নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জানুয়ারী৷৷ বামফ্রন্টের এবারের নির্বাচনী ইস্তেহারে গণহারে কোন প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই৷
নির্বাচনী ইস্তেহারে অধিকাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের প্রকল্প রূপায়ণের বিষয়৷ গুরুত্বপূর্ণ ও জ্বলন্ত বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে৷ যেমন, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে নেই কোন সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থার প্রতিশ্রুতি এবং কর্মচারীদের নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য ইস্তেহারে অনুচ্চারিত৷ কর্মসংস্থান এবং শিল্পের প্রসার নিয়েও দিশা দেখানো হয়নি বামফ্রন্টের ইস্তেহারে৷ তবে, ইস্তেহারের সিংহভাগ জায়গায় স্থান পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা ও বঞ্চনার বিষয়৷ সাথে রয়েছে রাজ্যভাগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার৷ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মঙ্গলবার প্রথম ইস্তেহার প্রকাশ করল বামফ্রন্ট৷ এদিন আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্টের পক্ষে ইস্তেহার প্রকাশ করেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ৷
কঠিন সময়ে বামফ্রন্টের এই ইস্তেহার আরও একটি সাহসী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ কারণ, কেন্দ্র নির্ভরতা এবং দাবী আদায়ে আন্দোলন ও চাপ অব্যাহত রাখা ছাড়া বামফ্রন্টের ইস্তেহারে অন্য কোন বিষয় প্রাধান্য পায়নি৷ গরীব অংশের মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলার বদলে ভবিষ্যতে মাসিক ভাতার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামফ্রন্ট৷ ইস্তেহারে বলা হয়েছে আর্থিক সামর্থ ও সংগতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যতে বর্তমান মাসিক ভাতার অর্থের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করার জন্য আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে৷
মানব সম্পদ বিকাশে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই৷ অথচ গুনগত শিক্ষা প্রদানে সঠিক দিশা মিলেনি ইস্তেহারে৷ রাজ্যে বিভিন্ন স্তরে বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে৷ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পলিট্যাকনিক ইনস্টিটিউট এবং বর্তমানে নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পেরেছে বামফ্রন্ট সরকার৷ সেকথা উল্লেখ থাকলেও গুনগত শিক্ষার প্রসারে সুচিন্তিত প্রয়াস সম্পর্কে কোন বক্তব্য নেই ইস্তেহারে৷ বামফ্রন্টের এই ইস্তেহারে শিল্প প্রসারে নিজস্ব কোন নীতির প্রতিফলন দেখা যায়নি৷ বরং শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে৷ ইস্তেহারে বলা হয়েছে, উত্তর পূর্বাঞ্চলে শিল্প প্রসারে ও বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গুচ্ছ সহায়তা প্রকল্পটি চালু ছিল বর্তমানে কেন্দ্র সেটাকে নিষ্ক্রীয় করে রেখেছে৷ এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের সমস্ত রাজ্যই করে চলেছে৷ অবিলম্বে পূর্বোত্তরের জন্য উন্নত ও আকর্ষণীয় গুচ্ছ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে৷
বামফ্রন্টের ইস্তেহারে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি সমবেদনা জানালেও তাদের কর্মসংস্থানে সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি৷ একই সাথে শিক্ষক কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেই সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে৷ ফলে, কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবী অপূর্ণই থাকবে, ইস্তেহার এমনই জানান দিচ্ছে৷ উপজাতি কল্যাণ এবং তপশিলী জাতি কল্যাণেও কেন্দ্রের উপরই নির্ভরতা পরিলক্ষিত হয়েছে ইস্তেহারে৷ এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা ও দাবী আদায়ে আন্দোলন এবং চাপ অব্যাহত রাখার বিষয়গুলি অধিক প্রাধান্য পেয়েছে৷
বামফ্রন্টের এবারের নির্বাচনী ইস্তেহারে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে রাজ্যভাগের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি৷ সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা ও বঞ্চনার বিষয়গুলিও তুলে ধরা হয়েছে৷ ইস্তেহারে এনএলএফটি জঙ্গী সংগঠনের রাজনৈতিক মুখোশ আইপিএফটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ রাজ্যভাগের ষড়যন্ত্রে আইপিএফটি যুক্ত সেকথাও বলা হয়েছে৷ শুধু তাই নয় এর সাথে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং বিজেপিকেও জড়িয়েছে বামফ্রন্ট৷ বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাজ্যভাগের চক্রান্তের যুক্তির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে৷
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা ও বঞ্চনা রাজ্যে জনকল্যাণকর কার্যক্রম রূপায়ণে বাধা পাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে ইস্তেহারে৷ বলা হয়েছে, বামফ্রন্ট সরকারের জনকল্যাণকর কার্যক্রম রূপায়ণে বিঘ্ন সৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরাকে তার ন্যায্য অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার হীন ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে৷
এদিকে, বামফ্রন্টের এই ইস্তেহারকে দাবি সনদ বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, আগামীদিনে রাজ্যের স্বার্থে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ইস্তেহারে তা প্রতিফলিত হওয়া উচিৎ ছিল৷ তার বদলে টানা ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকার ইস্তেহারের নামে দাবী সনদ প্রকাশ করেছে৷ তিনি জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বিজেপির ভিশন ডকুমেন্ট প্রকাশ করা হবে৷