BRAKING NEWS

কলকাতায় সারারাত বাস চালাতে চায় রাজ্য

কলকাতা,১৫ ডিসেম্বর,( হি.স.): এবার থেকে চব্বিশ ঘণ্টা চলতে থাকবে শহর। নিউইয়র্ক, লন্ডন, ওয়াশিংটনের মতোই এবার সারা রাত বাস চলবে তিলোত্তমা কলকাতায় । রাজ্য সরকারের তৎপরতায় সারা রাত বাস পরিষেবা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে ।
শুক্রবার পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, রাতে বাস পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । ইতিমধ্যেই অনেকটা কাজ এগিয়ে গিয়েছে । আগামী দিনে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে রাতে বাস পরিষেবাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । গত পুজোর সময়, কলকাতায় আই পি এল চলাকালীন রাতে বাস পরিষেবা চালু রাখে রাজ্য পরিবহণ দফতর ।
শুধু কোনও উৎসব, অনুষ্ঠান নয়, এই বাস পরিষেবা সারা বছর যাতে চালু রাখা যায়, তারই প্রচেষ্টা শুরু করতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর । তবে, এই মুহূর্তে এয়ারপোর্ট, হাওড়া, ধর্মতলা সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি থেকে সরকারি বাস পরিষেবা দেওয়া হবে । রাতের ট্রেনে বা বিমানে যারা কলকাতায় আসছেন তাঁদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয় তার জন্যই সারা রাত ধরে বাস পরিষেবা দেওয়ার ভাবনা । আসন্ন যুব বিশ্বকাপের পরেই রাতে বাস পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
রাজ্যের পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এজন্য কলকাতার উপকণ্ঠে নতুন ১৫টি বাস-রুট চালু হচ্ছে, যাতে দু’শো বাস চালানো সম্ভব । তা শুনে বাস-মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, আয়ে টান পড়ায় যেখানে পুরনো রুটের বাসই চালানো যাচ্ছে না, সেখানে নতুন বাস তাঁরা নেবেন কী করে ? ‘বরং সরকার ভাড়া না-বাড়ালে বিভিন্ন রুটে আরও অনেক বাস বসে যাবে। নতুন বাস কেনার ঝুঁকি কেউ নেবে না’। মন্তব্য করেছেন একটি মালিক সংগঠনের এক নেতা।
পরিবহণ-সচিব অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, বাস চালানোর লোকের অভাব হবে না । তাঁর কথায়, ‘বাস চালাতে চেয়ে প্রচুর আবেদন আমাদের কাছে জমা পড়ছে । আমরা ওঁদের সুযোগ ও পরিসর দিতে চাই’। আলাপনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘শহরতলির সঙ্গে খাস কলকাতার যোগাযোগ বাড়াতে নতুন কিছু রুট তৈরি প্রয়োজন বলেই এই পদক্ষেপ । কলকাতার বর্তমান রুটেরও অনেকগুলোয় চাহিদা রয়েছে । অথচ, সেখানে বহু দিন বাসের সংখ্যা বাড়েনি । এমন কিছু রুটে বাস বাড়ানো হবে’। তাঁর দাবি, ‘বিভিন্ন চালু রুটেও নতুন শ-খানেক বাস চালানোর সুযোগ রয়েছে’ । যদিও মালিকদের তরফে সচিবের দাবির বাস্তবতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নতুন বাস চালানোর সামর্থ কোনও মালিকের নেই । নতুন বাস নেওয়া দূরে থাক, ভাড়া না-বাড়লে চালু রুটেই বাস চালাতে পারব না’। আর এক সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের পক্ষে দীপক সরকারের আক্ষেপ, ‘বাস্তব অবস্থা স্বীকার না-করেই সরকার রুট বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে’। তাঁর মতে, ‘অবাস্তব’ পরিকল্পনাটি জবরদস্তি কার্যকর করলে পরিবহণ-শিল্প আরও রুগ্ণ হয়ে পড়বে ।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের পরে বাসভাড়া বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা । পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা থেকেই রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়াবে বলে তাঁর আশা । মালিকদের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছেছে । তবে মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, আগে ভাড়া বাড়ুক, তার পরে নতুন বাস কেনার কথা তাঁরা ভাববেন । পরিবহণ-সচিব জানিয়েছেন, বাসের অভাব দূর করতে মিনি, ট্যাক্সি ও ছোট বাস আরও বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে ।
মালিকদের তরফে কিন্তু ইতিবাচক সাড়া নেই । উল্টে তাঁদের সিংহভাগই পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কোনও সহযোগিতার রাস্তায় যেতে নারাজ । তাদের মতে, ‘সরকার বাসভাড়া বাড়িয়ে দিলে বসে থাকা বাস ফের রাস্তায় নামত । এতে বাসের অভাব খানিকটা হলেও মিটত । নতুন বাস রাস্তায় নামাতে উৎসাহ পেতেন মালিকেরা । কিন্তু এখন কেউই নতুন বাসের পারমিট নিতে আসবেন না’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *