মারাঠি, মহারাষ্ট্র ও মারাঠি মানুষ নিয়ে কোনও আপস নয়, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না, হুশিয়ারি রাজ ঠাকরের, মারাঠি ও মহারাষ্ট্রের স্বার্থে আমরা একসাথে থাকব, ঘোষণা উদ্‌ধব ঠাকরের

মুম্বই, ৫ জুলাই : মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে শনিবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, মারাঠি ভাষা, মহারাষ্ট্র ও মারাঠি মানুষ (মানুস) নিয়ে কোনও আপস করা হবে না এবং হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না। শিবসেনা (উদ্ধব বলঠাকরে গোষ্ঠী) প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও শনিবার ঘোষণা করেছেন, মারাঠি ভাষা, মারাঠি মানুষ ও মহারাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় তিনি ও রাজ ঠাকরে একজোট হয়েছেন এবং এটি কেবল শুরু মাত্র। ভবিষ্যতেও এই ঐক্য বজায় থাকবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।

শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে গোষ্ঠী) ও এমএনএস-এর এক যৌথ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। সমাবেশটি মহায়ুতি সরকার রাজ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে হিন্দি ভাষা চালু করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করায় অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, এই তিন-ভাষা নীতির প্রশ্নটাই অপ্রয়োজনীয় ছিল। কোথা থেকে হিন্দি এলো? কেন হিন্দি? কার জন্য হিন্দি? ছোট ছোট শিশুদের উপর এটি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত নেওয়া হয়নি। কেবল ক্ষমতা থাকায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মনে রাখবেন, আপনারা বিধানসভায় ক্ষমতায় আছেন, কিন্তু আমরা রাস্তায় আছি।

রাজ ঠাকরে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মহারাষ্ট্র কোনও ঝগড়া বা বিতর্কের চেয়ে বড়। আজ যারা হিন্দি চাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে, তারা কাল জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজনের চেষ্টা করবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি কটাক্ষ করে আরও বলেন, যা বালাসাহেব ঠাকরে বা অন্য অনেকেই পারেননি, তা আজ দেবেন্দ্র ফড়নবীস করে দেখিয়েছেন, আমাদের একত্রিত করেছেন।”

সমাবেশে রাজ ঠাকরে বলেন, এই জমায়েতে কোনও দলীয় পতাকা নেই। একটাই পতাকা, তা হলো ‘মারাঠি’। কেউ মারাঠির বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দাও, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় সহিংসতা করো না, ভিডিও করো না। তিনি বলেন, টিভি চ্যানেলগুলো এখন শুধু শরীরী ভাষা খুঁজবে, কে কম হাসল, কে কার সঙ্গে কথা বলল। এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। মারাঠি আমাদের একমাত্র এজেন্ডা।”

রাজ ঠাকরে বিজেপি ও তাদের মিত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো ইংরেজি স্কুলে পড়ে, তারপরও মারাঠির জন্য লড়াইয়ের অভিনয় করো? তিনি মনে করিয়ে দেন, বালাসাহেব ঠাকরে ও আমার বাবা শ্রীকান্ত ঠাকরে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও, তাদের মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, এই তিন-ভাষা নীতি (মারাঠি, ইংরেজি ও হিন্দি) কেবল কেন্দ্রীয় সরকার থেকেই এসেছে। কিন্তু হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে সবই তো ইংরেজিতে হয়। সেখানে হিন্দির জায়গা কোথায়? শুধু মহারাষ্ট্রেই কেন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

রাজ ঠাকরের এই কড়া বক্তব্য মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার ইস্যুতে রাজনীতির কেন্দ্রে আরও উত্তাপ তৈরি করেছে। মহারাষ্ট্রে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাষা-ভিত্তিক রাজনীতি যে আরও জোরদার হবে, তা বলাই বাহুল্য।

এদিকে, শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে গোষ্ঠী) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে শনিবার ঘোষণা করেছেন যে, মারাঠি ভাষা, মারাঠি মানুষ ও মহারাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় তিনি ও রাজ ঠাকরে একজোট হয়েছেন এবং এটি কেবল শুরু মাত্র। ভবিষ্যতেও এই ঐক্য বজায় থাকবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।

মারাঠি ভাষার উপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জয় উদ্‌যাপনে আয়োজিত একটি বিশাল যৌথ সমাবেশে উদ্‌ধব বলেন, আমাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল, তা মিটিয়েছেন অনাজি পান্ত অর্থাৎ দেবেন্দ্র ফড়নবীস। এখন আর বিভাজনের সুযোগ নেই। আমরা একসঙ্গে এসেছি, একসঙ্গে থাকব। তিনি সাফ জানান, মহারাষ্ট্রে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া হবে না। এটা মারাঠির অপমান। আমরা তা প্রতিহত করব।”

উদ্ধব ঠাকরে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তারা শুধু “ব্যবহার করো, ফেলে দাও” নীতি অনুসরণ করে। তিনি বলেন, আমার পিতা বালাসাহেব ঠাকরে এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে লড়েছেন। আজ আমরা তাঁর স্বপ্নপূরণে এক হয়েছি। এখন আমরাই বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেব। যদি বালাসাহেবের আশীর্বাদ তোমাদের মাথার উপর না থাকত, তাহলে আজ তোমরা কোথায় থাকতে? বিজেপির হিন্দুত্ব প্রশ্নে তোপ দেগে উদ্‌ধব বলেন, আমি হিন্দুত্ব ত্যাগ করিনি, বরং মারাঠি গৌরবের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। হিন্দুত্ব কোনও ভাষার একচেটিয়া সম্পত্তি নয়। আমরা যারা খাঁটি মারাঠি ভাষায় কথা বলি, তারা তোমাদের চেয়েও বড় দেশপ্রেমিক হিন্দু।

ফড়নবীসের “গুণ্ডামি বরদাস্ত করা হবে না” মন্তব্যের জবাবে উদ্‌ধব বলেন, যদি মহারাষ্ট্রে কেউ নিজের ভাষা মারাঠির পক্ষে কথা বলে, আর তাকে গুণ্ডা বলা হয়, তাহলে আমরাই গুণ্ডা। মুম্বই আমাদের অধিকার, আমরা লড়ে তা আদায় করেছি। তিনি আরও বলেন, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপে আমরা সমর্থন করেছি। কিন্তু আমরা হিন্দি চাপাই না। কিন্তু যদি কেউ মারাঠিকে অপমান করে, আমরা চুপ থাকব না।

উদ্ধব ঠাকরে কটাক্ষ করে বলেন, অনেকে বলেন, আমাদের এম মানে মারাঠি নয়, এম মানে মিউনিসিপ্যালিটি (পৌরসভা)। কিন্তু আমাদের কাছে এম মানে মহারাষ্ট্র। সমাবেশের শেষদিকে উদ্‌ধব ঠাকরে বলেন, ক্ষমতা একদিন আসবে, একদিন যাবে। কিন্তু যদি ঐক্য থাকে, তাহলে মহারাষ্ট্র ও মারাঠি কখনও মাথা নিচু করবে না।

রাজ ও উদ্‌ধব ঠাকরের এই ঐক্য মারাঠি চেতনার প্রশ্নে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণ এবং হিন্দি ভাষা চাপানোর প্রতিবাদে এই সমাবেশ যে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলবে, তা স্পষ্ট।

Leave a Reply