জয়পুর, ১৬ জুলাই : রাজস্থানের জয়সালমির জেলার বাসনপীর গ্রামে প্রাচীন ‘ছত্রি’ (স্মৃতিসৌধ) পুনর্নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রদায়গত উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকায় আজ জেলা প্রশাসনের তরফে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস)-এর ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। মহকুমা শাসক সাক্ষম গয়াল এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই বিরোধের কারণে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি অনুযায়ী পুকুরপাড়ে অবস্থিত প্রাচীন ছত্রি নির্মাণ। ঐতিহাসিক এই ছত্রিগুলি পূর্বে কোনও অজ্ঞাত কারণে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সম্প্রতি প্রশাসনের অনুমোদনে ঝুঝার রামচন্দ্র সিং সোধা ও ঝুঝার পালিওয়াল–এর স্মৃতিতে পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হলে অন্য এক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়।
গত ১০ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরপরই বিরোধী সম্প্রদায়ের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাথর ছোঁড়া শুরু করেন। তাতে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে মহিলা সদস্যরাও জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়েছিল। ওই ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল-সহ মোট চারজন আহত হয়েছিলেন। পরে দু’ডজনের বেশি ব্যক্তিকে যাঁদের মধ্যে ১৫ জনেরও বেশি মহিলাকে গ্রেপ্তার করে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পরে গ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৌঁছাতে শুরু করেন। ইতিমধ্যেই জয়সালমির বিধায়ক ছোটু সিং ভাটী, পোকরণ বিধায়ক মহন্ত প্রতাপ পুরী, শিব বিধানসভা কেন্দ্রের রবীন্দ্র সিং ভাটী, প্রাক্তন বিধায়ক সাং সিং ভাটী ও বিজেপি নেতারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৈলাশ চৌধুরী বাসনপীর সফরের ডাক দিয়েছেন এবং প্রাক্তন রাজ্য মন্ত্রী হরিশ চৌধুরী ১৯ জুলাই গ্রামে যাওয়ার কথা জানানোয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রশাসন ১৬৩ ধারার আওতায় সমস্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার আদেশ জারি করেছে। ওই আদেশ অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র যেমন রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল, তলোয়ার, বল্লম, ছুরি, কিরিচ বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাঁচ বা তার বেশি ব্যক্তির জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিছিল, সমাবেশ, সভা ইত্যাদি পূর্বানুমতি ছাড়া করা যাবে না। ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন স্লোগান, বক্তৃতা, লিফলেট বা অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট নিষিদ্ধ। লাউডস্পিকার বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি পেলে নির্ধারিত সময় ও শব্দমাত্রা মানতে হবে।
মহকুমা শাসক সাক্ষম গয়াল সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না দেওয়ার এবং শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যে কেউ আইন অমান্য করলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, প্রশাসন গ্রামে সম্ভাব্য উত্তেজনা রুখতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।

