নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ মার্চ৷৷ কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রীকে রাজ্যে পেয়ে সঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ হলে তবেই কৃষি ও মৎস্য
ক্ষেত্রে আরো উন্নয়ন সম্ভব বলে খোঁচা দেন মৎস্য মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়া৷ কিন্তু এর পাল্টা দিতে কোন কসুর রাখেননি কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী রাধা মোহন সিং৷ তিনি রাজ্যের কৃষি বিপ্লবের মুখোশ টেনে খুলে দেন এবং প্রশ্ণ করেন, তিন গুণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্যকে, কিন্তু কৃষিতে তিন গুণ উন্নয়ন কোথায়৷ তাই তিনি রাজ্যকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, সময় মতো বরাদ্দ অর্থ খরচ করুন এবং হিসেব দিন৷ কারণ, হিসেব না দিলে অর্থ বরাদ্দ হবে না, স্পষ্ট জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী৷
রবিবার লেম্বুছড়াস্থিত কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পর্যালোচনা বৈঠকে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষি রাজ্যের বিষয়৷ ফলে, এর কল্যাণে রাজ্যকেই ভাবতে হবে৷ রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রীর সঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দের দাবি প্রসঙ্গে এদিন তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে রাজ্য সরকারকে বুঝিয়ে দেন হিসেব দিয়ে তবেই আরো অর্থ চাইতে হবে৷ কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী জানান, আগে কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের অংশীদারিত্ব যা ছিল, তা এখন অনেক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ৫ বছরে কেন্দ্রীয় করের অংশ হিসেবে রাজ্য পেয়েছে ৭৬৪৬ কোটি টাকা৷ কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৩৬৯৫ কোটি টাকা৷ কৃষি ক্ষেত্রে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৬৬৭ কোটি টাকা৷ সে জায়গায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে ৩৪২৬ কোটি টাকা৷ তাঁর বক্তব্য, তিন গুণ অর্থ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ তাহলে তিন গুণ উন্নতিও দেখা যাওয়া উচিৎ৷ সেক্ষত্রে উন্নয়নের মূল্যায়ণ রাজ্য সরকারকে নয়, মানুষকে করতে হবে, দাবি তাঁর৷
এদিন মনে হয়েছে কৃষি মন্ত্রী প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন, তাই রাজ্য সরকারের কৃষি বিপ্লবের মুখোশ টেনে খুলে ফেলেন তিনি৷ কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশ গ্রামে বসবাস করেন৷ গ্রামীণ ও শহর এলাকা মিলিয়ে মোট ২৪ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে এরাজ্যে৷ কিন্তু, সেই কৃষি জমির মাত্র ৪২ শতাংশ সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে, উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি৷ জাতীয় গড় ৫৫ শতাংশের সাথে তুলনা টেনে এনে তিনি প্রশ্ণ করেন, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও সমস্ত কৃষি জমিতে জল পৌছায়নি, তাহলে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ কিভাবে সম্ভব৷
এদিন তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সেচ যোজনায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রাজ্যকে ২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল৷ তাতে ৪৪৪ হেক্টর জমিতে সেচ সম্ভব৷ কিন্তু, সেই বরাদ্দ অর্থের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট এখনো পাওয়া যায়নি৷ তাঁর সাফ কথা, বরাদ্দ অর্থের খরচের হিসেব না দিলে কোন টাকা পাওয়া যাবে না৷ আর তাতে রাজ্যের এবং কৃষকেরই ক্ষতি হবে, মনে করেন তিনি৷
কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মাটি সুস্থ হওয়া অত্যন্ত জরুরী৷ সেই কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী বলেন, মাটির রোগ নির্ণয়ে সারা দেশের ১৪ কোটি কৃষকদের সয়েল হেলথ্ কার্ড দেওয়া হচ্ছে৷ মার্চের মধ্যে এই কর্মসূচী সমাপ্ত হবে৷ কিন্তু তিনি আশংকা প্রকাশ করে জানান, এরাজ্যে মাটির চিন্তা সেভাবে করা হচ্ছে না৷ রাজ্যের ১ লক্ষ ৭৮ হাজার কৃষকের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশের হাতে সয়েল হেলথ্ কার্ড পৌছেছে৷ তিনি রাজ্য সরকারকে সমস্ত কৃষকদের সয়েল হেলথ্ কার্ড পাওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে বলেন৷
এদিন তিনি রাজ্যকে বরাদ্দ অর্থের আরো তথ্য তুলে ধরে জানান, সয়েল হেলথ্ ম্যানেজমেন্টের অন্তর্গত আধুনিক মোবাইল ল্যাব মাটি পরীক্ষার জন্য, দুইটি মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র, ১০০টি পরীক্ষার কিট ও ৩২ জন দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ ও প্রশিক্ষনের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, এই বরাদ্দ অর্থের মাত্র ৭৮ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছে রাজ্য৷ তিনি আরও জানান, জৈব চাষে আগে কোন প্রকল্প ছিল না৷ এখন এই প্রকল্পের অন্তর্গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৩৫৬ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৩২ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, এক্ষেত্রেও রাজ্য ১৯৪ কোটি টাকা এখন পর্যন্ত খরচ করতে ব্যর্থ৷
এদিন তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে আরো জানান, অধিক দুগ্দ উৎপাদনের জন্য গকুল মিশন চালু করা হলেও, রাজ্যের কাছ থেকে এবিষয়ে এখনো কোন প্রস্তাব মিলেনি৷ দেশের ১৪টি রাজ্যকে এই মিশনের অন্তর্গত মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে৷ দেশের মোট ২৭টি রাজ্যের ৩৫টি প্রজেক্টের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ তিনি আরো জানান, জাতীয় ডেয়ারী বিকাশে রাজ্যকে বরাদ্দ অর্থের ৭০-৮০ লক্ষ টাকা এখনো খরচ হয়নি৷
এদিকে, প্রযুক্তি নির্ভর মৎস্য উৎপাদনে বৃদ্ধি সম্ভব এই দাবি করে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী সেন্ট্রালি স্পনসর্ড স্কিমের অন্তর্গত বিগত বছরগুলিতে রাজ্যের প্রাপ্ত অর্থের খতিয়ান তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১১ লক্ষ টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, এবছর তা বাড়িয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা৷ এই তথ্য তুলে ধরে তিনি রাজ্য সরকারকে মৎস্য চাষে প্রযুক্তির ব্যবহার তৃণমূলস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব মনে করিয়ে দেন৷ পাশাপাশি নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্রত্যেক জেলায় ও ব্লকে কৃষি আধিকারীক এবং পঞ্চায়েতে কৃষক বন্ধু থাকতে হবে৷ এর জন্য কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করছে, ফলে এই ব্যবস্থা না থাকার কোন কারণ নেই বলেই তিনি মনে করেন৷
এদিন তিনি বলেন, এতদিন রাজ্যে ৪ জেলায় মাত্র ৪টি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র খোলা সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু, আরো তিনটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র খোলার তিনি অনুমোদন দিয়েছেন এবং চতুর্থটি খোলার জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অনুমোদন দেবেন৷