আগরতলা, ২০ অক্টোবর (হিঃসঃ) ৷৷ স্বপ্ণ যখন আকাশ ছুঁয়ে দেখার, সেই স্বপ্ণ নিয়েই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরার সন্তান বিমান চালানোর দক্ষতা অর্জন করেছেন৷ তিনি আরমান চৌধুরী৷ নামেই তো যেন মিশে রয়েছে স্বপ্ণ৷ দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়ার বাসিন্দা প্রণব চৌধুরীর একমাত্র সন্তান আরমান চৌধুরী এয়ার এশিয়া বিমান সংস্থার সহকারি-পাইলট৷ রবিবার আগরতলা থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে যে প্রথম বিমানটি উড়ে গেছে সেই বিমানের সহকারি-পাইলটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ জন্মভূমি থেকে বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি শিহরিত করেছে তাঁকে, হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানালেন আরমান নিজেই৷
এই প্রতিবেদকের সাথে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরমান চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরার মাটিতে জন্ম আমার, এই মাটি থেকে বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার আনন্দই আলাদা৷ তাঁর কথায়, আজ আগরতলার মাটিতে বিমান নিয়ে নামতেই নিজেকে ধন্য এবং গর্বিত বোধ করেছি৷ বিশেষ করে এয়ার এশিয়া কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই সুযোগ দেওয়ায় তিনি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও ভুলেননি৷ আরমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ণ বুকে বেঁধেই বড় হয়েছি৷ কারণ, অসামান্য কাজের প্রতি বরাবরই ঝোঁক ছিল৷ তাই, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ণ সত্যি করার লক্ষ্য নিয়ে চলেছি৷
তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবা ও মা সব ক্ষেত্রেই সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন৷ তাই আজ স্বপ্ণ বাস্তবায়িত করতে পেরেছি৷ আরমান চৌধুরী বলেন, ১ বছর ৯ মাস সহকারি পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি৷ এখন পর্যন্ত ১,২০০ ঘণ্টা এয়ারবাস ৩২০ মডেলের বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তবুও রোজ নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করছি৷ তাঁর কথায়, এয়ারলাইন্স জগতের ব্যাপ্তি বিশাল৷ এর কোনও সীমা-পরিসীমা নেই৷ তাই এই জগতটাকে আঁকড়ে ধরে নিজের ভবিষ্যত গড়ার চেষ্টায় রয়েছি৷
আরমান আজ কথা বলতে গিয়ে বারবারই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন৷ কারণ, আজ তিনি প্রথমে আগরতলা থেকে গুয়াহাটি যান৷ সেখান থেকে বিমান নিয়ে আবার আগরতলায় আসেন৷ এর পর আগরতলা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে উড়ে যান তিনি৷ এই মুহূর্তগুলি তাঁর গোটা ক্যারিয়ারের মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগেও বিমান চালিয়েছি৷ কিন্তু, আজকের অনুভূতি সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে৷
তিনি জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবহাওয়ার কারণে বিমান চালানো অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ৷ তবুও তিনি বিমানের সহ-পাইলটের দায়িত্ব পালনে ভীষণ রোমাঞ্চিত হন৷ তাঁর দাবি, বিমান সংস্থা সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে৷ ফলে, কঠিন পরিস্থিতিতেও স্বাভাবিকভাবেই বিমান এবং যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পেরে ভীষণ গর্বিত হন৷
আজ তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে বিমান কমান্ডার হওয়ার স্বপ্ণ রয়েছে তাঁর৷ এতে অবশ্য তাঁকে বিশেষ ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, সাথে নির্দিষ্ট সময় আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে৷
এদিকে, ছেলেকে নিয়ে ভীষণ গর্ব অনুভব করেন বাবা প্রণব চৌধুরী৷ তিনি জানান, বিলোনিয়া আর্য্য কলোনি বিদ্যালয় থেকে আরমান সুকল জীবন সমাপ্ত করে দিল্লির পাইওনিয়ার ফ্লাইং অ্যাকাডেমিতে পড়াশুনা করেছে৷ সেখান থেকেই পাইলট হওয়ার ডিগ্রি নিয়েছে আরমান৷ প্রণববাবু জানান, আরমান এখন কলকাতা বেইসে কর্মরত রয়েছে৷ আজ আগরতলার মাটিতে বিমানের পাইলট হিসেবে ছেলের অবতরণে তিনি দারুন আনন্দ অনুভব করছেন৷ একইসাথে ভীষণ গর্ব বোধও করছেন, জানান অকপটে৷