রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ কমছে, ভয়াল জল সংকটের আভাস

Water Crisisনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ এপ্রিল৷৷ রাজ্যে জলস্তর ক্রমেই নিম্নমুখী৷ সম্প্রতি রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জলস্তর ১.৫ মিটার নীচে নেমে গিয়েছে৷ তাতে আগামী দিনে ভয়াল জল সংকটের আভাস মিলছে৷ জল সংকটের জন্য অন্যতম দায়ী রাবার চাষ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি রাবার গাছ দিনে গড়ে ৯০ লিটার করে ভূগর্ভস্থ জল চুষে নেয়৷ রাজ্যে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার চাষ হচ্ছে৷ তাতে মোট রাবার গাছের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ৷ ফলে প্রতিদিন ৮৯১৫৮০৬২৫.৮৩ গ্যালন জল চুষে নিচ্ছে ৭৫ হেক্টর জমির রাবার গাছ৷ আগামী দিনে রাজ্যে জল সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
একাংশের মতে, কেরালাতেও রাবার চাষ হচ্ছে৷ অথচ সেখানে জল সংকটের কোন পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি৷ এর জন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কেরালায় বৃষ্টিপাত ত্রিপুরার তুলনায় অনেক বেশী৷ ২০১৫ সালের শেষ রিপোর্ট মোতাবেক, কেরালায় গড় বৃষ্টিপাত ৩০৫৫ মিলিমিটার৷ তার তুলনায় ত্রিপুরায় গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ১৮৮১ মিলিমিটার৷ ফলে, কেরালাতে রাবার গাছ একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ জল চুষে নিচ্ছে, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত বেশী হওয়ায় সমতা বজায় থাকছে৷ ত্রিপুরার ক্ষেত্রে ঘাটতি উভয় দিকেই৷ সারা দেশে কেরালার পর রাবার উৎপাদনে ত্রিপুরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ কিন্তু, জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে কেরালার সাথে বিরাট ফারাক রয়েছে ত্রিপুরার৷
ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়ায় কেবল জল সংকটের আভাস দিচ্ছে তেমনটা নয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলস্তর কমে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও৷ এমনিতেই ত্রিপুরা ভূমিকম্প প্রবন জোন হিসেবে চিহ্ণিত৷ সিসমিক জোন পাঁচ নম্বরে রয়েছে এই রাজ্য৷ দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি প্রবন রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম৷ সেক্ষেত্রে ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমতে থাকলে একদিকে যেমন রাজ্যবাসী ভয়াল জল কষ্টে ভুগবেন তার সাথে ভূমিকম্পে প্রাণ হানির ঝুঁকিও রয়ে যাচ্ছে৷
সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা আলোচনা এবং ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে৷ প্রগতিশীল রাষ্ট্রগুলিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় নানা কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেছে৷ ভারতেও জল সংকটের হাত থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ ভূগর্ভস্থ জলস্তর স্থিতিশীল রাখার জন্য সারা দেশের সাথে গোটা বিশ্বে সবুজায়নের পথ অবলম্বন করা হচ্ছে৷ একই পথে পার্বতী রাজ্য ত্রিপুরাও হাটছে৷ কিন্তু, ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ কমতে থাকায় সেই মহতী উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ণ উঠা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল৷ জল সংকট নিরসনে বৃষ্টির জল সংরক্ষণও ফলপ্রসু বলে মেনে নিয়েছে গোটা বিশ্ব৷ সেই মোতাবেক ভারতেও বহু জায়গায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷ কিন্তু ব্যাতিক্রমী এই রাজ্যে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের তেমন কোন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি৷ স্বাভাবিকভাবে আগামী দিনে খরা দেখা দিলে তার হাত থেকে রেহাই কিভাবে মিলবে সেই পথ অধরা এখনও৷ সম্প্রতি খরা দেখা দিয়েছে মহারাষ্ট্রের লাতুরে৷ খরাগ্রস্ত লাতুরে রেলে করে জল সরবরাহ করে স্বাভাবিক করা হচ্ছে৷ এমন ভয়াল পরিস্থিতির মুখোমুখী হলে রাজ্য কিভাবে তা মোকাবিলা করবে সেনিয়ে এখন থেকেই ভাবনা চিন্তা জরুরী বলেই অনেকে মনে করছেন৷ জল সংকট যেখানে সারা দেশের সমস্যা, সেখানে এই প্রাণের উৎসকে সংরক্ষণ অতি আবশ্যিক হয়ে উঠেছে৷
পার্বতী রাজ্য ত্রিপুরায় পাহাড়ী জনপদে এমনিতেই সারা বছর তীব্র জল কষ্টে ভুগেন গিরিবাসীরা৷ সম্প্রতি পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের মন্ত্রী রতন ভৌমিকের দেওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে এখনও সারা রাজ্যে ৩৭৩৩টি পাড়ায় সারা বছর জল পাওয়া যায় না৷ শুখা মরশুম শুরু হতেই রাজ্যের ৪৯ টি পাড়ায় ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে৷ ফলে এমনিতেই জল সংকটের মারাত্মক ঝুকিতে রয়েছে এই রাজ্য, তার উপর জলস্তর ক্রমশ নামতে থাকলে আগামী দিনে রাজ্য খরা কবলিত বলে ঘোষণা হতে পারে বলেও আশঙ্কা৷
ফলে, রাজ্যে যেমস্ত নদী, নালা ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে সেগুলিকে চাঙ্গা করার তাগিদ আরও বেড়ে যাচ্ছে৷ রাজ্য সরকার অবশ্য সম্প্রতি হাওড়ার জলস্তর বাড়ানোর জন্য উৎসস্থলে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ একই সঙ্গে গোমতীর উৎসেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়ছে৷ এখন দেখার ঐ পদক্ষেপগুলি কতটা বাস্তব রূপ নেয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *