নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ ফেব্রুয়ারি৷৷ রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ সঠিকভাবে খরচ করছে না, আক্ষেপের
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/02/JP-Nadda-300x200.jpg)
সুরে বললেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জে পি নাড্ডা৷ সেই তালিকায় রাজ্যও রয়েছে তারও ইঙ্গিত মিলেছে৷ এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায় বাংলায় রাজ্যে কোন সেন্টার না হওয়ার পেছনে রাজ্য সরকারই দায়ী৷ তবে শ্রীনাড্ডা আশ্বাস দিয়েছেন এবিষয়ে তিনি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন৷
শনিবার আগরতলায় সার্বজনীন টিকাকরণ কর্মসূচীর আওতায় রোটা ভাইরাস টিকা সম্প্রসারণের সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্র্ জে পি নাড্ডা৷ ত্রিপুরা সহ তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও আসামে এক সাথে এই কর্মসূচীর সূচনা হয়েছে৷ এদিন, একটি শিশুকে টিকা খাইয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই কর্মসূচীর সূচনা করেন৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্র্ দাবি করে বলেন, পূর্বোত্তরের দিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর রয়েছে৷ এই অঞ্চলকে সামনের সারিতে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থ রাজ্য সরকারগুলি সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন শ্রীনাড্ডা৷ একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন উত্তরাখন্ডের বরাদ্দ অর্থের ১৭৯ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে৷ তিনি বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলির উদ্দেশ্যে বলেন, অর্থের জন্য কোন চিন্তা করবেন না৷ উন্নয়নের প্রশ্ণে অর্থের কোন ঘাটতি রাখবে না কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পারলে পরবর্তী পর্যায়ে অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷
[vsw id=”1DNVeR-Ut4U” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]এদিকে, মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায় বাংলাতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আগরতলাতে কোন কেন্দ্র না থাকার জন্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্র্৷ এদিন তিনি বলেন, নীট সম্পর্কে আমরা খুবই খোলামেলা৷ যদিও এক্ষেত্রে একটি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা ছিল যেখানে রাজ্যগুলিকে তাদের পছন্দের বিষয়গুলি জানাতে বলা হয়েছিল৷ কিন্তু কোন রকম পছন্দের বিষয় না জানানোতে বাংলাতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ত্রিপুরায় কোন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার এবিষয়ে কোন গোপনীয়তা রাখেনি৷ সাম্প্রতিককালে এবিষয়ক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করার আগে ওড়িশা এবং কর্ণাটকে দাবিরভিত্তিতে ওড়িয়া ও কন্নড় ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ বাংলা নিয়েও আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাকে কিছুটা সময় দিন, আপনাদের দাবি অনুযায়ী অবশ্যই এই সমস্যা সমাধান করা হবে৷ তবে, প্রতি ক্ষেত্রে খোলামেলা আলোচনার জন্য রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ এদিন তিনি বলেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশ্ণে যদি কোন প্রস্তাব থাকে তাহলে গঠনমূলক আলোচনার ভিত্তিতে সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এরই পাশাপাশি এদিন তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেবামূলক মানসিকতা নিয়ে কাজ করুন৷ তবেই রোগীদের কল্যাণ হবে৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, ডায়েরিয়া হল শিশু মৃত্যুর একটি অন্যতম বৃহৎ কারণ এবং দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাস হল মারাত্মক রকমের ডায়েরিয়ার একটি অতি পরিচিত কারণ৷ তিনি মনে করেন, রোটা ভাইরাস টিকার পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধান, হাত ধোয়ার অভ্যাস, ওআরএস এবং জিঙ্ক পরিপূরক প্রয়োগে ডায়েরিয়ার কারণে শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার ও অসুস্থতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে৷ তিনি বলেন, সরকার এছাড়াও পূর্ণ টিকাকরণের মাত্রা বৃদ্ধি করতে এবং প্রত্যেক শিশুকে জীবনদায়ী টিকা প্রদানের উপকারকে সুনিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্বোত্তরের রাজ্যসমূহ অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং ত্রিপুরায় ইতিমধ্যে মিশন ইন্দ্রধনূষ-এর চতুর্থ পর্ব শুরু করা হয়েছে এবং এই কর্মসূচী আগামী এপ্রিলের মধ্যে দেশের বাদবাকি অংশে প্রয়োগ করা হবে৷ শ্রীনাড্ডা বলেন, এই জীবনদায়ী টিকা শুধুমাত্র শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে না, উপরন্তু হাসপাতালে ভর্তি করা এবং রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়েরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় যেমন পুষ্টিহীনতা, শিশুদের মধ্যে দেরিতে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রবণতাও হ্রাস করবে৷ তাতে, পরিবারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক চাপ এবং দেশের উপর থেকে স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয়ের চাপ হ্রাস পাবে৷ এদিন তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৭৮ হাজার মৃত্যু, ৩২ লক্ষ বর্হিবিভাগীয় রোগী এবং প্রায় ৯ লক্ষ হাসপাতালে ভর্তি করার ঘটনার জন্য রোটা ভাইরাস ডায়েরিয়া দায়ী৷ এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের জলশূন্যতা, পুষ্টিহীনতা এবং বিলম্বিত শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ তিনি জানান, গত বছর মার্চে রোটা ভাইরাস টিকা প্রথম দেশের চারটি রাজ্যে হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশাতে চালু করা হয়েছিল৷ এখন পর্যন্ত ঐ চারটি রাজ্যে প্রায় ৩৮ লক্ষ শিশুকে রোটা ভাইরাস টিকা দেওয়া হয়েছে৷ আজ থেকে আরো ৫টি রাজ্য এই কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত হল৷
এদিন তিনি, মিশন ইন্দ্রধনুষ কর্মসূচী সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য ত্রিপুরা সরকারের প্রশংসা করেন৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরায় স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে সমস্ত রকম সহায়তা করবে৷ তিনি জানান, রাজ্যে স্টেট ক্যান্সার ইন্সটিটিউট গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকার ২০ কোটি টাকা চেয়েছিল৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ১২০ কোটি টাকা এর জন্য মঞ্জুর করেছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে কোন রকম খামতি রাখবে না কেন্দ্রীয় সরকার৷
এদিকে, অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী বলেন, রাজ্য সরকার শিশুদের ১০০ শতাংশ টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷ টিকাকরণ কর্মসূচীতে সম্প্রতি জাপানি এনসেফেলাইটিস ভ্যাকসিন যুক্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু এই টিকাকরণে উত্তর ত্রিপুরা জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷ তিনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান উত্তরত্রিপুরা জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করতে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিনে রাজ্যের ৫৩ হাজার শিশু উপকৃত হবে৷