লিডারশিপ ক্যাম্পে দুই বিধায়ককে টেনে নেয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জে সুদীপ গোষ্ঠী, বিদ্রোহীদের বাতিলের খাতায় তুলে রাজ্যে কংগ্রেসের খোলনলচে পাল্টাচ্ছেন বীরজিৎ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ মে৷৷ প্রদেশ কংগ্রেসের লিডারশিপ ক্যাম্পের মঞ্চে বীরজিৎ সিনহা-গোপাল রায়দের পাশাপাশি

শনিবার থেকে আগরতলায় দশরথ দেব স্মৃতি অডিটরিয়ামে শুরু হয়েছে লিডারশীপ ট্রেনিং এবং রিসার্চ প্রোগ্রাম৷ ছবি নিজস্ব৷
শনিবার থেকে আগরতলায় দশরথ দেব স্মৃতি অডিটরিয়ামে শুরু হয়েছে লিডারশীপ ট্রেনিং এবং রিসার্চ প্রোগ্রাম৷ ছবি নিজস্ব৷

জীতেন সরকার ও দীলিপ সরকারকেও দেখা গিয়েছে৷ ফলে, সুদীপ রায় বর্মনের কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে ইস্তফার মাধ্যমে বিদ্রোহ যেভাবে গোটা রাজ্যে দাউ দাউ করে জ্বলছিল তাতে এক মঞ্চে জীতেন- দীলিপদের উপস্থিত করে কিছুটা জল ঢেলে দিয়েছেন পিসিসি সভাপতি৷ শনিবার লিডারশিপ ক্যাম্প শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বীরজিৎ সিনহার দাবি, রবিবার এই শিবিরে কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে আসবেন বিধায়ক রতন লাল নাথও৷ তাতে কংগ্রেস ভেঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্মন গোষ্ঠী কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে৷ এদিন, পিসিসি সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যাদের প্রয়োজন রয়েছে তাদেরকেই এই শিবিরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ তাতে কংগ্রেসের বাকি পাঁচ বিধায়ক যাদের এই শিবিরে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না তাদেরকে কার্য্যত বাতিলের খাতায় তুলে রেখেছেন পিসিসি সভাপতি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷
[vsw id=”XPy0Z3ui0pQ” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]দল দূর্বল হয়েছে, সেই কথাও পিসিসি সভাপতি অকপটে স্বীকার করেছেন৷ তবে বিদ্রোহীরা তাদের দূর্বলতা ঢাকতে হাইকমান্ডকে দোষারোপ করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য দল বিধায়ক নির্ভর নয়৷ দলই বিধায়ক তৈরী করে৷ পিসিসি সভাপতির এই বক্তব্যে মনে করা হচ্ছে, রাজ্যে কংগ্রেস শিবিরে যে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে তা কোন মতেই বরদাস্ত করা হবে না৷ আগামী দিনের জন্য তৈরী থাকতে হুঙ্কার দিয়ে পিসিসি সভাপতির দাবি, কংগ্রেসকে মজবুত করা এবং কর্মী সমর্থকদের দলমুখী করাই এখন মূল লক্ষ্য৷ দল দূর্বল হওয়ার পিছনে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় পিসিসি সভাপতি তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত কংগ্রেস এরাজ্যে কর্মসূচীহীন হয়ে পড়েছে৷ তাতে দল জনসংযোগহীন হয়েছে৷ কেবল সাংবাদিক সম্মেলন করে এবং বিধানসভার চিৎকার চেচামেচি করেই আন্দোলন স্থিমিত হয়ে যাচ্ছে৷ এখন থেকে দলের আদর্শ নতুন করে প্রচার করার সময় এসেছে বলে তিনি দাবি করেন৷
এদিন, পিসিসি সভাপতি যেভাবে দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচী নিয়ে আত্মপ্রত্যয় জাহির করেন তাতে সুদীপ বর্মনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ দল সুদীপ বর্মনকে সাময়িক বহিস্কার করেছে, ফলে তিনি অনায়াসে দল ছেড়ে অন্য যেকোন দলে যোগ দিতে পারেন৷ তাতে বিধায়ক পদ বাতিল হবে না৷ কিন্তু, তাঁর সহযোগি বিদ্রোহীদের উপর শাস্তির খড়গ ঝুলিয়ে রেখেছেন পিসিসি সভাপতি৷ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানালেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেননি তিনি৷ সেক্ষেত্রে দল ছাড়ার সাহস দেখাতে পারছেন না সুদীপ অনুগামী বাকি চার বিধায়ক৷ আজ লিডারশিপ ক্যাম্পে জীতেন সরকার এবং দীলিপ সরকার যোগ দিয়ে তাঁরা কংগ্রেসেই আছেন বলে পিসিসি সভাপতির আস্থা অর্জন করে নিয়েছেন৷ সেক্ষেত্রে আশিষ সাহা, দিবা চন্দ্র রাঙ্খল, প্রণজিৎ সিংহ রায় এবং বিশ্ববন্ধু সেনদের দিশেহারা অবস্থা৷ ন্যুনতম ছয় বিধায়ক একসাথে হলেই দলত্যাগ করলেও বিধায়ক পদ বহাল থাকবে৷ সেই উদ্দেশ্য এক প্রকার ভেস্তে দিতে আপাতত সফল হয়েছেন পিসিসি সভাপতি, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷ ফলে, আগামী দিনে বিদ্রোহীদের পরিণতি কী হবে তা আগাম অনুমান করা মুশকিল৷
এদিকে, সংগঠনের অন্য বিদ্রোহীদেরও কড়া হাতে দমন করার কৌশল নিয়েছেন পিসিসি সভাপতি৷ তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেসের অন্যান্য সমস্ত শাখা সংগঠনের খোলনলচে বদলে ফেলা হবে৷ ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে এবং রবিবার এই লিডারশিপ ক্যাম্পের মঞ্চ থেকেই সমস্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে৷
তেলিয়ামুড়া সংযোজন ঃ একদিকে দলের বিদ্রোহীদের দমনে পিসিসি সভাপতি রণকৌশল চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্যদিকে দলের দুই বিধায়কসহ তেলিয়ামুড়ার তিনটি বিধানসভার অন্তর্গত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বসহ বেশ কিছু কর্মী সমর্থকরা শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস দল ত্যাগ করে তৃণমূলের পতাকা তুলে সামিল হওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন৷ এমনটাই অভাষ পাওয়া গেল তেলিয়ামুড়ায় এক সভা করতে গিয়ে বিধায়ক আশিষ সাহার বক্তব্য থেকে৷ শনিবার দুপুর ১১টায় তেলিয়ামুড়ার কবি নজুরুল বিদ্যাভবনের হলে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব ও কর্মীদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সভায় উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস দলের বিধায়ক আশিষ সাহা, প্রাক্তন বিধায়ক অশোক কুমার বৈদ্য, বিধায়ক দিবাচন্দ্র রাংখল, কংগ্রেসের এস সি কমিটির রাজ্য নেতৃত্ব তেলিয়ামুড়া ব্লক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি আশিষ দেবনাথ সহ সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃত্ব ও কর্মীরা৷ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক আশিষ সাহা বিগত দিনের কংগ্রেস হয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন৷ বর্তমানে সিপিআইএম-কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে জোটকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না৷ এমনকি হাইকমান্ড ও রাহুল গান্ধীকে সিপিআইএম এর সাথে একমঞ্চে ভাষণ রাখা ও সিপিআই এম এর পক্ষে ভোট প্রার্থনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের তুলোধূনো করেন৷ তবে তেলিয়ামুড়া তিনটি বিধানসভার কংগ্রেস নেতৃত্বরা দিশেহারা কারণ তারা মনস্থির করতে পারছেন না কোন পথে হাটবেন৷ এনিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই জল ঘোলা হতে থাকে৷ উপায়ন্তর না দেখে দুই বিধায়কের উপস্থিতিতে বিজেপি, সিপিআইএম ও কংগ্রেসের বিকল্প দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের দিদিকেই তাদের পছন্দ, এমনই অভিমত ব্যাক্ত করেন ভাষন রাখতে দিয়ে বিধায়ক আশিষ সাহা৷ এনিয়ে তেলিয়ামুড়ার কংগ্রেস নেতৃত্ব ও কর্মীদের মতামতও শুনেন৷ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন আর মাত্র দেড় বছর৷ এরই মধ্যে সিপিআইএম এর বিকল্প শক্তি হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসকেই বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশী৷ তবে তেলিয়ামুড়া তিন বিধানসভার কিছু নেতৃত্ব ও কর্মীরা তৃণমূলের দিকে যেতে চাইলেও একটা শ্রেনী তৃণমূলে যেতে চাইছেনা বলে সূত্রের খবর৷