BRAKING NEWS

পাসপোর্টের জন্য চিকিৎসকের সই জাল করে বিদেশে পাড়ি দিল নার্স

india passportনিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ২২ মে৷৷ সারা রাজ্যই জাল চক্রে ছেয়ে গেছে৷ আধারকার্ড, পেনকার্ড, পিআরটিসি থেকে শুরু করে পাসপোর্ট জাল চক্র রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে৷ সেই সাথে রাজ্যের সাথে বর্হিরাজ্যের একটা যোগসূত্র বজায় রেখে চলেছে এই জাল চক্রটি৷ এবং দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ জাল চক্রের পেছনেই রাজ্যের অসাধু কতিপয় সরকারি কর্মচারী এর সাথে যুক্ত থাকলেও বারে বারেই পার পেয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু এবার খুদ স্বাস্থ্য দপ্তরেই মিলল জাল চক্রের সন্ধান৷
খোয়াইয়ের রতনপুরস্থিত দশরথ দেব মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন খোয়াই জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা অরিজিৎ সিনহা৷ অভিযোগ এই নার্স ডা অরিজিৎ সিনহার সই নকল করার চেষ্টা করে স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মা ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের নাম ব্যবহার করে এই জালিয়াতি কান্ড সংগঠিত করেছে৷ রেজিনা দেববর্মার নামে যে জাল আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট কলকাতা পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছায় তার লেটার নং— এফ২(১-৩)-ডিএইচএস/ইএসটিটি/ ২০১৫৷ ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য সর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্তমানে বহাল তবিয়েতে রয়েছেন ঐ সেবিকা৷ সূত্রের খবর রতনপুর দশরথ দেব মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টার্ফ নার্স রেজিনা দেববর্মা বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন৷
ঘটনার বিবরণে জানা যায় ডা অরিজিৎ সিনহা অভিযোগ করেন জানা ১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস, কলকাতা থেকে একখানা চিঠি ইস্যু হয়ে ১১ মে ২০১৬ ডা অরিজিৎ সিনহার কাছে এসে পৌঁছায়৷ যার লেটার নং-আইসিভি/৩০৩২৫৫০০৩/১৫ এবং ফাইলনং -সিএ২০৬৮৯৮১৩৬৯৩১৫৷ এি চিঠি মূলত পরিচয় সনদপত্র নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত বিষয় ছিল৷ তবে কেন যেটা কিনা ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে ফেরতযোগ্য, এমন গুরুত্বপূর্ণ চিঠি কলকাতা থেকে খোয়াইতে পৌঁছতে ৬ মাস কেটে গেল সে বিষয়েও যথেষ্ট প্রশ্ণ থেকে যাচ্ছে৷ এদিকে ডা বাবু অভিযোগ করে জানালেন কলকাতা পাসপোর্ট অফিস থেকে এই কনফারমেশন লেটারটি পাওয়ার পর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে উনার উপর৷ চিঠিতে লেখা ছিল ২৭-১১-২০১৫ তে খোয়াইয়ের রতনপুর দশরথ দেব মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মার আইডেন্ডটিটি সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন ডা অরিজিৎ সিনহা৷ রেজিনা দেববর্মার স্বামীর নাম প্রদীপ দেববর্মা৷ রেজিনার আইডি কার্ড নম্বার ৫৬৯০০৷ কলকাতা পাসপোর্ট অফিসে এবিষয়ে পরিচয় সনদপত্র নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত যে আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে এবং সাথে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তা জাল৷ কারণ ডা অরিজিৎ সিনহা এমন কোন সার্টিফিকেট ইস্যু করেননি৷ এবং সে সার্টিফিকেট যে সই রয়েছে ডা বাবুর নামে তাও ডা অরিজিৎ সিনহার নয়৷ জাল সই করে রেজিনা দেববর্মাই একান্ড ঘটিয়েছে৷ এমনকি স্বাস্থ্য দপ্তরের প্যাড ব্যবহার করে সে চিঠিতে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে তাও খোয়াইয়ের নয়, আগরতলার৷ তবে চিঠিতে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা আবার খোয়াই জেলা হাসপাতালেরই৷ কিন্তু ডাক্তারবাবুর সই জাল ছিল ঐ চিঠিতে৷ প্রশ্ণ উঠছে ডাক্তারবাবু এখনো কোনো কনফারমেশন চিঠি পাঠানটি কলকাতা পাসপোর্ট অফিসে৷ তবে কি করে রেজিনা দেববর্মার পাসপোর্ট ইস্যু হল? তবে কি মস্ত বড় একটা চক্র এক্ষেত্রে কাজ করছে রেজিনা দেববর্মাকে সাহায্য করার জন্য৷ কারণ ১০ দিনের মধ্যে কনফারমেশন লেটার না পেলে কলকাতা পাসপোর্ট অফিসের তো পাসপোর্ট ইস্যু করার কথা নয়৷ তাহলে কি কলকাতা অফিসে কোন কনফারমেশন লেটার পৌঁছে ছিল? যদি কোন লেটার পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছে থাকে তবে কি জালিয়াতি করেই কনফারমেশন লেটারটিও রেজিনা দেববর্মা ও তার জাল চক্রই ঘটিয়েছে সে কান্ড? গুরুতর অভিযোগ ও বিরাট প্রশ্ণ এক্ষেত্রে পাসপোর্ট জাল চক্রের দিকেই ইশারা করছে৷
গত ১১ মে ২০১৬ তারিখে কলকাতা পাসপোর্ট অফিস থেকে যে কনফারমেশন চাওয়া হয়েছে সে চিঠি পেয়েই চোখ চড়ক গাছ হয় ডাক্তারবাবুর৷ তিনি সঙ্গে সঙ্গে খোয়াই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের গোচরে আনেন বিষয়টি৷ পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরে এবং সিএমও’র দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন৷ সে সাথে ডাক্তার অরিজিৎ সিনহা উনার স্বাক্ষরের একটি নমুনাও এর সাাথে জুড়ে দিয়েছেন৷ যাতে আগামী দিনে তদন্ত করতে সুবিধা হয়৷ ডাক্তার অরিজিৎ সিনহার এই চিঠি ১২ মে ২০১৬ তারিখে ইস্যু হয়৷
একজন স্টাফ নার্সের এমন বিরল কীর্তি প্রকাশ্যে আসতেই খোয়াইয়ের চিকিৎসকদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ এমন মস্ত বড় জালিয়াতি করে বহাল তবিয়তে বিদেশ যাত্রা করছেন সে সেবিকা৷ এমনই গুঞ্জন রয়েছে৷ তবে প্রশ্ণ উঠছে স্পিড পোস্টের বিলম্ব নিয়েও৷ কারণ আইডেন্ডটিটি সার্টিফিকেট বা পরিচয় সনদপত্র নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত চিঠির জবাব দিতে হয় ১০ দিনের মধ্যে৷ কিন্তু কলকাতা পাসপোর্ট অফিস থেকে ১লা ডিসেম্বর ২০১৫-তে ইস্যু হয়ে সে চিঠি খোয়াই জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা অরিজিৎ সিনহার হাতে এসে পৌঁছায় ১১ মে ২০১৬-তে ৷ মানে মাঝে ৫ মাস ১১ দিন কেটে যাবার পর কলকাতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এসে পৌঁছানোয় স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মার কোন কারসাজি রয়েছে কিনা তাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ যিনি এত বড় জালিয়াতি করতে পারেন, তিনি এটাও করতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *