নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জানুয়ারি৷৷ শিল্প নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই রাজ্য সরকারের৷ তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে৷ পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিকে নিয়ে শিলংয়ে দুদিন ব্যাপী ইনভেস্টার সামিট শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে৷ কিন্তু এই সামিটে রাজ্যের কোন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন না৷ কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি আগামীকাল এই সামিটের উদ্বোধন করবেন৷
ইনভেস্টার সামিট’র মূল লক্ষ্য পূর্বোত্তরের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগ টেনে আনা৷ সেই লক্ষ্যে সারা দেশ থেকে বস্ত্র শিল্পের সাথে যুক্ত বিনিয়োগকারীদের মোট ৪০০ প্রতিনিধি এই সামিটে অংশ নিচ্ছেন৷ মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ সহ পূর্বোত্তরের অন্যান্য রাজ্যরা এই সামিটে অংশ নিচ্ছেন৷ কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও ত্রিপুরা এই সামিটে অংশ নিচ্ছে না৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, একইসময়ে রাজ্যে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য মেলা৷ ফলে, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সহ দপ্তরের কর্তারা এই মেলা নিয়ে ব্যস্ত৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও সরকারি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় ইনভেস্টার সামিটে যেতে পারছেন না৷ ফলে, গুরুত্বপূর্ণ এই সামিটে ত্রিপুরার যোগদান সম্ভব হচ্ছে না৷
এই সামিটে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ড অরবিন্দ পানাগরিয়া, ডোনারমন্ত্রী ডা জিতেন্দ্র সিং, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় তামতা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ডা মুকুল সাংমা, মিজোরামের শিল্পমন্ত্রী এইচ রুহলোনা এবং অরুণাচলের শিল্পমন্ত্রী তামিও তাগা প্রমুখ৷ ২০১৬ সালে ১০ নভেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বস্ত্র মন্ত্রকের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যের জাতীয় কনফারেন্সে এই সামিটের ঘোষণা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি৷ এক্ট ইস্ট পলিসিকে আরো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগপতিদের নজর এই অঞ্চলের দিকে আনতেই এই সামিটের আয়োজন করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের মতে, এই সামিটে পূর্বোত্তরের বিভিন্ন রাজ্যে বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখা দেবে৷ কারণ, পূর্বোত্তরে বিনিয়োগ করে উপকৃত হবে এসমস্ত বিষয় বিনিয়োগকারীদের কাছে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হবে৷ তাছাড়াও পূর্বোত্তরের বিভিন্ন রাজ্য ও বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে প্রায় ১৫টি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে এই সামিটে৷ বস্ত্র উৎপাদনের মাধ্যমে বিরাট শিল্প পূর্বোত্তরে গড়ে তোলা সম্ভব সেই বিষয়টিই এই সামিটে মূল আলোচ্য হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ তাতে ধারণা করা হচ্ছে, এই অঞ্চলে বিরাট বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে৷ তাতে, একদিকে যেমন এই অঞ্চলের আর্থিক গতি বাড়বে, অন্যদিকে বেকারত্ব সমসা অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রক৷ বস্ত্র শিল্পকে এই অঞ্চলে বিরাট আকারে স্থাপন সম্ভব এর পেছনে মন্ত্রকের যুক্তি, পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিতে বস্ত্র এবং হস্ততাঁত শিল্পে বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই সামিটটি বস্ত্র মন্ত্রকের সহায়তায় ডোনার মন্ত্রক এবং ফিকি ও সিআইআইএ’র যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷
কিন্তু এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামিটে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে রাজ্যের অনীহা শিল্প সম্ভাবনাকে আরো পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন শিল্প মহল৷ এর আগেও রাজ্যে ফিকির সামিটে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন শিল্পপতিদের লালগালিচা বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে না৷ যেহেতু তারা মুনাফা কামাতে ব্যবসা শুরু করেন, তাই রাজ্য সরকারের সামর্থ্যের মধ্যে যতটা সহায়তা দেওয়া সম্ভব ততটাই তাদের জন্য করা হবে৷ স্বাভাবিকভাবেই শিল্প নিয়ে রাজ্যের অনাগ্রহ আবারও প্রমাণিত হল৷