করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিতে পারেনা৷
এদিন তিনি বলেন, সারা রাজ্যে সর্বশিক্ষার অধিন ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক চুক্তিভিত্তিক কর্মরত রয়েছেন৷ তিনি স্বীকার করেন, সর্বশিক্ষা প্রকল্পের ফলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা উপকৃত হয়েছে৷ কিন্তু, কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকায় এখন জটিলতা দেখা দিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *