ত্রিপুরায় উজ্জল অধ্যায়

Golden Tripura Wideস্বপ্ণ যে বাস্তবের মাটি পায় তাহা আবারও প্রমাণ হইয়া গেল৷ সব স্বপ্ণ বিফলে যায় না৷ কোনও দিন ভাবা গিয়াছিল আগরতলা হইতে সরাসরি দিল্লী ছুটিবে রাজধানী এক্সপ্রেস৷ ভাবিতে রোমাঞ্চ লাগিবারই কথা৷ নতুন প্রজন্ম হয়তবা ততখানি রোমাঞ্চিত হইবার কথা নহে৷ কারণ, তাহারা প্রযুক্তির বিস্ফোরণের মুখে আধুনিক দ্রুত চলমান পৃথিবীকে দেখিতেছে৷ যাহারা প্রবীণ, যোগাযোগের দুঃসহ যন্ত্রণার মাঝে জীবন লালিত হইয়াছে, তাঁহাদের কাছে রোমাঞ্চের, আগরতলা হইতে ব্রডগেজ লাইনে রাজধানী ছুটিবে ঝড়ের গতিতে৷ রেল মন্ত্রকের প্রস্তুতি পর্যালোচনা হইতে যে তথ্য মিলিতেছে তাহাতে এই বিষয়টিই উঠিয়া আসিয়াছে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতি যোগাযোগের এই উন্নতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য প্রয়াস সন্দেহ নাই৷ ইহাও সন্দেহ নাই যে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে ত্রিপুরায় স্বর্ণযুগের সূচনা হইতে চলিয়াছে৷ উদয়পুর কিংবা সাব্রুম পর্য্যন্ত রেল লাইনের বিস্তৃতি রাজ্যের যোগযোগ ব্যবস্থাকে অনেক বেশী উর্বর করিয়াছে৷ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রক্রিয়ায়, পণ্য পরিবহণের নতুন অধ্যায় শুরু হইবার মধ্য দিয়া ত্রিপুরার ভাগ্যাকাশে নতুন সূর্য্যোদয় হইবে৷
ত্রিপুরার ভাগ্যাকাশে রেল নতুন যুগের সূচনা করিতে চলিয়াছে৷ শুক্রবার বোধজংনগরে ‘অ্যাপারাল এ্যান্ড গার্মেন্ট মেকিং’ সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রীকে পাশে বসাইয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক স্বর্ণোজ্জল ভবিষ্যতের তথ্য প্রদান করিয়াছেন৷ তাঁহার প্রদত্ত তথ্যে ত্রিপুরার রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অধ্যায়ের বিষয় উঠিয়া আসিয়াছে৷ তিনি জনাইয়াছেন, ধলাই জেলা সদর জহরনগর হইতে রেলপথের মাধ্যমে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সাড়া দিয়াছেন৷ এই প্রকল্প রূপায়ণ হইলে দঃপূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে যুক্ত হওয়া সম্ভব হইবে৷ আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে, যোগাযোগ ক্ষেত্রেই শুধু নহে ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প প্রসারে ত্রিপুরার নতুন এক যুগে প্রবেশ করিবে৷ গুণগত ভাবে দারুন পরিবর্তনের সূচনা করিবে৷ স্বাধীনতা পরবর্তী পর্য্যায়ে কঠিন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করিয়া এরাজ্যের পুনর্গঠনে যাঁহাদের অবদান আছে, তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এখন আর বাঁচিয়া নাই৷ অনগ্রসরতার অভিশাপ কাটাইয়া ত্রিপুরায় এই উন্নয়নের জোয়ার নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবে চিহ্ণিত হইয়া থাকিবে৷ আগরতলা হইতে সরাসরি দিল্লী, কলকাতা ব্রডগেজ রেলের এই জয়যাত্রা ত্রিপুরার যোগাযোগের ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জল ইতিহাস সৃষ্টি করিয়াছে৷ জহরনগর হইতে দঃপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে রেল যোগাযোগ প্রকল্পে কেন্দ্রের সাড়া মিলিয়াছে৷ তাহা রূপায়ন করিতেও যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন৷ ত্রিপুরায় ব্রডগেজ রেল অনেক লড়াই ইত্যাদির পরেই আসিয়াছে৷ সুতরাং এখন আরও অপেক্ষার পালা৷ একদিন ত্রিপুরা সারা দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য রাজ্য হিসাবে উঠিয়া আসিবে সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই৷ ইহাও সন্দেহ নাই যে, কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বেশী উদারনীতি ত্রিপুরার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করিবে৷ রেল যোগাযোগ ত্রিপুরার বুকে রক্ত প্রবাহকে সচল করিবে৷ দীর্ঘদিন রক্তশূন্যতার শিকার এই ত্রিপুরা পিছাইয়া পড়িয়াছিল৷ ব্রডগেজ রেল চালুর মধ্য দিয়া, যোগাযোগ ক্ষেত্রে শূন্যতার যে হাহাকার ছিল, তাহা পরিপূর্ণতায় নতুন উজ্জল অধ্যায়ের পথে আগাইয়া গেল৷