বার্লিন জুনিয়র ইউরোপিয়ান কাপ ২০২৫-এ ইতিহাস গড়লেন মণিপুরের লিন্থোই চানামবাম, স্বর্ণজয়ী প্রথম ভারতীয় জুডোকা

ইম্ফল, ২৩ জুন : ভারতের ক্রীড়াজগতের ইতিহাসে এক গর্বের অধ্যায় রচনা করলেন মণিপুরের কিশোরী লিন্থোই চানামবাম। বার্লিন জুনিয়র ইউরোপিয়ান কাপ ২০২৫-এ -৬৩ কেজি বিভাগে স্বর্ণপদক জয় করে তিনি হয়ে উঠেছেন এই প্রতিযোগিতায় সোনা জয়ী প্রথম ভারতীয় জুডোকা। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এই সাফল্য লিন্থোইকে পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চের শীর্ষে, এবং ভারতীয় জুডোর ইতিহাসে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে।

জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টে বিশ্বের ৩৭টি দেশের ৬১৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে লিন্থোই প্রদর্শন করেছেন অসাধারণ পারফরম্যান্স। ইনস্পায়ার ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্টস (আইআইএস)-এর প্রতিনিধিত্ব করা এই তরুণী একে একে পরাজিত করেছেন অভিজ্ঞ এবং উচ্চমানের আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষদের। ফাইনালে তিনি মুখোমুখি হন ফ্রান্সের চিপান জায়লিনের। কঠিন লড়াইয়ে লিন্থোই তাঁর কৌশল, ধৈর্য এবং মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন এবং সোনার পদক অর্জন করেন।

পদক জয়ের পর এক আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় লিন্থোই বলেন, “এই জয় আমার জীবনের সব কিছু। আমি আমার কোচ, পরিবার এবং সমর্থকদের কাছে কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমাকে এতদূর পৌঁছতে সাহায্য করেছেন।” তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয় মাত্র আট বছর বয়সে, মণিপুরের মায়াং ইম্ফালে। ২০১৭ সাল থেকে তিনি আইআইএস-এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, যেখানে তাঁকে গড়ে তুলেছেন জর্জিয়ান কোচ মামুকা কিজিলাশভিলি।

এর আগেও আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে লিন্থোই তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০২২ সালে সারায়েভোতে অনুষ্ঠিত ক্যাডেট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে -৫৭ কেজি বিভাগে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। একই বছর ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ক্যাডেট ও জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপেও তিনি জিতেছিলেন সোনা। জাতীয় স্তরে তিনি প্রথম নজরে আসেন ২০১৮ সালের সাব-জুনিয়র ন্যাশনালস এবং ২০২১ সালের সিনিয়র ন্যাশনালস (চণ্ডীগড়)-এ সাফল্য পেয়ে।

লিন্থোই চানামবামের এই জয় কেবলমাত্র একটি স্বর্ণপদকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারতের জুডো স্পোর্টসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। তরুণ এই ক্রীড়াবিদ ইতোমধ্যেই ২০২৮ সালের অলিম্পিককে লক্ষ্য করে এগোচ্ছেন। তাঁর বর্তমান ফর্ম এবং ধারাবাহিক উন্নতি দেখে মনে করা হচ্ছে, অলিম্পিকে ভারতের জন্য পদক এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম সম্ভাবনাময় মুখ। লিন্থোইর এই কৃতিত্ব শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতের নয়, গোটা দেশের জন্য গর্বের বিষয়, এবং ভবিষ্যতের প্রতিটি জুডোকার জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *