BRAKING NEWS

পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে ৩৬ ঘণ্টার বনধ-এ অচল নিম্ন অসম

বঙাইগাঁও (অসম), ১২ জুন, (হি.স.) : কোচ-রাজবংশীদের জনজাতিকরণ এবং পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবিতে সারা অসম কোচ-রাজবংশী ছাত্র পরিষদ (এএকেআরএসইউ বা আক্রাসু) আহূত ৩৬ ঘণ্টার ‘অসম বনধ’-এ নিম্ন অসম-সহ রাজ্যের কয়েকটি অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। এই বনধ-এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বঙাইগাঁও, অভয়াপুরি, গোরেশ্বর, বাকসা, বিজনি, গোলকগঞ্জ, ধুবড়ি, কোকরাঝাড়, গোয়ালপাড়া, বরপেটা, নলবাড়ি, দরং, শোণিতপুর, মরিগাঁও-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে। ওই সব এলাকার রাস্তায় কোনও যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না, বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস-কাছারি ইত্যাদি।
কোথাও কোথাও রেললাইনের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন আন্দোলনকারীরা। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকার রাজপথেও জ্বালানো হচ্ছে টায়ার। তবে এখন পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। ভোর পাঁচটা থেকে আহূত বনধ-এর আহ্বায়করা দূরপাল্লার ট্রেনও আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে সেগুলি চলাচল করানো সম্ভব হয়েছে।
তাঁদের আন্দোলন সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে আক্রাসু-র সাধারণ সম্পাদক গকুল বর্মন জানান, পৃথক কামতাপুর এবং কোচ-রাজবংশীদের জনজাতির স্বীকৃতি প্রদানে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখছে না সরকার। তাই তাঁদের দাবি আদায়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পূর্ব সূচি অনুযায়ী আজ সকাল পাঁচটা থেকে ৩৬ ঘণ্টার অসম বনধ পালন করছেন। বর্মন বলেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে গত ২৫ এবং ২৬ মে ৩৬ ঘণ্টার অসম বনধ-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় প্রধানমন্ত্রীর অসম সফরের অজুহাত দিয়ে প্রস্তাবিত বনধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে চলতি জুনের প্রথম সপ্তাহে আক্রাসু-র সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। রাজ্য সরকার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এবং ২৬ মে ৩৬ ঘণ্টার অসম বনধ কর্মসূচি তাঁরা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছিলেন আক্রাসু নেতারা। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল আক্রাসু-র আন্দোলনকে বানচাল করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ তুলেন গকুল বর্মন। বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজে আলোচনার টেবিলে না বসে গতকাল (রবিবার) রাজ্যের দুই মন্ত্রী কেশব মহন্ত এবং নবকুমার দোলের সঙ্গে আক্রাসু নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিল অসম সরকার। কিন্তু সরকারের সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, তাঁদের দাবি পূরণে এই দুই মন্ত্রী কোনও সমাধানসূত্র বের করতে পারবেন না জেনেই অযথা সময় নষ্ট করতে চাইছে সরকার। সরকারি চক্রান্তের ফাঁদে পা না দিয়ে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাই সরকারের প্রতি বিরক্ত হয়ে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই আজ সকাল থেকে ৩৬ ঘণ্টার বনধ কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছেন, জানান আক্রাসু নেতা গকুল বর্মন।
তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদা জেলা এবং অসমের ধুবড়ি, বঙাইগাঁও, কোকরাঝাড়, গোয়ালপাড়া, বরপেটা, নলবাড়ি, দরং, শোণিতপুর, ধেমাজি, লখিমপুর এবং মরিগাঁও জেলাকে নিয়ে কামতাপুর বা বৃহত্তর কোচবিহার রাজ্যের দাবিতে গত ২০০৮ সালে ‘দ্য সেপারেট স্টেট ডিমান্ড কমিটি’ গঠিত হয়েছিল। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান গকুল বর্মন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *