BRAKING NEWS

বুজরুকির ফাঁদে পড়ে দুই মহিলা খুন উদয়পুরে, পুকুরের জলে মিলল মৃতদেহ

muder photoনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মে৷৷ বুজরুকির ফাঁদে পা দিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হলেন দুই মহিলা৷ এই ঘটনায় একজনকে আটক করেছে৷ মূল অভিযুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হওয়ায় তাকে পুলিশ নজরবন্দী করে রেখেছে৷ জানা গিয়েছে, আর কে পুর থানার অধীন চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এক নং ফুলকুমারী বাড়ির বাসিন্দা মঞ্জু শুক্লদাস (৪২) এবং দেবী দাস (৩৯) নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার তাদের মৃতদেহ পুকুরের জলে ভেসে থাকতে দেখা যায়৷ ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শান্তা দেবনাথ মজুমদার মনসা দেবীর বর পেয়েছেন বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার৷ বহু মানুষ তার কাছে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খঁুজে পেয়েছেন বলে দাবি৷ গত তিন চার বছর ধরেই শান্তাদেবী এই কাজ করে আসছেন৷ তাকে মদত দিচ্ছেন স্বামী বিপ্লব মজুমদার৷ গত রবিবার এক নং ফুলকুমারীবাড়ির বাসিন্দা মঞ্জু শুক্লদাস তার ছেলেকে নিয়ে শান্তাদেবীর বাড়িতে যান৷ তিনি মঞ্জুদেবীর ছেলেকে ঝাঁরফঁুক দিয়ে তাকে ভুতে ভর করেছে বলে জানান৷ এই কথা শুনে মা ও ছেলে রাতে শান্তাদেবীর বাড়িতেই থেকে যান৷ পরদিন বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী দেবী দাসকে ঘটনাটি জানান৷ গত মঙ্গলবার মঞ্জু শুক্লদাস ও বেবী দাস দুজনই শান্তাদেবীর বাড়িতে যান সকাল নয়টা নাগাদ৷ সেখানে গিয়ে দেখেন শান্তাদেবীর ভাসুর জয়গোপাল মজুমদার তার ছেলে ও শাশুড়িকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখে৷ তাদের চোখও বাধা ছিল৷ হঠাৎ এই দৃশ্য দেখে মঞ্জু শুক্লদাস এবং বেবী দাস হতবাক হয়ে পড়েন৷ সঙ্গে সঙ্গে শান্তাদেবী ও তার স্বামী ছুটে এসে তাদের দুজনকে বেধে পাশের পুুকুরে নিয়ে যান৷ এরপর থেকে তারা নিখোঁজ বলে জানান বেবী দাসের স্বামী দুলাল দাস৷
ঐদিন সকালে দুজন মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ণ হয়ে পড়েন৷ বুধবার সকালে মঞ্জু শুক্লদাসের ছেলে এবং বেবী দাসের স্বামী শান্তা মজুমদারের বাড়িতে যান৷ সেখানে গিয়ে কাউকে খঁুজে না পেলেও বাড়িতে তালা লাগানো দেখতে পান৷ তাতে সন্দেহ বশতঃ শান্ত মজুমদারের প্রতিবেশীর বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করেন৷ প্রতিবেশীরা জানান মঙ্গলবার এই বাড়িতে তুমুল হৈ হট্টগোল হয়েছে৷ শান্ত মজুমদারের বড় ভাই লক্ষ্মণ দেবনাথ মঙ্গলবার তাদের বাড়িতে এসে বোন এবং বোনের ভাসুরকে বেধরক মারধর করেছেন৷ তাতে দুজনই গুরুতর আহত অবস্থায় ত্রিপুরা সুন্দরী জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ এই খবর পেয়ে মঞ্জু শুক্লদাসের ছেলে এবং বেবী দাসের স্বামী হাসপাতালে ছুটে যান৷ কিন্তু, সেখানে গিয়ে কাউকেই খঁুজে পাননি৷ অবশেষে বিষয়টি আর কে পুর থানায় জানানো হয়৷
বৃহস্পতিবার সকালে দুই পরিবারের সদস্যরা এক নং ফুলকুমারী পঞ্চায়েতের প্রধানকে নিয়ে শান্ত মজুমদারের বাড়িতে যান৷ সেখানে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করেন পুকুরের জলে দুজন মহিলার মৃতদেহ ভাসছে৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় আর কে পুর থানায়৷ পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে লক্ষ্য করেন দুই মহিলার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে৷ শুধু তাই নয় তাদের পিঠে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ণ হয়েছে৷ তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে মঞ্জু শুক্লদাস এবং বেবী দাসকে নৃশংসভাবে খুন করে পুকুরের জলের নীচে কাদায় পঁুতে রাখা হয়েছিল৷ অনুমান করা হচ্ছে প্রথমে ঐ দুই মহিলার মৃতদেহ ঘরের ভেতরে গর্ত খুড়ে পঁুতে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ কিন্তু, জায়গার অভাবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তাদের পুকুরের জলের নীচে কাঁদায় পঁুতে রাখা হয়৷
পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঐ পুকুরে ডুবুরী নামায়৷ কিন্তু পুকুরের জলে আর কিছু পাওয়া যায়নি৷ পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও নিয়ে আসা হয়েছিল৷ কিন্তু প্রশিক্ষিত কুকুরও কোন ক্লু দিতে পারেনি৷ এদিকে, গত মঙ্গলবার সচিরাণী দেবনাথ নামে এক মহিলাকেও মারধর করা হয়েছিল৷ তাকে বিবস্ত্র করে পুকুরের জলে নামিয়ে ঝাঁর ফঁুকের নামে বেধরক মারধর করা হয়েছে৷ কিন্তু, ঐ মহিলার বাবা বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার উপ প্রধান অরুণবাবুকে খবর দিলে তিনি থানায় যান৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ঐ মহিলাকে পুকুর থেকে তুলে আনা হয়৷ ফলে পুলিশ গিয়ে ঐ মহিলাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও কোনও অভিযোগ না হওয়ায় শান্তা মজুমদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে হয়তো বা মঞ্জু শুক্লদাস কিংবা বেবী দাসের মধ্যে কারো সাথে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে৷ তখন তাদের তরফে আপত্তি জানানো হয়েছিল৷ যার কারনে তাদেরকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান৷
এদিকে, এই ঘটনায় শান্তা মজুমদারের স্বামী বিপ্লব মজুমদারকে পুলিশ আটক করেছে৷ মূল অভিযুক্ত যেহেতু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাই পুলিশ তাকে নজরবন্দী করে রেখেছে৷ এদিন, ঘটনাস্থলে গোমতী জেলার পুলিশ সুপার সরস্বতী আর, এসডিপিও রতন কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তপন দেববর্মা, আর কে পুর থানার ওসি এবং ডিসিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ দুই মহিলার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে৷ থমথমে পরিস্থিতির মুখে সেখানে পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে৷ এলাকাবাসীর মতে মঙ্গলবারই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দুইজন মহিলাকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হতো না৷ এদিন, ঐ দুই মহিলার মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷
আশ্চর্যের বিষয় মূল অভিযুক্ত শান্তা মজুমদার উচ্চশিক্ষিত৷ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ অর্জন করার পর তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং পরে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন৷ কিন্তু, এত শিক্ষিত হওয়ার পরও বুজরুকির পেশায় কিভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন শান্তা মজুমদার তা নিয়েই এলাকাজুড়ে ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *