BRAKING NEWS

কেন্দ্রের এক লক্ষ কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে নজিরবিহীন তরজা, বিজেপি নেতা রাম মাধবকে পত্রযুদ্ধে কাত করতে গিয়ে বেকায়দায় রাজ্য অর্থ দপ্তর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ মার্চ৷৷ বিজেপি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ঘিরে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর সরাসরি লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ন হয়েছে বলে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমত৷ সম্ভবত এই প্রথম কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পদাধিকারীর অভিযোগের বিরুদ্ধে ত্রিপুরা সরকারের অর্থ দপ্তর সরাসরি পত্রযুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কোন সরকারী পদাধিকারীর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের জবাব রাজ্য সরকারকে অতীতে দিতে দেখা গেছে৷ কিন্তু, কোন রাজনৈতিক দলের পদাধিকারীর অভিযোগের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরকে পত্রযুদ্ধে নামতে সচরাচর দেখা যায়নি৷ বলা যায়, এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা৷
গতকাল রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাম মাধবকে একটি চিঠি পাঠায়৷ এই চিঠি আসামের মুখ্যমন্ত্রীকেও দেওয়া হয়৷ এই চিঠির সাথে একটি প্রেস স্টেটম্যান্ট জুড়ে দেওয়া হয়৷ এই প্রেস স্টেটম্যান্টে উল্লেখ করা হয়, বিগত তিনটি অর্থ বছরে ভারত সরকারের কাছ থেকে ত্রিপুরা সরকার এক লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছে বলে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের যে মন্তব্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেটির প্রতি রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে৷
বিগত তিনটি অর্থ বছরে ত্রিপুরা সরকার ভারত সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছে তার প্রেস স্টেটম্যান্ট যা রাজ্য সরকারের অর্থদপ্তরের চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে , ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় করের অংশ ১৭৩০১৩ কোটি টাকা, সেন্ট্রাল স্পনসর্ড স্কিম/সেন্ট্রাল অ্যাসিস্ট্যান্টস টু স্টেট প্ল্যান ৫১৩৭৭৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ১০০১৯৬ কোটি টাকা, সব মিলিয়ে ৭৮৬৯৮৩ কোটি টাকা পেয়েছে৷
২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় করের অংশ ৩২৬৬০২ কোটি টাকা, সেন্ট্রাল স্পনসর্ড স্কিম/সেন্ট্রাল অ্যাসিস্ট্যান্টস টু স্টেট প্ল্যান ৩৩৯১৩২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ১১৭৪৫৫ কোটি টাকা, সব মিলিয়ে ৭৮৩১৮৯ কোটি টাকা পেয়েছে৷
২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় করের অংশ ২৭১৮ কোটি টাকা, সেন্ট্রাল স্পনসর্ড স্কিম/সেন্ট্রাল অ্যাসিস্ট্যান্টস টু স্টেট প্ল্যান ১৯৬৪৩০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ১০২৩০১ কোটি টাকা, সব মিলিয়ে ৫৭০৫৯১ কোটি টাকা পেয়েছে৷
অর্থাৎ বিগত তিনটি অর্থ বছরে ভারত সরকারের কাছ থেকে মোট পাওয়া গেছে ২১,৪০৭৬৩ কোটি টাকা৷ তাই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের এ সংক্রান্ত উপরোক্ত মন্তব্য সত্য নয়৷ এই চিঠি ও বিবৃতি আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠিয়েছে রাজ্যের অর্থদপ্তর৷
এই চিঠির প্রেক্ষিতে রাম মাধব তাঁর বিরুদ্ধে উঠা ত্রিপুরা সরকারের অর্থ দপ্তরের অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন এবং তা খন্ডন করেছেন৷ তিনি ইমেল মারফত ত্রিপুরা সরকারের অর্থ দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারিকে জানিয়েছেন, দয়া করে আমার বক্তব্য যাচাই করুন৷ আমি বলেছি, মানিক সরকারের শাসনে ত্রিপুরা ১ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সহায়তা পেয়েছে৷ গত ২০ বছরের কেন্দ্রীয় অর্থ প্রাপ্তির রেকর্ড ঘেঁটে দেখার জন্য তিনি ত্রিপুরা সরকারের অর্থ দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন৷
রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের পত্রযুদ্ধে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন বিজেপি ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি বিপ্লব দেব৷ রবিবার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, না বুঝেই রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ শুক্রবার আগরতলায় বিবেকানন্দ ময়দানে বিজেপির প্রতিবাদ মহা সমাবেশে তিনি গত তিন বছরে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছেন বলেননি৷ তিনি বলেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের শাসনকালে ত্রিপুরা ১ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সহায়তা পেয়েছে৷ বিজেপি রাজ্য সভাপতি এদিন রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের আধিকারীকদের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর কোন কিছু সঠিকভাবে না বুঝেই বিজেপি’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে৷ তিনি জানান, রাম মাধবের বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর চাইলে তাদেরকে দেওয়া যাবে৷ তাঁর দাবি, এর থেকে স্পষ্ট এরাজ্যে মিথ্যাচারের সরকার চলছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *