নয়াদিল্লি, ৮ মে – এলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিঙ্ক অবশেষে ভারত সরকারের কাছ থেকে গ্লোবাল মোবাইল পার্সোনাল কমিউনিকেশন বাই স্যাটেলাইট লাইসেন্সের জন্য অনুমোদন সংক্রান্ত লেটার অফ ইন্টেন্ট পেয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে আবেদন জমা দেওয়ার পর এই ছাড়পত্র স্টারলিঙ্ককে ভারতের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করার পথ খুলে দিচ্ছে।
ভারতের বৃহৎ জনসংখ্যা, বিস্তৃত গ্রামীণ অঞ্চল এবং এখনও পর্যন্ত অনলাইনের বাইরে থাকা বহু সম্প্রদায়ের জন্য স্টারলিঙ্ক হতে পারে এক বিপ্লবী সংযোগ মাধ্যম। লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে স্টারলিঙ্ক দুর্বার গতিতে টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং এবং ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ পৌঁছে দিতে পারে গ্রামবাংলায়।
স্টারলিঙ্কের প্রবেশ দেশের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট খাতে নতুন প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে হিউজ, ওয়ানওয়েব, রিলায়েন্স জিও এবং অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার। যদিও মাস্কের স্টারলিঙ্ক ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী এই পরিষেবায় অগ্রগামী, ভারতেও তাদের ফার্স্ট-মুভার অ্যাডভান্টেজ থাকতে পারে।
ভারতের দুই বৃহৎ টেলিকম সংস্থা এয়ারটেল ও জিও ইতিমধ্যেই স্পেসএক্সের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে স্টারলিঙ্ক পরিষেবার সম্ভাব্য বাস্তবায়ন নিয়ে।
এয়ারটেল তার রিটেল আউটলেট, এন্টারপ্রাইজ পরিষেবা ও গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্টারলিঙ্ক টার্মিনাল ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, জিও এবং স্পেসএক্স যৌথভাবে খতিয়ে দেখছে কীভাবে স্টারলিঙ্কের প্রযুক্তি তাদের ব্রডব্যান্ড পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনুমোদন যেমন বড় পদক্ষেপ, তেমনই এর বাস্তবায়নে রয়েছে বড়সড় চ্যালেঞ্জও। ডেটা লোকালাইজেশন, স্থানীয় উৎপাদন, দেশের ন্যাভিগেশন সিস্টেমের ব্যবহার, সুরক্ষা বিধিনিষেধ সহ একাধিক দিক মেনে চলতে হবে স্টারলিঙ্ককে।
📜 সম্প্রতি দূরসংযোগ বিভাগ জারি করেছে নতুন নির্দেশিকা, যেখানে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে স্যাটেলাইট পরিষেবা সংস্থাগুলিকে।
সবচেয়ে আশাজনক দিক হলো, স্টারলিঙ্কের ডাইরেক্ট-টু-সেল প্রযুক্তি সাধারণ LTE স্মার্টফোনেই কাজ করবে, কোনও আলাদা যন্ত্র কেনার প্রয়োজন হবে না। এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারত, লাদাখ সহ দুর্গম এলাকাগুলিতে পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
টেকইনসাইটস-এর বিশ্লেষক মানীশ রাওয়াত জানান, “ভারতের মতো একটি নিয়ন্ত্রিত বাজারে বিদেশি স্যাটেলাইট সংস্থার অনুমোদন এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।”
টেকআর্কের প্রধান বিশ্লেষক ফয়সাল কাঠুসা বলেন, “এটি ভারতের SATCOMM যাত্রার মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। স্টারলিঙ্ক শুধু ইন্টারনেট নয়, বরং একটি ‘মাস্ক ম্যাজিক’ নিয়ে আসবে।”
অভিলাষ কুমার, টেকইনসাইটস বিশ্লেষক মনে করেন, “স্টারলিঙ্ক সরাসরি মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ এনে দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিকে প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক করে তুলতে পারবে।”
স্টারলিঙ্কের ভারত আগমন নিঃসন্দেহে দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গঠনে একটি বড় পদক্ষেপ। যদিও মাঠে নামতে আরও কিছু সময় লাগবে, তবে একবার চালু হলে এটি হতে পারে ভারতের গ্রাম ও শহরের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য ঘোচানোর অন্যতম হাতিয়ার।