নয়াদিল্লি, ৮ মে : বিশ্বের প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি সাতজন পুরুষের মধ্যে একজন ১৫ বছর বা তার কম বয়সে যৌন সহিংসতার শিকার হন। এমনই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই) এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ২০ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের ৬৭ শতাংশ এবং পুরুষদের ৭২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রথম যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন শৈশবেই, ১৮ বছরের আগেই।
প্রায় ৪২ শতাংশ নারী এবং ৪৮ শতাংশ পুরুষ জানান, ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তারা এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হন। আরও আশঙ্কাজনক তথ্য হল, ৮ শতাংশ নারী এবং ১৪ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, ১২ বছর বয়সের মধ্যেই তারা যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হন।
আইএইচএমই-এর অধ্যাপক ও গবেষণার বরিষ্ঠ লেখক ড. ইমানুয়েলা গাকিদু বলেন, “শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জনস্বাস্থ্য সংকট। বিশ্ব এই সমস্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এত অল্প বয়সে এত বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক, এবং এর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।” এই গবেষণাটি ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২০৪টি অঞ্চলের বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যা গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ গবেষণার অংশ।
গবেষণা আরও বলছে, শিশু যৌন নির্যাতনের শিকাররা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, মাদকাসক্তি, যৌন সংক্রমণ এবং এমনকি হাঁপানির মতো জটিল রোগে ভুগতে পারেন। এর প্রভাব পড়ে সামাজিক বিকাশ, শিক্ষাগত অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সাফল্যেও।
আইএইচএমই-এর সহকারী অধ্যাপক ড. লুইসা ফ্লোর বলেন, “এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে হলে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও সহায়তা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যাতে শিশুদের জীবনে এই অভিজ্ঞতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কমে।” গবেষণায় আরও জানা যায়, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে তথ্য সংগ্রহে ঘাটতি এবং পরিমাপে অসঙ্গতি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতার নির্ভরযোগ্য তথ্য রেকর্ড ও বিশ্লেষণের জন্য বৈশ্বিকভাবে একক মানদণ্ড স্থাপন করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ, রিপোর্টিং এবং সঠিক সহায়তা প্রদান আরও কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা যাবে এবং শিশুর সুরক্ষায় আরও শক্তিশালী নীতি গ্রহণ সম্ভব হবে।
—