১৩১১টি বাড়িঘর তছনছ, বহু মানুষ শিবিরে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের অনুদান ঘোষণা, এলাকা সফর করলেন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজস্বমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জানুয়ারি৷৷ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির সরকারি হিসেব মোতাবেক পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক

কমলপুর মহকুমায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি - তথ্য দপ্তর৷
কমলপুর মহকুমায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি – তথ্য দপ্তর৷

বলেই মনে হচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত সরকারি মতে ১৩১১টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ ধলাই ও ঊনকোটি জেলা পরিদর্শন করে এসে বুধবার মহাকরণে রাজস্বমন্ত্রী বাদল চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরেছেন৷ তবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ গতকাল ভূমিকম্পে একজনের মৃত্যু ও তিনজন আহত হয়েছিলেন বলে রাজ্য সরকারের তরফে জানা গিয়েছিল৷ আজ রাজস্বমন্ত্রী জানান, মোট সাতজন আহত হয়েছেন৷ এদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ এদিন তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ মায়াছড়িতে গতকাল ভূমিকম্পের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কমলিনী কন্দ’র মৃত্যু হয়েছে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মোতাবেক তাঁর পরিবারকে চার লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে রাজস্বমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ এছাড়া যাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকেও আর্থিক সহায়তা করা হবে৷ রাজস্বমন্ত্রী এদিন বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মোতাবেক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৯৫ হাজার ১০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হয়৷ যেহেতু সবকটি বাড়ি মাটি দিয়ে তৈরি সেক্ষেত্রে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তাদেরকেও কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মোতাবেকই আর্থিক সহায়তা করা হবে৷ কারণ মাটির ঘরে সামান্য ফাটল দেখা দিলেও সেই ঘর ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করতে হয়৷ তাই ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে সমহারেই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে৷ এদিকে, ভূমিকম্পে যারা আহত হয়েছেন তাদের ১২ হাজার ৭০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় স্কিম অনুসারে৷ তবে, কারোর চিকিৎসার ব্যয় ভার রাজ্য সরকার বহন করলে তাকে কোনরকম আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে না৷ এদিন তিনি জানিয়েছেন, প্রয়াত কমলিনী কন্দ’র পরিবারকে এদিন দশ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে৷
আজ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কমলপুর মহকুমার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিভিন্ন বাড়িঘর পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনকালে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী, রাজ্যের মুখ্যসচিব ওয়াই পি সিং প্রমুখ৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে মহকুমার দুর্গাচৌমুহনী ব্লকের অন্তর্গত ছোটসুরমা গ্রাম পঞ্চায়েতের হোমলেস কলোনিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য সদস্যাদের সঙ্গে কথা বলেন৷ সেখান থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত নোওয়াগাঁও জে বি স্কলে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরটিও পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রী শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের সাথে কথা বলেন৷ তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ব্লক এলাকার বালিগাঁও ও মায়াছড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলিও পরিদর্শন করেন৷ মায়াছড়ি গ্রাম পরিদর্শনকালে তিনি গতকালের ভূমিকম্পের সময় মৃতা কমলিনী কন্দের বাড়িতে যান এবং মৃতার আত্মীয়স্বজনের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেন৷ মহকুমা শাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে মৃতার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে৷
এদিকে, দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার গতকাল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কুমারঘাট মহকুমার পেঁচারথল ব্লকের মাছমারা তহশিলের শান্তিপুর এ ডি সি ভিলেজ পরিদর্শন করেন৷ বেলা সাড়ে বারোটায় মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় রাধানগরে আসাম রাইফেলসের হেলিপ্যাডে অবতরণের পর সোজা শান্তিপুরে চলে যান৷ তিনি সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন৷ সফরকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী, বিধায়ক সমীরণ মালাকার, মুখ্যসচিব ওয়াই পি সিং, জেলাশাসক প্রমথ রঞ্জন ভট্টাচার্য, জেলা পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিং, এস ডি এম জে ভি দোয়াতি সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ৷ মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসক ও মহকুমা শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পরে জেলাশাসক প্রমথ রঞ্জন ভট্টাচার্য, জেলা পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিং, এস ডি এম জে ভি দোয়াতি সহ জেলার পদস্থ কর্মকর্তাগণ স্থানীয় কাঞ্চনবাড়ি এলাকায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শস্য ও সবজিক্ষেত সহ মনু নদী সংলগ্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন৷
এদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় পাঁচটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঊনকোটি জেলায় ৫৬৬ টি বাড়ি আংশিক, ১৪০টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ২টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ধলাই জেলায় ৫৬৫ টি বাড়ি আংশিক, ১৫টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১১টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ পশ্চিম জেলায় ১টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এছাড়া খোয়াই জেলায় ৫টি এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ১টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিকে, ঊনকোটি ও ধলাই জেলায় শিবির করে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি পরিবারকে রাখা হয়েছে৷ জানা গেছে, ঊনকোটি জেলায় শিবিরে ১৮টি পরিবারকে রাখা হয়েছে৷ তাতে মোট জনসংখ্যা ৮০৷ ধলাই জেলার কমলপুরের নোয়াগাঁও শিবিরে ৯০জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ তাদেরকে ত্রাণ সামগ্রীও প্রদান করা হয়েছে৷
এদিকে, সরকারি অফিস কিংবা বিদ্যালয়গুলিতে ভূমিকম্পে বিশেষ কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঊনকোটি জেলায় সিঙ্গারবিল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বাউন্ডারি ওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, দক্ষিণ হীরাছড়া জেবি সুকলেও ভবন ও বাউন্ডারি ওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে৷ এছাড়া কৈলাসহরে বিভাগীয় অগ্ণি নির্বাপক দপ্তরের বাউন্ডারিওয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে৷ এদিন রাজস্বমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷