বন্ধে রক্তে ভাসল, হিংসার আগুনে পুড়ল পাহাড়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ ফেব্রুয়ারি৷৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে এডিসি এলাকায় বন্ধকে ঘিরে

গন্ডাছড়ায় সিপিএম কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ বন্ধ সমর্থকদের৷ ছবি নিজস্ব৷
গন্ডাছড়ায় সিপিএম কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ বন্ধ সমর্থকদের৷ ছবি নিজস্ব৷

অশান্ত হয়ে উঠল পাহাড়৷ দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বহু৷ ভাঙচুর করা হয়েছে গাড়ি, বাড়ি ও দোকানপাট৷ অফিস ও সুকল বন্ধ রাখার জন্য পিকেটারদের মারমুখী ভঙ্গিমা লক্ষ্য করা গেছে৷ বন্ধকে ঘিরে ধলাই জেলার গন্ডাছড়ায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ এদিন এই বনধকে ঘিরে রাস্তায় নামেনি যানবাহন৷ রেল পরিষেবাও বন্ধ ছিল৷ সব মিলিয়ে এডিসি বন্ধে উপজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলির ভয়ানক রূপ ফুটে উঠেছে৷ অবশ্য, উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলির গঠিত ফোরামের দাবি, তাদের কর্মী সমর্থকরাই মার খেয়েছেন৷ তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ কিন্তু দীর্ঘদিন বাদে কোন বন্ধকে ঘিরে পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে৷
এদিন সকাল থেকেই এডিসি এলাকায় আইএনপিটি, আইপিএফটি এবং এনসিটি’র কর্মী সমর্থকরা পিকেটিং শুরু করেন৷ ধলাই জেলার [vsw id=”1a3NSf_1S6g” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]গন্ডাছড়ায় ফোরাম এবং শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ তাতে, প্রায় ২৩ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন৷ আহতদের মধ্যে ১ জন টিএসআর জওয়ান ও দুই জন দোকানদার রয়েছেন৷ জানা গেছে, বোধজংনগরস্থিত টিএসআর ২নং ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান দীনেশ দাস বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন৷ এদিন তিনি ঔষধ নিতে গন্ডাছড়া বাজারে গেলেই পিকেটাররা তার উপর চড়াও হন৷ এছাড়া দুই দোকানদার সতীশ দাস ও সজল মল্লিকও পিকেটারদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন৷

এডিসির সদর দপ্তর খুমুলুঙয়ে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয় বন্ধ সমর্থনকারী পিকেটাররা ৷ ছবি নিজস্ব৷
এডিসির সদর দপ্তর খুমুলুঙয়ে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয় বন্ধ সমর্থনকারী পিকেটাররা ৷ ছবি নিজস্ব৷

এদিকে, লংতরাইভ্যালিতে বনধকে ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সকাল দশটায় মাছলিতে আইএনপিটির সমর্থকরা এক দোকানদারের মাথা ফাটিয়ে দেন৷ জানা গেছে, তাপস রায় মাছলি বাজারে তার দর্জির দোকান খুলতে গেলে পিকেটাররা তাকে বাধা দেন৷ তাতে ঝগড়া শুরু হলে তাপস রায়ের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন পিকেটাররা৷ তাদের ঝগড়া থামাতে গিয়ে বিপ্লব দাস ও মিঠুন ঋষি দাসও আক্রান্ত হন৷ তাপস রায় বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ মনুতে বাজারে নামকীর্তন চলাকালীন পিকেটাররা কোন দোকান খুলতে দেননি৷ বাজার কমিটির সদস্যরা এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পিকেটিং করতে আসা টিআর০১-এ-০১২৯ নম্বরের গাড়িটিতে ভাঙচুর চালায়৷ এদিকে, বিজয়গিরি দেওয়ান পাড়া এলাকায় পিকেটাররা দুটি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছেন৷ সুদীপ বরুয়া এবং স্মৃতি বরুয়ার বাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে৷ লংতরাইভ্যালিতে বন্ধ চলাকালীন প্রশাসনের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে৷ অভিযোগে জানা গেছে, জেলাশাসক থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বন্ধ চলাকালীন পিকেটাররা যেখানে ভাঙচুর ও হামলা চালিয়েছে সেই জায়গাগুলি কেবল পরিদর্শন করেছেন৷ পিকেটারদের রণমূর্তি থামানোর বিষয়ে প্রশাসনের কোন ভূমিকা ছিল না বলে অভিযোগ৷
এদিন, বিভিন্ন স্থান থেকে আহত হয়ে জিবি হাসপাতালে ১১ জন ভর্তি হয়েছেন৷ ভাগ্য ত্রিপুরা, অর্জুনকুমার ত্রিপুরা, সজল মল্লিক, উপেন্দ্র রিয়াং, দীনেশ দাস, সতীশ দাস, নৃপেন ত্রিপুরা, দ্বিজেন্দ্র দেববর্মা, প্রমোদরঞ্জন ত্রিপুরা, আফ্রা মগ এবং বলেন্দ্র ত্রিপুরা জিবি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন৷ জিবি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাতে আরো ৫ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ এদিকে ফোরাম দাবি করেছে, বন্ধ চলাকালীন সংঘর্ষে তাদের শতাধিক সমর্থক আহত হয়েছেন৷

সিপিএম কর্মী ও বন্ধ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহতরা গন্ডাছড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ ছবি নিজস্ব৷
সিপিএম কর্মী ও বন্ধ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহতরা গন্ডাছড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ ছবি নিজস্ব৷

এদিন বনধ চলাকালীন প্রায় ৩৪০০ পিকেটার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ সকাল থেকেই পুলিশ এবং টিএসআর বাহিনীর যৌথ নজরদারি ছিল এডিসি এলাকায়৷ সরকারি অফিসের তালার সঙ্গে তিন দলের দলীয় পতাকা ঝুলিয়ে দেন বন্ধ সমর্থকরা৷ বিভিন্ন বিদ্যালয় সহ অফিসগুলিতে কর্মচারীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি৷ বাধ্য হয়ে এডিসি এলাকার অফিস কর্মচারীরা ঘরে ফিরে যান৷ কিছু কিছু জায়গায় অফিস কাছারি এবং সুকল খোলা রাখাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে৷ এদিনের বন্ধকে ঘিরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বলে রাজ্য পুলিশের দাবি৷ পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে এডিসি এলাকা বনধের কারণে সমস্ত ট্রেন বাতিল করে দেয়৷ সকালের ধর্মনগর -আগরতলা এবং সন্ধ্যার আগরতলা-ধর্মনগর, দুপুরের ধর্মনগর-আগরতলা প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়৷ অপরদিকে শিলচর-আগরতলা আপ এবং আগরতলা -শিলচর ডাউন ট্রেন বাতিল করা হয়৷ সকালে আগরতলা-উদয়পুরের মধ্যে ট্রেনও বাতিল করা হয়৷ তবে, সন্ধ্যায় আগরতলা-উদয়পুর এবং আগরতলা-উদয়পুর ট্রেন চলেছে বলে জনৈক রেলওয়ে আধিকারিক জানিয়েছেন৷
এদিনের বন্ধকে ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষের কারণে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ে রাখা হয়েছে এডিসি এলাকাগুলিকে৷ রাতেও ঝামেলা হতে পারে আশঙ্কা করে এডিসি এলাকাগুলিতে মোতায়েন রয়েছে টিএসআর বাহিনী৷ পুলিশ জানিয়েছে, এখনো রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ তাই এডিসি এলাকাগুলিতে টিএসআর বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে৷ স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে বিশেষ টহলদারির ব্যবস্থা জারি রাখা হয়েছে৷ পাশাপাশি থানাগুলিকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পুলিশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *