উৎকর্ষতার জন্য অনুদান না অনুদানের জন্য উৎকর্ষতা, প্রশ্ন যাদবপুরের প্রাক্তন শিক্ষাকর্তার

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ৯ অক্টোবর (হি. স.) : “উৎকর্ষতার জন্য অনুদান না অনুদানের জন্য উৎকর্ষতা? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই এই বিতর্কের সমাধান সূত্র মিলবে বলে আমার বিশ্বাস।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স’ বা উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রাখা নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সে সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন যাদবপুরের প্রাক্তন সহ উপাচার্য ডঃ সিদ্ধার্থ দত্ত।

কেন্দ্র যাতে এই প্রতিষ্ঠানকে ‘ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স’ বা উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে বাদ না-দেয়, সেই জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। রাজ্য সরকার কতটা অর্থ দেবে, তা সুস্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি— এই কারণ দেখিয়ে যাদবপুরকে কেন্দ্রীয় সরকার ওই মর্যাদা দিতে পারছে না বলে কিছু দিন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি।

কয়েক বছর আগে কেন্দ্র দেশের অন্য কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাদবপুরকেও দেশের উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেছে নিয়েছিল। পরে এই মর্যাদার সঙ্গে এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের সিদ্ধান্তও ঘোষণা হয়। শর্ত ছিল, রাজ্য সরকারকে ওই টাকার ২৫ শতাংশ দিতে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, দু’বছর আগে সেই সময়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে এবং সম্মতি নিয়ে তিনি নিজে গিয়ে তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা যা, তাতে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাদের ৮০০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা করা হোক। যার ২৫ শতাংশ অর্থ যাদবপুর নিজেদের থেকেই দিয়ে দেবে। কিন্তু তার পরেও ইউজিসি-র সাম্প্রতিক বৈঠকে যাদবপুরকে এই সম্মান থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শিক্ষা সূত্রের খবর।

ডঃ সিদ্ধার্থ দত্ত হিন্দুস্থান সমাচারকে জানান, “টাকাপয়সা থাকলেই যদি শিক্ষা ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা বজায় রাখা যেত, তাহলে সভ্যতার আলো অন্য ভাবে বিচ্ছুরিত হত এই পৃথিবীতে । উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য টাকা পয়সার প্রয়োজন আছে । একথা কেউই অস্বীকার করতে পারে না। আবার অনুদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টানাপোড়েনের জন্য ” উৎকর্ষ সম্মান ” ফিরিয়ে নেওয়া হবে এটাও কোন ধরণের বিচার? এ প্রশ্ন তো উঠবেই। হচ্ছে ও সেটাই।”

সিদ্ধার্থবাবু জানান, “শিক্ষার উৎকর্ষতার সঙ্গে টাকাপয়সা কে জুড়ে দিয়ে এই সময়ে যে বিতর্ক, তাতে কার কতটা লাভ হচ্ছে তা বলতে পারবো না, তবে উৎকর্ষতা যে আলোচনার একেবারে শেষের দিকে অবস্থান করছে এটা আমরা ভালোই উপলব্ধি করছি। এ আমাদের দেখা বা বোঝার ঘাটতি না, এ হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির দৈন্যদশা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে এই উৎকর্ষতার ভাগীদার হতে হলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। উৎকর্ষতার শিক্ষা তো এখন এটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *