Tripura:ধর্মনগর শহরের কুমোর পাড়ায় দূর্গা প্রতিমা তৈরিতে মৃৎ শিল্পীদের চরম ব্যস্ততা

নিজস্ব  প্রতিনিধি, চুরাইবাড়ি, ২০ সেপ্টেম্বর :  শরৎ কাল মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও নদীর তীরে কাশফুলের শুভ্রতা৷ কাশফুল জানিয়ে দেয় মায়ের আগমনীর বার্তা৷ তাইতো শরৎ এর কাশফুলের মধ্য দিয়ে চারিদিকে চলছে এখন শারদোৎসবের আবহ৷আর এই আবহকে বাস্তব রূপ দিতে কুমোর পাড়ায় মৃৎশিল্পীরা চরম ব্যস্ত দশভূজা দেবী মা দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে৷প্রতিটি কুমোরপাড়ায় মৃৎশিল্পীদের দশভূজা দেবী দুর্গা প্রতিমা তৈরির যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা৷ মৃৎশিল্পীরা দিনরাত একাকার করে তাদের দক্ষ হাতের নিপুনতায় মৃন্ময়ী মাকে চিন্ময়ী রুপ দিতে চলেছেন৷তবে বিগত দুই বছর করোনা প্রকোপে তেমন জমজমাট পূজো না হলেও এবছর দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে বেশ মুনাফার আশায় বুক বেঁধেছেন মৃৎশিল্পীরা৷যদিও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি হলেও ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা উদ্যোক্তারা মূর্তির মূল্য বৃদ্ধি করছেননা৷তাই তাদের মুনাফা কম হলেও অতি সযত্নে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন মৃত শিল্পীরা৷
আর রাজ্যের বানিজ্য নগরী অর্থাৎ উত্তর জেলার ধর্মনগর শহরে উঁচু উঁচু দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন সানীয় মৃতশিল্পীরা৷সাথে ধর্মনগর ও পানিসাগর মহকুমার আশপাশের এলাকাগুলিতে ছোট বড় প্রায় পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ জনের অধিক মৃৎশিল্পীরা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন৷সকলেরই একি বক্তব্য, এবছর বিগত দুই বছরের তুলনায় একটু মুনাফা হবে৷ মৃৎশিল্পীদের বক্তব্য,মাটি,বাঁশ,খের,রং,লোহা, সুতলি, কাপড় সহ অন্যান্য সামগ্রীর অগ্ণি মূল্য৷কিন্তু মূর্তির দাম বৃদ্ধি হয়নি৷তাই মৃৎশিল্পীদের মুনাফা আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে৷ অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, নবদ্বীপ সহ অসমের ধুবুরী, শিলচর ও রাজ্যের কারিগর দিয়ে মূর্তি তৈরি করছেন৷তাদের তৈরি মূর্তি ধর্মনগর ও পানিসাগর মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতে বিক্রি হয়ে থাকে৷তবে মৃৎশিল্পীরা তাদের মৃৎ শিল্পীর ভাতা থেকে বঞ্চিত বলে জানান৷তাছাড়া পাননি সরকারি কোন কোনো সুযোগ-সুবিধাও৷ ধীরে ধীরে তাই নব প্রজন্ম এই মৃৎশিল্প পেশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷ এদিকে ধর্মনগর শহরের দক্ষিণ নয়াপাড়া এলাকার দিলীপ পাল নামে এক মৃৎশিল্পী জানান, মান্ধাতার আমল থেকে এই মৃৎশিল্পী পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন এবং এই কাজের উপরই তাদের সংসার প্রতিপালন হয়ে থাকে৷তাই তিনিও এই পেশাটাকে বেছে নিয়েছেন৷
আগামী দিনেও আদি পেশাকে ধরে রাখবেন বলেও জানান৷তিনি আরো জানান,জন্ম সূত্রেই এই পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন৷এবছর প্রায় পঁয়ত্রিশ জন দূর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন৷তাছাড়া বহিঃ রাজ্য কোচবিহারের সাত জন এবং সানীয় একজন অর্থাৎ মোট আট জন কারিগর দিনরাত একাকার করে দূর্গা প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন৷এবারে সবর্োচ্চ দেড় লক্ষ ও সর্বনিম্ন পঁচিশ হাজার টাকার দূর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন৷ সবগুলো প্রতিমাই অর্ডার হয়ে গেছে৷ অপরদিকে কৃষ্ণপুর জোর কালভার্ট এলাকার সানীয় রতন পাল নামে অপর এক মৃৎশিল্পী জানান,তিনি দীর্ঘ এগারো বছর যাবত মূর্তি নির্মাণ করে আসছেন৷এবছর প্রায় কুড়িটির অধিক দূর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন৷মৃত শিল্পটি তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জন৷ অবশ্য এবছর করোনা মহামারী না থাকার ফলে লাভের অংশ দেখছেন৷সরকারি ভাবে আজ অব্দি কোন সুযোগ-সুবিধা পাননি৷যদি সরকার তাকে কিছুটা আর্থিকভাবে সাহায্য করতো,তাহলে তার মৃত শিল্প পেশাটাকে বাড়িয়ে আরেকটু স্বাবলম্বী হতে পারতেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *