BRAKING NEWS

অবশেষে মুকুল এলেন বিজেপিতে

কলকাতা, ৩ নভেম্বর, ( হি.স.): সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপিতে যোগদান করলেন মুকুল রায় । তিনি ঠিক বিকেল ৫টায় দিল্লির অশোক রোডে বি জে পি-র সদর দফতরে পৌঁছে যান । চলে আসেন বি জে পি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ । তাঁকে বিজেপিতে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ | মুকুল রায়কে উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও স্বপন দাশগুপ্ত ।

শুক্রবার বিকেল ৫.৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগদান করেন মুকুল রায় । বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি । এদিন নীল জহর কোট, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে মুকুল রায় যান বিজেপির সদর দফতরে। তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল নেতৃত্ব। মুকুলের বিজেপিতে যোগদানের খবরে দিল্লিতে দলের অফিসের সামনে ভিড় করেন তাঁর অনুগামীরা ।

এদিন অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেই মুকুল বিজেপির দিল্লি সদর দফতরের সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তাঁকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিকদের মুকুলের যোগদানের খবর ঘোষণা করেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। কৈলাস তাঁর হাতে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদের কাগজ তুলে দেন। রবিশঙ্কর ও কৈলাস মিলে মুকুলের গলায় বিজেপির উত্তরীয় পরিয়ে দেন। স্বপন, কৈলাস ও রবিশঙ্কর ফুলের স্তবক মুকুলের হাতে তুলে দেন ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘মুকুল রায়কে দলে নিলে লাভবান হবে পশ্চিমবঙ্গ । গোটা দেশের অধিকাংশ রাজ্যে আমরা ক্ষমতায় আছি।বাকি রাজ্যের মানুষও চাইছেন বিজেপিকে’ । রবিশঙ্কর মুকুলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘১৩ রাজ্যে বিজেপির সরকার রয়েছে। বিজেপি বাড়ছে । সংগঠন বাড়ছে। আরও নতুন নতুন রাজ্যে বিজেপি সংগঠন বাড়াতে চায় । যখন মুকুল রায় নিঃশর্তে বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছেন। আমরা উৎসাহের সঙ্গে মুকুল রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি’। মুকুলের প্রশংসা করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলকে বাড়তে সাহায্য করেছিলেন। ১২ বছর সাংসদ ছিলেন । প্রাক্তন জাহাজমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী । সি পি এম-এর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি লড়েছিলেন। সেই লড়াইয়ে তিনি বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন’। মুকুলের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বাংলায় বিজেপির বিস্তার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রবিশঙ্কর। সারদা-নারদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইন আইনের পথে চলবে’।’

তবে দলে মুকুলের ভূমিকা কী হবে তা এখনও ঠিক হয় নি। সাংবাদিক বৈঠকের পরে ফের অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুকুল রায় । সেখানে ছিলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত প্রমুখ ।

তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তাঁরই এক সময়ের ছায়াসঙ্গী মুকুল রায়। এবার কী তবে মমতার বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু হল? মুকুল বললেন, ‘অবশ্যই। অবশ্যই’।বি জে পি নেতাদের সঙ্গে বসেই বললেন, ‘বাংলায় মানুষ হাঁফিয়ে উঠেছে। বিকল্প খুঁজছে। ২০১৯ ও ২০২১ সালে বিজেপি ভাল ফল তো করবেই। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাতে ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি’।
মুকুলের কথায়, ‘বিজেপি-র সমর্থনেই আজ এই জায়গায় এসেছে তৃণমূল । ১৯৯৭ সালে তৃণমূল প্রতিষ্ঠার সময় বিজেপি পাশে না দাঁড়ালে মমতার দল এই জায়গায় আসতে পারত না । বাংলার মানুষ হাঁফিয়ে উঠেছে । বিকল্প খুঁজছে । ২০২১ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে নতুন সরকার আসবে পশ্চিমবঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, ‘ বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ দল । ১৩টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তারা । ৫টি রাজ্যে তাদের উপমুখ্যমন্ত্রী রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি’।

রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, ১০ নভেম্বর ধর্মতলায় বিজেপির সভায় থাকবেন মুকুল রায় । সভায় অন্যতম প্রধান বক্তা মুকুলই । পঞ্চায়েত ভোটে মুকুলের সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাইছেন তারা ।

তৃণমূল ছাড়ার পর থেকেই মুকুল রায় বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে জল্পনা চলছিল । সেই জল্পনার অবসান ঘটতে চলেছে আজ । মুকুল রায় যে বিজেপি-তে আসতে চলেছেন, তার ইঙ্গিত কয়েকদিন আগেই মিলে ছিল । বৃহস্পতিবার ক্যানিংয়ের সভায় মুকুলের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় । তারও আগে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘নারদায় মুকুলকে টাকা নিতে দেখা যায়নি’। পাশাপাশি দিলীপ মন্তব্য করেছিলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেই তিনি দোষী হয়ে যান না । রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বিজেপির প্রশংসা করে মুকুলও বুঝিয়ে দেন তাঁর রাজনৈতিক অভিমুখ ।

কালীপুজোর পর মুকুলের বিজেপিতে যোগদানের কথা থাকলেও, আরএসএস ও রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে বিজেপিতে নয়া রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করতে চলেছেন একদা তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’। সূত্রের খবর, রাজনৈতিক মহলের কৌতূহলের মধ্যেই কয়েকদিন আগে দিল্লিতে বিজেপি সাংসদ ওম বিড়লা বাড়িতে বৈঠক করেছেন মুকুল । সেদিনই তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয় দিল্লিতে । তবে তা নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনও মন্তব্য করেনি । সাংসদ ওম বিড়লার বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় মুকুল রায়কে ।

বিজেপির নেতাদের সামনে মুকুল রায় জানান, বিজেপিতে যোগদান তাঁর কাছে গর্বের বিষয়। বিজেপির সমর্থন ছাড়া তৃণমূলের উত্থান সম্ভব ছিল না। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার পর বিজেপির সঙ্গে ছিল তৃণমূল। একসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন বাংলায় ক্ষমতায় আসবে বিজেপি । বাংলার মানুষ বিকল্প খুঁজছে, বিজেপি-র নেতৃত্বে ২০২১ সালে বাংলায় নতুন সরকার তৈরি হবে। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যের শাসক দলকে ধাক্কা দেবে বিজেপি। অমিত শাহর দলকে সার্টিফিকেট দিয়ে মুকুলের সংযোজন, বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয়। কেন্দ্রীয় নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বুঝিয়ে দেন কেন মুকুল রায় বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, মুকুল রায় তৃণমূলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তৃণমূলের উত্থানে তাঁর ভূমিকা ছিল। সি পি এম-কে হটাতে মুকুলের অবস্থান ছিল উল্লেখযোগ্য । পাশাপাশি রবিশঙ্করের সংযোজন, মুকুল রায়ের অন্তর্ভুক্তিতে বাংলায় বিজেপির বিস্তার হবে । বাংলায় বিজেপি হবে শক্তিশালী। দলের অন্য অংশকে বার্তা দিতে এই কেন্দ্রীয় নেতা জানান সবদিক বিচার করেই মুকুল রায়কে নেওয়া হয়েছে।

তবে রাজ্য নেতৃত্বর একাংশ মুকুল রায়ের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিরোধিতা করেছিল। সারদা-নারদ কেলেঙ্কারির আঁচ যে নেতার গায়ে লেগেছে তাকে দলে নেওয়া কতটা লাভ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তারা । এই শিবিরের চাপে বিজেপিতে মুকুলযোগ একসময় পিছিয়ে গিয়েছিল । পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারে বাংলায় তৃণমূলকে হটাতে হলে যোগ্য সংগঠকের প্রয়োজন। সেই জায়গায় মুকুল রায়ের বিকল্প নেই। একদা তৃণমূলের তথাকথিক সেকেন্ড ইন কম্যান্ডকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা নিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বৃহস্পতিবার ক্যানিংয়ের জনসভায় মুকুলের ভূয়সী প্রশংসা করে জল্পনা আরও উসকে দিয়েছিলেন কৈলাস। শুক্রবার তাঁর গাড়িতে চেপে আকবর রোডে বিজেপির সদর দফতরে যান মুকুল রায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিজেপির মুকুল বৃত্ত সম্পূর্ণ হল । দিল্লির সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন মুকুল রায়। উপস্থিত ছিলেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, কৈলাস বিজয়বর্গী, স্বপন দাশগুপ্ত ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *