নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ ফেব্রুয়ারি৷৷ সংখ্যালঘুদের উপর দমন পীড়নের মাধ্যমে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের গরিমা নষ্ট
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/02/Jari-Sari-Utsab-300x201.jpg)
করতে এবং এক জাতি এক সংসৃকতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকার উঠেপড়ে লেগেছে, তোপ দাগেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মানিক দে৷ তাঁর বক্তব্য, দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনধারার উপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে৷ বিজেপি এবং আরএসএস ঠিক করে দিতে চাইছে কে কি খাবে, কি পরিধান করবে৷ এই লক্ষণ ভয়ানক, মন্তব্য করেন তিনি৷ তাঁর দাবি, এরাজ্যে সব ধর্মের মানুষের সমানাধিকার রয়েছে৷ সাথে যোগ করেন, বামফ্রন্ট সরকার আছে বলেই এরাজ্যে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে৷ শনিবার নজরুল কলাক্ষেত্রে রাজ্যভিত্তিক জারি সারি উৎসবের উদ্বোধন করে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মানিক দে এইভাবেই বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন৷
এদিন তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার সকল জাতীর উন্নতিতে সমানভাবে সহায়তা করছে৷ কিন্তু, আরএসএস পরিচালিত বিজেপি রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে৷ তিনি আরো যোগ করেন, গোটা দেশেই বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে৷ তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশবাসীর মানসিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তাতে সংঘর্ষ এবং খুন গোটা দেশেই বেড়ে যাবে৷
তাঁর বক্তব্য, সম্প্রতি অসহিষ্ণুতার প্রবণতা গোটা দেশেই দেখা যাচ্ছে এবং ধর্মীয় সংঘাত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বেড়ে চলেছে৷ তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিজেপি এবং আরএসএস সারা দেশেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দূর্বল করতে চাইছে৷ তাই তিনি সকল অংশের জনগণের কাছে আহ্বান জানান, জাতি-উপজাতি, হিন্দু-মুসলীম সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলুন৷
শনিবার নজরুল কলাক্ষেত্রে দু’দিন ব্যাপী রাজ্য ভিত্তিক জারি সারি উৎসব, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ স্মৃতি মেধা পুরস্কার, বেগম রোকেয়া স্বর্ণ পদক পুরস্কার, নির্বাচিত খ্যাতিমান খেলোয়াড় ও সাংসৃকতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠিত শুরু হয়েছে৷ চলবে আগামীকাল পর্যন্ত৷ আজ মূলতঃ গত বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু অংশের ছাত্রছাত্রী যারা ৬০ শতাংশ বা এর বেশী নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এমন ২৩৪ জনকে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ স্মৃতি মেধা পুরস্কার এবং এ দুটি পরীক্ষায় যে দুজন সংখ্যালঘু অংশের মেয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে বেগম রোকেয়া স্বর্ণ পদক পুরস্কারে পুরসৃকত করা হয়৷ প্রদীপ জ্বেলে এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী সহিদ চৌধুরী৷
নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার চায় সকলের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সকলের সার্বিক উন্নয়ন৷ সংখ্যালঘু অংশের মানুষের উন্নয়নে রাজ্য সরকার ২৮ দফা গুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ অনেক ছেলে মেয়ে রাজ্যের বাইরে বিদেশে পড়াশুনা করছে৷ এই পুরস্কার ছাত্র ছাত্রীদের মনে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে৷ তিনি বলেন, দেশে একমাত্র ত্রিপুরা রাজ্যেই ছেলে মে য়েরা কলেজ পর্যন্ত বিনা পয়সায় লেখাপড়ার সুযোগ পায়৷ বাজেটের ২১ শতাংশ টাকা শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হয়৷ তাই এর সদব্যবহার করতে হবে৷ সভাপতির ভাষণে সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রী সহিদ চৌধুরী বলেন, অপসংসৃকতি আজ যুব মনকে যেভাবে বিপথে পরিচালিত করছে তা প্রতিহত করার জন্যেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে৷ এই উৎসবে প্রবীণদের দেখেই নতুনরা শিখবে, পুরস্কার পেয়ে উৎসাহিত হবে৷ তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া ছিলেন মুসলিম নারী সমাজের পথিকৃৎ৷ মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী৷ তাঁদের স্বপ্ণ ছিল সকলের সার্বিক উন্নয়ন৷ কিন্তু সারা দেশেই সংখ্যালঘু আজ নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে৷ ব্যতিক্রম ত্রিপুরা রাজ্য৷ ২০০০ সাল থেকে তাদের উন্নয়নে এখানে গুচ্ছ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য চাই সকলের উন্নয়ন৷ একটি জাতি গোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়৷
বিশেষ অতিথির ভাষণে মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন বলেন, এই অনুষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেবে৷ উৎসাহ দেবে দেশ বিদেশে উচ্চ শিক্ষা লাভের৷ বিশেষ অতিথির ভাষণে সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের সচিব সমরজিৎ ভৌমিক বলেন, রাজ্যে ১৫০০টি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম রয়েছে৷ তাদের উন্নয়নে বহু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে৷ স্বাগত ভাষণ দেন সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা দুলাল চন্দ্র দাস৷
অনুষ্ঠানে গত বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ বা এর উপর নাম্বার নিয়ে উত্তীণ মোট ২৩৪ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু অংশের ছাত্র-ছাত্রীকে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ পুরস্কারে অতিথিগণ পুরসৃকত করেন৷ প্রত্যেক মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের দেওয়া হয় নগদ ২০০০ টাকা, শংসাপত্র ও বই৷ দ্বাদশ উত্তীর্ণদের দেওয়া হয় নগদ ৩০০০ টাকা, শংসাপত্র ও বই৷ বেগম রোকেয়া পুরস্কার পান মাধ্যমিকের কৃতী ছাত্রী সুচরিতা আক্তার৷ তাকে দেওয়া হয় স্বর্ণপদক, শংসাপত্র ও নগদ ১০ হাজার টাকা৷ আগামীকাল ২৬০ জন কৃতী খেলোয়াড়, সাংসৃকতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজ্য ভিত্তিক জারি-সারি উৎসবের বিজয়ীদের পুরসৃকত করা হয়৷ আজ রাজ্য ভিত্তি জারি-সারি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তর এবং তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তর যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করেছে৷