BRAKING NEWS

তিন তালাক বিরোধী বিল লোকসভায় পাশ, ঐকমত্য চান প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ২৮ ডিসেম্বর(হিঃস)৷৷ বহুচর্চিত তিন তালাক বিরোধী বিল বৃহস্পতিবার লোকসভায় ধবনি ভোটে পাশ হল৷ এদিন বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ৷ এই বিল অনুযায়ী কোনও মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ, তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাক দিতে পারবেন না৷ বিল পাশ হওয়ার পরেও যদি এই ঘটনা ঘটে, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে৷ এদিন লোকসভায় হাজির থাকার জন্য দলীয় সাংসদদের প্রতি হুইপ জারি করেছিল বিজেপি৷ প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, কেউ তিন তালাক আইন ভাঙলে তার তিন বছরের কারাদন্ড হতে পারে৷ প্রসঙ্গত, গত আগস্টে ৩-২ ভোটের ব্যবধানে তাৎক্ষণিক তালাকের প্রথাকে অসাংবিধানিক, অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ কিন্তু তারপরও তিন তালাকের কিছু ঘটনা সামনে আসায় আইন করে প্রথাটি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি নারী অধিকার সংগঠন এবং তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের করা মামলা সামনে রেখে তিন তালাক প্রথা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়৷ এর আগে, মুসলিম নারী বিবাহ অধিকার রক্ষা বিলে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা৷ তিন তালাক বিরোধী বিল হিসেবেই পরিচিত এই বিল৷ মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটাস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৭ র খসড়ায় বলা হয়েছে, তিন তালাক আদালতের বিচার্য এবং জামিন অযোগ্য অপরাধ৷ গত ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অবৈধ জানিয়ে কেন্দ্রকে এই নিয়ে আইন তৈরির নির্দেশ দেয়৷ এরপরেই বিলের খসড়া তৈরি করে ১ ডিসেম্বর মতামতের জন্য রাজ্যগুলোর কাছে তা পাঠানো হয়৷ গত ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তার উত্তর দিতে বলা হয়েছিল৷ অসম, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড খসড়া বিল সমর্থন করে চিঠি দিয়েছে৷ এই বিলের খসড়া তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি৷ কমিটিতে ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং আইন প্রতিমন্ত্রী পি পি চৌধুরী৷ খসড়া বিলে বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার মুসলিম মহিলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন৷ অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা তাঁর হেফাজতেই থাকবে৷ সন্তান এবং তাঁর খোরপোষ চাইতে পারবেন তিনি৷ বিলে মৌখিক, লিখিত বা ইমেল, এসএমএস ও হোয়াট্যাপের মাধ্যমে ঘোষিত একতরফা তিন তালাক প্রথাকে বেআইনি বলা হয়েছে৷ যা বাতিল করতে হবে৷ তবে বুধবার এই বিল নিয়ে সরব হয় অল ইন্ডিয়া মুসলিম উইমেন পার্সোনাল ল বোর্ড বা এআইএমডব্লিউপিএলবি৷ সংগঠনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিল কোরান-বিরোধী হলে, তারা তা মেনে নেবে না৷ বোর্ডের চেয়ারপার্সন শয়িস্তা অম্বর জানান, নিকান(বিবাহ) হল একটি চুক্তি৷ কেউ তা ভাঙলে শাস্তি পেতে হবে৷ তবে (প্রস্তাবিত বিল) যদি কোরান ও সংবিধান পরিপন্থী হয়, তাহলে কোনও মুসলিম মহিলা তা মেনে নেবেন না৷
বৃহস্পতিবার লোকসভায় তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল পেশ করে এদিনটিকে ঐতিহাসিক দিন বলে আখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কার প্রসাদ৷ তাৎক্ষণিক তিন তালাক বেআইনি, ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিতে তৈরি বিল আইনে পরিণত করতে এদিন সংসদে বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী৷ আরজেডি, এআইএমআইএম, বিজেডি, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ সহ বেশ কয়েকটি দলের সদস্যের বিরোধিতার মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটি পেশ করে তিনি বলেন, আজ এক ঐতিহাসিক দিন৷ ইতিহাস গড়লাম আমরা৷ মুসলিম মহিলা (বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার রক্ষা) বিল নামে পেশ করা বিলটি শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক তিন তালাক বা তালাক-ই-বিদ্দত প্রথার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে৷ বিলে তালাক পাওয়া মহিলাকে নিজের ও নাবালক সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত খোরপোশ বা ভাতা চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাবি জানানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ নাবালক সন্তানদের হেফাজতও চাইছে পারবেন তিনি৷ এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ম্যাজিস্ট্রেট৷ প্রস্তাবিত বিলটি আইন হলে জম্মু ও কাশ্মীর বাদে দেশের বাকি রাজ্যে কার্যকর হবে৷ বিলে তাৎক্ষনিক তিন তালাক জামিন অযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে, যার সাজা হবে তিন বছর কারাবাস, জরিমানাও৷ লিখিত, মৌখিক ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ ইমেল, এসএমএস, হোয়াটস্যাপে, যে কোনও ভাবেই দেওয়া তাৎক্ষনিক তিন তালাক অন্যায়, বাতিল ধরা হবে বিলে৷ সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বেআইনি ঘোষিত হলেও তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেওয়া বন্ধ না হওয়ার আইন করে এই কুপ্রথা অবসানের উদ্যোগ, এ কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইনের সঙ্গে কোনও সম্প্রদায় বা ধর্মের ব্যাপার নেই, মহিলাদের সম্মান, ন্যয়বিচার দেওয়াই এর উদ্দেশ্য৷ প্রস্তাবিত আইন সংবিধানে সুরক্ষিত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে, বিরোধী শিবিরের একাংশের এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তিন তালাকের শিকার মহিলাদের মৌলিক অধিকার আছে কি নেই, সেটাই ঠিক করবে সংসদ৷ এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাৎক্ষনিক তিন তালাকে ফৌজদারি অপরাধের স্বীকৃতি দিতে আনা বিলটি পাশ করার জন্য ঐকমত্য গড়ে তোলার কথা বলেছেন৷ সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বিজেপির সংসদীয় দলের সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান৷ বিলে মুসলিম মহিলাদের লিঙ্গ সাম্য, সম্মান, সুরক্ষা দিতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি আরও বলেন, আজ এক ঐতিহাসিক দিন৷ মোদী সরকার এমন এক বিল আনছে যার মাধ্যমে এক বিরাট সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যসভায় বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেখানে বিলের ওপর ঐকমত্য সগঠনের ব্যাপারে প্রশ্ণের উত্তরে তিনি বলেন, লোকসভায় বিলটি পাশ হয়েছে এখন সরকার সহমত তৈরির উদ্যোগ নেবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *