BRAKING NEWS

সি বি আইকে জবানবন্দি দিতে চান রত্না, বিপাকে তৃণমূল

কলকাতা, ২৭ নভেম্বর ( হি.স.): নারদ কাণ্ডে তাঁকে টি ভি-র পর্দাতে টাকা নিতে দেখেনি রাজ্যের মানুষ । কিন্তু, নারদ তদন্তের প্রাথমিক পর্বের কাজ ঝুলে আছে কলকাতার মহা-নাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের জিজ্ঞাসাবাদের উপর ।
সিবিআই সূত্রে খবর, শোভনবাবুকে জেরা করার সময় তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সমস্ত আর্থিক লেনদেনের সামলান তাঁর স্ত্রী রত্নাদেবী । আর তাই তাঁকে জেরা না করলে এই তদন্ত শেষ করা যাবেনা । এর আগে বেশ কয়েকবার তাঁকে সি বি আই ও ই ডি-র তরফে নোটিশ পাঠানো হলেও গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য রত্নাদেবী বিদেশে ছিলেন বলে তিনি চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছিলেন। ফলে, হাজিরা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি । এখন তিনি সুস্থ আছেন তাই তিনি আর বিলম্ব না করে জেরার মুখোমুখি হতে চান বলে খবর ।
প্রসঙ্গত বলা যায়, কিছুদিন আগে শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁর স্ত্রী রত্না দেবীকে ডিভোর্স দেবার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । আর তার ঠিক পরে রত্না-দেবী সি বি আই-এর জেরার মুখোমুখি হতে চান ।
সূত্রের খবর, রত্না-দেবী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে খবর পাঠিয়েছেন, তিনি যা জানেন সবকিছুই জানাতে চান । রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করেন, যদি রত্না-দেবী মেয়রের বিরুদ্ধে গোপন কিছু জবান বন্দি দেন এবং তিনি নারদ দূর্নীতি নিয়ে যা জানেন তা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের কাছে যদি বলে ফেলেন , তাহলে সমস্যায় পড়তে পারেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় কানন সহ একাধিক তৃণমূলের হেভি-ওয়েট নেতারা ।
এদিকে, মেয়র-পত্নীর মেডিক্যালে রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল ই ডি ৷ রত্না চট্টোপাধ্যায় ই মেল করে এর আগে ই ডি-কে জানিয়েছিলেন, অসুস্থ থাকায় তিনি লন্ডনে চিকিত্সাধীন ৷ তাই ই ডি অফিসে যেতে পারছেন না বলে ই ডি-র তলবের প্রেক্ষিতে জানান রত্না চট্টোপাধ্যায় ৷ ইতিমধেই মেডিক্যাল রিপোর্টও জমা দেন তাঁর ভাই শুভাশিস দাস ৷ সেই রিপোর্ট যথাযথ নয় বলে মনে করছে ই ডি ৷ তাই ফের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তলব করল ই ডি ৷ ফের তলব করা হল মেয়র পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে ৷ এই নিয়ে নারদকাণ্ডে তাকে ষষ্ঠবার তলব করল ই ডি ৷ আগামী সপ্তাহে তাকে সল্টলেকের সি জি ও কমপ্লক্সে ই ডি-র অফিসে আসতে বলা হয়েছে ৷ আগেও তাঁকে তলব করেছে ই ডি ৷ অসুস্থতার কারণ দিয়ে আসেননি ৷
এদিকে, বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন কলকাতার মেয়র তথা দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ৷ আগামী ১৯ ডিসেম্বর মামলার শুনানি হওয়ার কথা ৷
ই ডি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নোটিশে রত্না চট্টোপাধ্যায় হাজির না হলে আইনি পরামর্শ নিয়ে তারা আদালতের দারস্থ হবেন । নারদ-কাণ্ডে মেয়রের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল সি বি আই এবং ই ডি। দু’টি সংস্থাকেই মেয়র জানিয়েছেন, তিনি নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলকে চেনেন না। কোনও টাকাও নেননি। এমনকী তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি, টাকা-পয়সার খোঁজও তিনি রাখেন না। সে সব তাঁর স্ত্রী দেখভাল করেন। এর পরেই সি বি আই ও ই ডি-র নজরে আসেন রত্নাদেবী। অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই লন্ডন চলে যান রত্নাদেবী। সঙ্গে যান তাঁর মেয়ে। ছেলে ছিলেন আমেরিকায়। সেখান থেকে ছেলেও চলে আসেন লন্ডনে।
সি বি আই ও ই ডি-র তদন্তকারীদের বক্তব্য, শোভন যে হেতু রত্নাদেবীর নাম উল্লেখ করেছেন, তাই বাধ্য হয়েই ডেকে পাঠানো হচ্ছে তাঁকে। নারদ কান্ডে যে রত্নাদেবী জড়িত নন, তা আপাত ভাবে তদন্তকারীদের কাছে পরিষ্কার । এক বার রুটিন মাফিক জিজ্ঞাসাবাদ করেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এ ভাবে বারবার সমন পেয়েও রত্নাদেবী না এলে, বাধ্য হয়ে তাঁর বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা।
প্রথমে গত ৪ সেপ্টেম্বর মেয়র-পত্নীকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু তার আগের দিন ই-মেল করে ইডি-কে রত্নাদেবী জানিয়ে দেন, অসুস্থতার জন্য আসতে পারবেন না। এক মাস সময় চান তিনি। এর আগে লন্ডন থেকে রত্নাদেবী জানিয়েছিলেন, শোভনবাবু রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলেই ব্যবসার সমস্ত কাজকর্ম তাঁকেই দেখতে হয় । ফলে, ই় ডি ডেকে পাঠানোয় তিনি খুব একটা অবাকও হননি । রত্নাদেবীর দাবি, তিনি স্বচ্ছ ভাবে ব্যবসা করেন। কাজেই ব্যবসা সংক্রান্ত যে কোনও নথিই তিনি তুলে দিতে পারেন ।
অন্যদিকে, কাকতালীয়ভাবে ই ডি-র জেরার মুখে পরেন মেয়রের শ্যালক ও সহযোগী শুভাশিস দাসও । শুভাশিসের সঙ্গে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে পড়েন মেয়রের অন্যতম সহযোগী দিলীপ সাহা ৷ তারা মেয়র পত্নীর অসুস্থতা প্রমান করতে রত্নার মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেন ৷ সেই মেডিকেল রিপোর্ট সঠিক নয় বলে ই ডি জানিয়েছে আজ ৷
ই ডি সূত্রে খবর, চলতি মাসের শেষেই নারদ কাণ্ডে জেরা করা হবে মেয়র-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে । তার আগেই আবার মেয়র স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করায় তিলোত্তমা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷ আদালত সূত্রের খবর, গত সোমবার আলিপুর আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলাটি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৭৩৯/২০১৭) দায়ের করেন মেয়র ৷ আগামী ১৯ ডিসেম্বর মামলার শুনানি হওয়ার কথা৷
সূত্রের খবর, স্ত্রীর বিরুদ্ধে পর্ণশ্রী থানাতেও একটি মামলা দায়ের করেছেন মেয়র ৷ মেয়রের স্ত্রী রত্নাদেবী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ৷ চিকিৎসার জন্য তিনি গত কয়েকমাস লন্ডনে ছিলেন ৷ সম্প্রতি তিনি কলকাতায় ফিরেছেন ৷ এদিকে মেয়র এবং মেয়র পত্নী মুখে কুলুপ আটায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার পর কি এমন ঘটনা ঘটল যে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হল মেয়রকে ৷
এদিকে, এই নিয়ে জল্পনা চরমে উঠেছে খাস তৃণমূলের অন্দরেই ৷ দলের একাংশের মতে, সবটাই ‘গট আপ’ ৷ কারণ নারদ কাণ্ডে মেয়রের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী এবং শ্যালকের নাম জড়িয়েছে ৷ ওই অংশের মতে, নারদা মামলার প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সি বি আই ৷ এই অবস্থায় মামলায় রায় বিরুদ্ধে গেলেও স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের দরুন কিছু সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে ৷
অন্য একটি অংশের মতে, শোভনবাবুর সঙ্গে রত্নাদেবীর তিক্ততা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল ৷ ওই মহলের মতে, টলিউডের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে মেয়রের মধুর সম্পর্ক নিয়ে একসময় জোর রটনায় সরগরম হয়ে উঠেছিল তিলোত্তমা ৷ ঘটনার জেরে খোদ দলনেত্রীর তীব্র ভৎসর্ণার মুখেও পড়তে হয় মেয়রকে ৷ তারই জেরে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি চরম আকার নেয়৷ তবে মেয়র বা মেয়র পত্নী নিজেরা খোলসা করে কিছু না বলায় বিষয়টা ধোঁয়াশাই থেকে গিয়ে গুঞ্জন দানা বাধছে ৷ যদিও অনেকের ধারণা যা রটে তা কিছু বটে ৷
এই প্রসঙ্গে জনৈক দুলাল ভৌমিক মনে করিয়ে দেন দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট আমলের একটি ঘটনা । কৃষক সমিতির নেতৃত্বে চলছে সিলিং বহির্ভূত জমি উদ্ধারের লড়াই । এক জোতদারের প্রায় ১৫০ বিঘা জমি আছে, আমরা জানতাম । আইন অনুযায়ী কোন পরিবার ৭৫ বিঘার বেশী জমি রাখতে পারতেন না । কিন্তু তার জমি যখন উদ্ধার করতে যাওয়া হ’ল, তিনি কাগজ পত্র এনে দেখিয়ে দিলেন যে তিনি ১০ বছর আগেই তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছেন । সুতরাং তার স্ত্রীর ভিন্ন পরিবার এবং তিনিও ৭৫ বিঘা জমি রাখতে পারেন । কায়েমি স্বার্থের চরিত্র কেমন হ’তে পারে তা সে’দিন বোঝা গেল । সম্পত্তি রক্ষার জন্য স্ত্রীর অসম্মান করাও এদের পক্ষে সম্ভব । এখানে বলা প্রয়োজন, কাগজে কলমে ১০ বছর আগে ডিভোর্স হলেও ভদ্রলোকের ছোট ছেলের বয়স ছিল ৫ বছর ।
নারদ মামলায় শোভনের বিরুদ্ধে সি বি আই অভিযোগ দায়ের করায় গত বছরের জুন মাসে নিউ মার্কেট থানায় নারদ স্টিং অপারেশনের মূল কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন মেয়র পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়৷সিবিআই এবং ই ডি-র জেরায় মেয়র জানিয়েছিলেন, তাঁর আয়-ব্যয়ের যাবতীয় হিসেব রাখেন স্ত্রী রত্নাদেবী । এরপরে রত্নাদেবীকেও ডেকে পাঠান গোয়েন্দারা । কিন্তু চিকিৎসার কারণে লন্ডনে থাকায় এতদিন গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হননি মেয়র পত্নী ৷ সম্প্রতি কলকাতায় ফিরেছেন তিনি। চলতি মাসের শেষেই ই ডি-র কাছে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *