BRAKING NEWS

একইদিনে তিন মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু, সমাজ ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে

muder photoনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ ডিসেম্বর৷৷ আজকের সমাজ ব্যবস্থা রীতিমতো চ্যালেঞ্জর মুখে৷ চারিদিকে শুধুই সামাজিক অবক্ষয়৷ আর এর করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে একই দিনে রাজ্যে পৃথক স্থানে তিনজন মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায়৷ দুইজন মহিলা ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন৷ অপর আরেক জন মহিলা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভূগে আজ স্নান করতে গিয়ে মারা যান৷ জানা গেছে, ঐ মহিলাকে তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ রাখছিলেন না৷ আর এই কারণেই মানসিক অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন ঐ মহিলা৷
রাজধানী আগরতলা শহর এলাকার ধলেশ্বরের জেইল আশ্রম রোডে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ স্বাস্থ্য দপ্তরে কর্মরত এক মহিলা ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন৷ দিন দুপুরে পরিবারের লোকজনদের উপস্থিতি সত্ত্বেও নিজ ঘরেই কিভাবে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঁকিঝঁুকি দিচ্ছে৷ ঐ মহিলার নাম পিউ পাল৷ স্বামীর নাম সঞ্জিব শূর৷ পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটিটিভ৷ জানা যায়, পিউ পাল জিবি হাসপাতালে স্টাফ নার্স পদে কর্মরত৷ তাদের একটি সন্তানও রয়েছে৷ বেশ কিছুদিন ধরেই পারিবারিক ঝামেলা চলছিল৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে এরই জেরে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ শাশুড়ির ঘরে গিয়ে সিলিং ফ্যানে কাপড় বেঁধে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করে পিউ পাল নামে ঐ স্টাফ নার্স৷ কিছুক্ষণ বাদে বিষয়টি পরিবারের লোকজনদের নজরে আসে৷ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের জানানো হয়৷ খবর পাঠানো হয় পূর্ব মহিলা থানার পুলিশকে৷ পুলিশও ছুটে যায়৷ সেখান থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহটি উদ্ধার করে জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ মৃত মহিলার রেখে যাওয়া একটি সুইসাইড নোট ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে৷ এগুলো থেকে ঘটনার প্রকৃত তথ্য জানা যেতে পারে৷ তবে এবিষয়ে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনই মুখ খুলতে নারাজ৷ মৃতার শাশুড়ি এবং স্বামী দাবি করেছেন, স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরেই এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশ অবশ্য তদন্ত শুরু করেছে৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধলেশ্বর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷
সোনামুড়ার উত্তর নবদ্বীপ চন্দ্র নগরে একটি রাবার বাগান থেকে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ ঐ মহিলার নাম লিপি আখতার৷ মৃতার স্বামী ও শ্বশুর লোকজনদের দাবি গৃহবধূ ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে৷ কিন্তু এই ঘটনা ঘিরে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷ এটি পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এব্যাপারে সোনামুড়া থানায় মামলা গৃহীত হয়েছে৷পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ এটি আত্মহত্যা না খুন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোনামুড়া হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে৷ ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই এব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
এদিকে, খোয়াই থানাধীন পূর্ব গনকী গ্রাম পঞ্চায়েতে এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু৷ বৃহস্পতিবার সাত সকালে স্নান করতে গিয়ে ওই গৃহবধু দীর্ঘ সময় পরও ফিরে না আসায়, খোঁজ করতে গিয়ে ছড়ার জলে ছটপট করতে দেখা যায় মহিলাকে৷ মহিলাকে হাসপাতালমুখী করা হলেও কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ তবে মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্য গোটা এলাকায়৷ ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ৯টা নাগাদ পূর্ব গনকী গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা পুষ্পরানী দে (৩৩) স্নান করতে যান৷ কিন্তু দীর্ঘ সময় পরও তিনি ফিরে না আসায় শুরু হয় খোঁজাখুজি৷ পরে লালছড়া এলাকায় ছড়ার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায় উনাকে৷ ছড়ার ভেতর পরে ছটপট করছিলেন তিনি৷ সঙ্গে সঙ্গে অগ্ণিনির্বাপক দপ্তরে খবর দেওয়া হয়৷ দমকল কর্মীরা পৌছে পুষ্পরানী দে’কে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷ কিন্তু হাসপাতালে পৌছার আগে নাকি মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা৷ এদিকে মৃতার মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, গত এক বছর ধরে স্বামী প্রদীপ দে’র সাথে যোগাযোগ নেই পুষ্পরানীর৷ উনার দুই ছেলে৷ বড় ছেলের বয়স ১৫ বছর৷ সে শারীরিক প্রতিবন্ধী৷ দ্বিতীয় ছেলের বয়স ৭ বছর৷ স্বামীর সঙ্গে প্রায়শই নাকি ঝামেলা লেগেই থাকত৷ স্বামী প্রদীপ দে বিগত এক বছর যাবত কোন আর্থিক সাহায্যই নাকি করেনি৷ দুই ছেলে নাকি প্রায় মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন পুষ্পরানী৷ অন্যদিকে খোয়াই জেলা হাসপাতালে সেবক- সেবিকারা জানালেন, গত ৪-৫ দিন যাবত পুষ্পরানী দে খোয়াই জেলা হাসপাতালের সেবক-সেবিকারা জানালেন, গত ৪-৫ দিন যাবত পুষ্পরানী দে খোয়াই জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন৷ এই সময়ে উনার বাড়ি থেকে বা এলাকা থেকে কেউই খোঁজখবর করেনি৷ সেবক-সেবিকারা মিলেই ওষুধপত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল পুষ্পরানী দে’কে৷ গত পরশু দিনই খোয়াই জেলা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি৷ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কাটিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ছড়ার জলে স্নান করতে গিয়েছিলেন পুষ্পরানী৷ স্নান করতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরলেন না৷ এখন কি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেলেন নাকি অন্য কোন কারন উনার মৃত্যুর পেছনে দায়ী তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই খুলবে সব জট৷ কিন্তু এখন পুষ্পরানীর ১৫ বছর বয়সী বিকলাঙ্গ ছেলে ও ৭ বছরের ছোট্ট শিশুটির ভাগ্যের চাকা কোন দিকে মোড় নেবে? পুষ্পার বাপের বাড়িতেও দিন আনি দিন খাই অবস্থা৷ এখন স্থানীয় পঞ্চায়েত যদি উদ্যোগী হয়ে সরকারীভাবে এই দুটি অবোঝ শিশুর মাথার উপরের আকাশটাকে একটু রঙীন করার চেষ্টা করে তবে শুধু জীবন রক্ষাই নয়, দুটি অবোঝ শিশুর ভবিষ্যতটাও সুদৃঢ় হতো বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী৷ তাই এই বিপিএল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত ও রাজ্য সরকারের দৃষ্টি করেছেন এলাকার জনসাধারণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *