উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা বিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পরিকাঠামোর উন্নয়ন থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র এবং সময় সম্পম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণে সর্বক্ষেত্রে প্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। গতকাল আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাজ্য উত্তোলন করে গ্রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেডিও নায়ু একথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ঢা) মানিক সাহা, মুখ্যসচিব কে কে সিনহা, রাজা পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাও বন্ধন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ এবং রাজ্য পুলিশের পদস্থ আধিকারিকগণ। আসাম রাইফেলাস ময়দানে আয়েজিত প্রজাতন্ত্র বসের মূল অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজে অংশ নেয় বিএসএফ, সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলস, মিজোরাম পুলিশ, ১৫নং ব্যাংটেলিয়ান টিএসআর, মহিলা টিএসআর প্লাটুন, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা আরক্ষা বাহিনী, ট্রাফিক পুলিশ, ফরেস্ট গার্ড, হোম গায় বাহিনী, এনসিসি’র সিনিয়র চিয়িশন বয়েজ, এনগিসি’র সিনিয়র ডিভিশন গালাস, গার্লস গাইড, এনএসএস, সিভিল ডিফেন্স ও আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল। বুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার ফ্রান্সিস দারলং। আসাম রাইফেলস মাঠে সম্মিলিত বাহিনীর জওয়ানগণ রাজাপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি বাল্লুকে অভিবাদন জানান। কুচকাওগাছে সিকিউরিটি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে বিএসএফ, ১৫নং ব্যাটেলিয়ান টিএসআর ও ট্রফিক পুলিশ। নন সিকিউরিটি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে এনসিসি’র সিনিয়র ডিভিশন খানণাৎ গালস গাইড ও আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল।
অনুষ্ঠানে আসাম রাইফেলস ময়দানে প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল অনুষ্ঠানে রাজাপাল ইন্দ্রসেনা কেডি নস্ত্র বাজাবাসীকে উজ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার সম্প্রতি ‘রাজ্যের প্রতীক’ গ্রহণ করেছে। রজোর বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটন। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
সংবিধান গ্রহণের মধ্যনিয়ে এই দিনে নাগরিকদের জন্য সামাজিক ন্যাম, সামা ও সৌভাতৃত্ব নিশ্চিত পায় অঙ্গীকার নিয়ে দেশকে একটি সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্গান দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে শান্তি ও উন্নায়নের জন্য ভারত সরকার, বিপুল সরকার এবং তিপরা মথার মধ্যে ২০২৪ সালে ঐতিহাসিক বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে রাজোর জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষের সমসাংগুলি সমধানের চেষ্টা করা হবে। রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারও সরকার ও নিপুরা সরকার, ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রশট অব ত্রিপুত্র (এনএলএফটি) এবং অন রিপুর টৈাইগার যোগ (এটিটিএফ)-এর সাথে একটি সমণোতাপর স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের বিকাশে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনায় কৃষকদের ৩২.১৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। পিএম-কিষাণ যোজনার মাধ্যমে ২.৭৬ লক্ষ কৃষককে ১৮-৩ম কিস্তি পর্যন্ত ৭৯০.৫৩ কোটি টাকা ব্যায় অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ভোজ্য তেন মিশন-অয়েল পাম প্রকল্পের আওতায় ১৯৭৬ হেক্টর জমিতে অয়েল পাম চাষ শুরু হয়েছে। এতে ১৮৬১ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মুল্যে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। শরণার্থী পরিবারগুলিকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের সাক্ষরতা এবং মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করছে। এই লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রাজ্যে যাচ্চা শিক্ষার উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জলজীবন মিশনে রাজ্যের ৬৩২,৩৮৭টি বাড়িতে পাইপলাইনে পানীয়জলের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। আবাসনের সুবিধ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে ২০২৩- ২৪ অর্থবছরে ১ লক্ষ হাজার ৭০৩টি আবাস নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। রাজা সরকার মুখ্যমন্ত্রী মডেল গ্রাম প্রকল্পে ১১১টি মডেল গ্রাম স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। গ্রাম উন্নয়ন ও পঞ্চায়েত স্তরে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য সম্প্রতি নিপুরা ৭টি জাতীয় পঞ্চায়েত পুরস্কার পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল আরও বলেন, জনজাতি, তপশিলি জাতি, অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যান, দিব্যাঙ্গজনদের ক্ষমতায়ন, গণবণ্টন ব্যবস্থার অসনিকীকরণ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিদ্যুৎ পরিষেবা, শিল্প-বানিজ্য ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। রাজ্য সরকার রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নয়নে ‘উত্তর-পূর্ব আঞ্চলিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়িত করছে। বিশ্ব বাজের আর্থিক সহায়তায় ১৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে রাজ্যে একটি শক্তিশালী পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য রাজ্যে নতুন শিল্পনীতি মোষনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার জনজাতি গোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে একটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাজ্যে জনজাতি সম্প্রদায়ের তাঁতশিল্পীদের উৎসাহিত করতে চিফ মিনিস্টাস ট্রাইবেল উইভার্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, পিএম অনুসূচিত আতি অভ্যুদয় যোজনায় রাজোর ১৯১৫ জন সুবিধাভোগীকে উপার্জনশীল কাজের জন্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাজাপাল বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। গোমতী জেলার বনদুয়ারে শক্তিপীঠ পার্কের উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ৯৭.৭০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। এই পার্ক পর্যান ও প্রজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশে সহায়ক হবে। অনুষ্ঠানে রাজাপান আরও বলেন, রাদো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সূচনা করা হয়েছে নিপুর স্টাটিল পলিসি-২০২৪। রাজ্য সরকার দিব্যাঙ্গজন ব্যক্তিদের জমাতাগুণে ২০২৪ সালে ‘ত্রিপুরা রাজ্য দিব্যাঙ্গজন ক্ষমতায়ণ নীতি’ চালু করেছে। পিএম জনমন প্রকল্পে জনজাতি এলাকায় বিশেষ করে অবহেলিত ও দুর্বল অংশের মানুষের জন্য নতুন ৭৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। রাজ্য গণবশান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে রাজ্য সরকার ৬০০টি নাযামূল্যের দোকানকে আদর্শ নায্যমূল্যের দোকানে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। রাজ্য সরকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত ও উন্নত করে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সৌভাতৃত্ব গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির উপর গুরুত্ব দিয়েছে। রাজোর ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিকাশে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সিস্থেটিক অ্যাপোড়া ফুটবল মাঠ, আথলেটিক ট্র্যাক ও সুইমিং পুল গড়ে তোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পেট টেলেন্ট সার্চ প্রোগামে প্রতিভাবান মহিলা ক্রীড়াবিদদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল ইন্দুসেনা রেড্ডি নায়ু ২০২৩ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কর্মক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের জন্য ডিআইজি কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী, টিএসআর সপ্তম বাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট সুদর্শন দাস, টিএসআর মন্ত্র বাহিনীর নায়েব সুবেদার রাজু দাস, টিএসআর নবম বাহিনীর নায়েব সুবেদার পিন্টু দাস, কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং আকাডেমির হেড কনস্টেবল বাবুল ঘোষ, টিএসআর নবম বাহিনীর হাবিলদার পবন দেবনাথ এবং হোমগার্ড পন্ডিত সরকারের হাতে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক তুলে দেন। তাছাড়াও রাজাপাল কুচকাওয়াজে বিজয়ী প্লাটুনগুলিকে এবং বনদপ্তরের কাঞ্চনপুর রেজকে বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জ, রাজনর ওয়াইন্ড লাইফ জেকে সেকেন্ড বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জ ও সদর রেজকে থার্ড বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জ পুরস্কার তুলে দেন। ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে আসাম রাইফেলস ময়লনের মূল অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভারতীয়ম। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের মহিলা বাহিনীর ডেয়ার ডেভিল বাইক শো ছিল অন্যতম আকর্ষণ।