BRAKING NEWS

কংগ্রেস ভবনে ভাঙচুর, প্রদেশ সভাপতিকে ঘেরাও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সুদীপ সহ কংগ্রেস থেকে বহিসৃকত ১৫

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ মে৷৷ প্রত্যাশিতভাবেই কংগ্রেস থেকে সুদীপ রায় বর্মণকে বহিষ্কার করা হল৷ আজ কংগ্রেসের

সুদীপ বর্মন সহ যুব কংগ্রেসের ১৪ জনকে বহিস্কারের এক দল বিক্ষোভকারী প্রদেশ কংগ্রেস সদর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়৷ নিজস্ব ছবি৷
সুদীপ বর্মন সহ যুব কংগ্রেসের ১৪ জনকে বহিস্কারের এক দল বিক্ষোভকারী প্রদেশ কংগ্রেস সদর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়৷ নিজস্ব ছবি৷

পূর্বোত্তরের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ভি নারায়ণস্বামী এক পত্রে সুদীপ বর্মণকে কংগ্রেস হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন৷ বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আজ কংগ্রেস ভবনে ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের শীর্ষ নেত্রীর কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানান৷ দলের অন্যান্য যারা বিদ্রোহী তাদের বিরুদ্ধেও পিসিসি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে বীরজিৎবাবু ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ সুদীপ বর্মণের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রদেশ কংগ্রেস ভবন কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়৷ একদল বিক্ষোভকারী আজ বিকেলে কংগ্রেস ভবনে ভাঙচুর চালায় এবং প্রদেশ সভাপতি বীরজিৎ সিনহাকে ঘেরাও করে৷ বিক্ষোভকারীদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী আহতও হয়েছেন৷ ঘটনার অন্তত দেড় ঘন্টা পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে অংশ নেয়৷ [vsw id=”LvsktQB2lUg” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরে চাঞ্চল্য দেখা দেয়৷ সুদীপ বর্মণ ছাড়াও আজ যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে সেই তালিকায় রয়েছেন যুব কংগ্রেস প্রাক্তন সভাপতি সুশান্ত চৌধুরী সহ আরো ১৩ জন৷ ত্রিপুরায় কংগ্রেসের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম একজন দলীয় বিধায়ককে দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হল৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট গঠন দলের বহু কর্মী সমর্থক তা মেনে নিতে পারেননি৷
বিরোধী দলনেতার পদ থেকে পদত্যাগের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন সুদীপ রায় বর্মণ৷ একে একে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে গোটা রাজ্যে৷ প্রদেশ কংগ্রেস কার্যকরী সভাপতি এবং যুব কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিধায়ক আশিস কুমার সাহা এবং সুশান্ত চৌধুরী৷ এরপরই থেমে যায়নি বিদ্রোহ৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, ব্লক যুব কংগ্রেস সভাপতি, সহ সভাপতিরা একে একে পদত্যাগ করতে শুরু করেন৷ শুধু তাই নয়, সুদীপ রায় বর্মণের সুরে কংগ্রেস হাইকমান্ডের প্রতি বিষোদগারও জাহির করতে থাকে৷ এরই মাঝে হাইকমান্ড সুদীপ রায় বর্মণকে দলবিরোধী বক্তব্যের জের শোকজ নোটিশ পাঠায়৷ এবং ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়৷ সে মোতাবেক সুদীপবাবু হাইকমান্ডকে চিঠি পাঠিয়ে নোটিশের জবাব দেন৷ তাতেও রাজ্যে কংগ্রেসের দুরবস্থার জন্য হাইকমান্ডকেই দায়ী করেন৷
আজ কংগ্রেসের পূর্বোত্তরের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভি নারায়ণস্বামী সুদীপ বর্মণকে লেখা এক পত্রে স্পষ্ট বলেন, শোকজ নোটিশের জবাবে সন্তোষ্ট নয় হাইকমান্ড৷ দলবিরোধী বক্তব্যের যে সাফাই দিয়েছে সুদীপবাবু তাতে হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ বলে শ্রী নারায়ণস্বামী জানান৷ দলে থেকে দলবিরোধী অবস্থান কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না৷ এরই জের সুদীপ বর্মণকে কংগ্রেস দলকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়৷ বিষয়টি দলের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কমিটিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি সুদীপবাবুকে জানিয়েছেন৷ একই সাথে কোন ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক যাতে না রাখেন সে নির্দেশও দিয়েছেন৷
কংগ্রেস হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্তে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন সুদীপ রায় বর্মণ৷ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রাজ্যে সিপিএমকে তলে তলে মদত দেওয়ার কংগ্রেসের বেড়াজাল থেকে আমি মুক্তি পেয়েছি৷ কংগ্রেসকে এর খেসারত দিতে হবে৷ সুদীপবাবুর মূল বক্তব্য, দল যদি অন্যায় কিংবা অনৈতিক কাজ করে এবং এর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চিঠি পাঠানোকে এআইসিসি দল বিরোধী কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গে যারা দলের নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সিপিএমের সাথে জোট করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস হাইকমান্ড কোন ব্যবস্থা নিল না৷ বরং তাদের উৎসাহ দিল৷ বহিষ্কারের আজকের এই সিদ্ধান্ত দলের স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছে বলে সুদীপ বাবু মন্তব্য করেন৷ দলে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই বলেও তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি জানান, আগামী দিনে রাজ্যবাসী কংগ্রেসকে এর মোক্ষম জবাব দেবেন৷ নতুন কোন দলে যোগ দিচ্ছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও খুব শীঘ্রই পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন বলে সুদীপবাবু উল্লেখ করেছেন৷
এদিকে, সুদীপ বর্মণ ছাড়াও প্রদেশ যুব কংগ্রেসের মোট ১৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তাতে প্রাক্তন যুব কংগ্রেস সুশান্ত চৌধুরীও রয়েছেন৷ অন্যা্যনরা হলেন, রিন্টুলাল দেব, ভিকি প্রসাদ, অভিষেক দেবরায়, অনুপ সরকার, সঞ্জীব সুর, বান্টু দেব, পার্থ বণিক, প্রদীপ দাস, রাধা বল্লভ দত্ত, পিনাকি দাস চৌধুরী, নন্দন মজুমদার, দেবাশিষ ভৌমিক এবং পুলক ভৌমিক৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে পিসিসি সভাপতি জানিয়েছেন, প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি সুশান্ত চক্রবর্তীকে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ এছাড়াও কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে, সুদীপ রায় বর্মণ সহ ১৪ জন যুব নেতাকে বহিষ্কারের খবরের সাথে সাথেই আগরতলায় প্রদেশ কংগ্রেস মুখ্য কার্যালয়ে একদল বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন৷ কংগ্রেস হাইকমান্ড এবং পিসিসি সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন৷ পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরায় সিপিএমের সন্ত্রাসে যারা রাজ্যত্যাগী হয়েছেন তাদের কথা চিন্তা না করে কংগ্রেস হাইকমান্ড নিজেদের স্বার্থে বামেদের সাথে হাত মিলিয়েছে এই অভিযোগ তুলে এদিন প্রদেশ কংগ্রেস ভবন চত্বরে ধিক্কার জানায় বিক্ষোভকারীরা৷ এরপর কংগ্রেস ভবনে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালায়৷ বহু আসবাবপত্র, কম্পিউটার ইত্যাদি ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা৷ তারা পিসিসি সভাপতিকে বেশ কিছুক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন৷ তবে, আশ্চর্যের বিষয় হল প্রদেশ কংগ্রেস কার্যালয়ের ঢিলছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত আগরতলা পশ্চিম থানা এবং মহিলা থানা, তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা কংগ্রেস ভবনে রণক্ষেত্র করে তোলার প্রায় ঘন্টা দেড়েক বাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে৷ পুলিশের হস্তক্ষেপে একে একে বিক্ষোভকারীদের প্রদেশ কংগ্রেস ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়৷
এদিকে, এই ঘটনার জন্য আগরতলায় পশ্চিম থানায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পিসিসি সভাপতি বীরজিৎ সিনহা জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, বিক্ষোভকারীরা যে আলমারি ভেঙ্গেছে তাতে ১০ হাজার টাকা ছিল তা পাওয়া যাচ্ছে না৷ তিনি বলেন, পশ্চিম থানায় জানানো হয়েছে আগামীকাল দুপুর ২টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে প্রদেশ কংগ্রেস থানায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে৷ দলের অন্যান্য বিদ্রোহীদের প্রসঙ্গে বীরজিৎবাবু জানিয়েছেন, দলে থেকে বিদ্রোহ বরদাস্ত করা হবে না৷ মেজাজ পরিবর্তন না করলে পিসিসি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ এমনকি যে বিধায়করা বিদ্রোহীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তাদের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য বীরজিৎ বাবু বার্তা পাঠিয়েছেন৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য কংগ্রেস বিধায়ক পদে থেকে হাইকমান্ড কিংবা দলের বিরুদ্ধে কোন কাজ বরদাস্ত করা হবে না৷
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে পিসিসি সভাপতি জানিয়েছেন, আগামী ১৪-১৫ মে দশরথ ভবনে ছাত্র, যুব ও মহিলা কংগ্রেস নেতৃত্বদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *