পেট্রোলে রেশনিং, দ্বিচক্র যানে দুইশ ও গাড়িতে পাঁচশ টাকার বেশি মিলবে না

ppetrolনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুলাই৷৷ রাজ্যে পেট্রোল বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করল রাজ্য সরকার৷ এখন থেকে প্রতিদিন দ্বিচক্রযানে ২০০ টাকা, পেট্রোল চালিত অটো রিক্সায় ৩০০ টাকা এবং পেট্রোল চালিত গাড়িতে ৫০০ টাকার পেট্রোল ঢোকানো যাবে৷ রবিবার দুপুরে মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্য, জনসংভরণ এবং ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী ভানুলাল সাহা এই সংবাদ জানিয়েছেন৷ পেট্রোল বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করা হলেও প্রতি সপ্তাহে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্র এই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ তবে, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারী বন্ধে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অবাক করার মতো৷ তাঁর বক্তব্য, কালোবাজারী বন্ধ হলে অন্য প্রতিক্রিয়াও হতে পারে৷ তিনি বলেন, অনেকে লাইনে দাঁড়াতে চান না৷ তাঁরা লাইনে দাঁড়ানোর বদলে বেশি টাকা দিয়ে পেট্রোল কিনতে ইচ্ছুক৷ এতে তিনি কালোবাজারীকে উৎসাহ দিচ্ছেন না বললেও, এটাকে পুরোপুরি বন্ধের ক্ষেত্রে প্রশাসন যে ধীর গতিতে চলতে চাইছে সে কথা জানিয়েছেন৷
মূলত, ৪৪ নং জাতীয় সড়কের আসাম অংশে যানবাহন চলাচলের ব্যাঘাত ঘটায় ত্রিপুরায় পেট্রোল আনার ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পেট্রোল বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করা হয়েছে৷ খাদ্য মন্ত্রী জানান, কিছুদিন যাবৎ আসামের লোয়ারপোয়া এলাকায় ৪৪ নং জাতীয় সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার ফলে রাজ্যে পেট্রোজাত পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে প্রবল অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিদিনই কিছু কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং পেট্রোপণ্যবাহী ট্রাক রাজ্যে প্রবেশ করছে৷ যার ফলে খোলাবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগান স্বাভাবিক থাকলেও পেট্রোলিয়ামের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক যোগান নিশ্চিত করতে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ রাজ্যে পেট্রোলের দৈনিক চাহিদা যেখানে ১৫-১৬ ট্রাক লোড সে জায়গায় গত ৭-১০ দিন ধরে দৈনিক গড়ে মাত্র ১০ ট্রাক লোড পেট্রোল রাজ্যে আসছে, যা চাহিদার চেয়ে যথেষ্ট কম৷ তবে, ডিজেল এবং কেরোসিনের ক্ষেত্রে সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে৷ যার ফলে বিশেষ কোন সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি এখনও হতে হয়নি৷
খাদ্যমন্ত্রী জানান, ১৭টি পেট্রোলবাহী ট্যাঙ্কার ধর্মনগর তেল ডিপো থেকে বিভিন্ন এজেন্সির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে৷ যার মধ্যে ৬টি আগরতলার জন্য৷ এছাড়াও মোট ২১টি ডিজেলবাহী ট্যাঙ্কার থেকে ডিজেল গতকাল সরবরাহ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ১০টি ছিল শুধুমাত্র আগরতলার এজেন্সিগুলির জন্য৷ খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে অনেকেই পেট্রোল প্রয়োজনের তুলনায় বেশী মজুত করে রাখছেন৷ তাই অবস্থা মোকাবেলার জন্য বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় পেট্রোল বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণবিধি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে সঙ্কটের বিষয়টি প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ৪৪ নং জাতীয় সড়ককে অবিলম্বে স্বাভাবিক যান চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক, সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থা এবং আসা সরকারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে আশা করা হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে৷ তিনি বলেন, জাতীয় সড়কের এই বিপর্যস্ত অংশ জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য যে সংস্থাটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের প্রতিনিধিরা গতকাল ধর্মনগরে বৈঠক করেন৷ এই বৈঠকে তারা জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে সড়কের বিপর্যস্ত অংশ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে৷ খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত বর্ষায়ও জাতীয় সড়কের এই অংশে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে৷ আসাম সরকারের পূর্ত দপ্তর এরপর রাস্তাটি সংস্কারের যথাযথভাবে গুরুত্ব দিলে এবার রাস্তার এই হাল হতনা৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকারের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি এই ৷ তবে পস্থিতির কারণে রাজ্য সরকার নিরূপায়৷ আই ও সি এল কর্ত-পক্ষ শিলং থেকে ডাউকি দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে ধর্মনগরের রাঘনা সীমান্ত দিয়ে পেট্রোপণ্য আনার একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টির সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার জড়িত রয়েছে৷ তাই এনিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷
খাদ্যমন্ত্রী শ্রী সাহা জানান, পেট্রোল আনার ক্ষেত্র সমস্যা হলেও রাজ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমূহের কোন ঘাটতি নেই৷ এই মূহুর্তে রাজ্যে ৫৪ দিনের চাল মজুত রয়েছে৷ লবণ ১৩ দিনের এবং চিনি মজুত রয়েছে ২৬ দিনের৷ ৯০ টি এল পি জি বুলেট বিশালগড়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *