BRAKING NEWS

তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মোদী, ২০২৬-এর আগেই হাইলাকান্দিতে মেডিক্যাল কলেজ : মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব

– ‘বিজেপির আমলে বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সম-উন্নয়ন হচ্ছেকংগ্রেসের শাসনামলে টাকা দিয়ে চাকরি কিনতে হতো

– ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে হিন্দু বাঙালিদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান

– বরাকের দুটি লোকসভা আসনে দলীয় প্রার্থীর সমৰ্থনে দিনভর ম্যারাথন সভায় মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব

শিলচর (অসম)১৮ এপ্রিল (হি.স.) : নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই। এবারের লোকসভা নির্বাচনের বিশেষত্ব রয়েছে। কারণ এবার কোনও দল বা প্রার্থী ভিত্তিক নির্বাচন হবে না। মূলত নরেন্দ্র দামোদর মোদী বনাম রাহুল গান্ধীর মধ্যে লড়াই। কে হবেন দেশের পরবর্তী সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী? আর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর ন্যূনতম তুলনা হয় না। সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে আস্থা ভরসা ও বিশ্বাসের পাত্র হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। পৃথিবীর সমস্ত দেশের রাষ্ট্ৰনায়কদের কাছে নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাই নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে প্রত্যেক এলাকায় পদ্মফুল চিহ্ণে ভোট দিতে দেশের ভোটাররা মুখিয়ে রয়েছেন। বক্তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

আজ বৃহস্পতিবার বরাক উপত্যকার শিলচর (তফশিলি জাতি সংরক্ষিত) এবং করিমগঞ্জ (সাধারণ) দুটো আসনে বিজেপি প্রার্থীদের পালে হাওয়া তুলতে একদিনে ম্যারাথন নির্বাচনী সমাবেশে উদাত্ত ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। সব কয়টি জনসভাস্থল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী করিমগঞ্জ আসনের অন্তর্গত কাটলিছড়া (হাইলাকান্দি জেলা) ও নিলামবাজার (করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত দক্ষিণ করিমগঞ্জ বিধানসভা এলাকাধীন) এবং শিলচরের কাটিগড়া ও উধারবন্দে পৃথক পৃথক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। হাইলাকান্দির কাটলিছড়া এবং দক্ষিণ করিমগঞ্জের নির্বাচনী সভা শেষ করে চপারে চেপে কাটিগড়ার হিলাড়া ফুটবল ময়দানে আয়োজিত বিজয় সংকল্প সমাবেশে বেলা ২.৩৫ মিনিটে উপস্থিত হন রাজ্যের স্টার ক্যাম্পেনার।

তাঁর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ‘নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ , বিজেপি জিন্দাবাদ, মামা জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে সব সমাবেশ চত্বর। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সনসভাগুলিতে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, আগামী ২৬ এপ্রিল শিলচরের লোকসভা নির্বাচনে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? মোদী এবং রাহুলের মধ্যে লড়াই। শিলচরের বিজেপি-প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্যকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসানোর প্রয়োজন রয়েছে। বিজেপি ছাড়া অন্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর অপচেষ্টা মাত্র।

তিনি বলেন, বিজেপি ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকারের অপপ্রয়োগ করা যুক্তিহীন। কারণ নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হচ্ছেনই। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অবাস্তব ও অযৌক্তিক। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করতে বিজেপি-প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্যকে পদ্মফুল চিহ্ণে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।

ড. শর্মা বলেন, শিলচর-সৌরাষ্ট্র, কাশ্মীর-কন্যাকুমারী মহাসড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বিজেপি সরকার বদ্ধপরিকর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমে অসমের ১৪টি আসনের মধ্যে ১১ আসনে জয়ের ধারণা করা হলেও বিগত কিছুদিন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে জনগণের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখে এখন নিশ্চিত মনে হচ্ছে, ১৪-এর মধ্যে ১৪টি আসনেই বিজেপি ও জোটপ্ৰাৰ্থীরা বিজয়ী হবেন।

বলেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন সর্বত্র বিজেপির পরিপন্থী পরিবেশ ছিল। কিন্তু বিগত দশ বছরে অসমে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শুধুমাত্র মোদীজির আশীর্বাদে ব্যাপক উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্যে। অসমে বিগত দশ বছরে সম্পূর্ণভাবে শান্তি ও বিকাশের নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যে এখন কোনও ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বনধ-হরতাল, আন্দোলন নেই।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপির আমলে বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সম-উন্নয়ন হচ্ছে। কংগ্রেস বরাক উপত্যকার সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছিল। কংগ্রেসের শাসনামলে টাকা দিয়ে চাকরি কিনতে হতো। এখন এক পয়সা খরচ না করে অসমের যুবক-যুবতীরা চাকরি পাচ্ছেন। বিগত নির্বাচনের আগে এক লক্ষ সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। যথারীতি গত তিন বছরে এক লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের বিনামূল্যে যোগ্যতার নিরিখে সরকারি চাকরি প্রদান করা হয়েছে। এবারও ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৫০ হাজার সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।

সরকারি প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৩০ লক্ষ সুবিধাভোগীকে অরুণোদয়-এর টাকা দেওয়া হচ্ছে। অসমে ৬২ লক্ষ পরিবার আছে। নির্বাচনের পর বাকি রেশন কার্ডভুক্ত পরিবারগুলোকে অরুণোদয় দেওয়া হবে। এটা হচ্ছে মোদী-কা গ্যারান্টি, সাথ মে মামা-কা ওয়ারেন্টি। মোদীর গ্যারান্টির পাশাপাশি পাঁচ কেজি চাল, উজ্জ্বলা গ্যাস, আয়ুষ্মান প্রকল্পে স্বাস্থ্য বিমা, প্রত্যেক ঘরে অরুণোদয়, লাখপতি ভাইদেও (দিদি) প্রকল্প প্রভৃতি মামার ওয়ারেন্টির এক্তিয়ারভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, রাজ্যে বছরে ৫ লক্ষ ছেলেমেয়ে মেট্রিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। এর মধ্যে তিন লক্ষ উত্তীর্ণ প্রত্যেক ছেলেমেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তি মাশুল সরকার বহন করবে। প্রত্যেক ছাত্রীর ব্যাংক আ্যাকাউন্টে দশ হাজার দেওয়া হবে পড়াশোনার আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে। খুশির বিষয় হলো, অসমের অরুণোদয় প্রকল্প দেশের কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় অনুসরণ করছে। অসমের ওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে।

হাইলাকান্দির জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ২০২৬ সালের আগে হাইলাকান্দিতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন হবে। এতে বরাক উপত্যকা তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পাবে। দীর্ঘ ৭০ বছরে কংগ্রেস সমগ্র অসমে তিনটির বেশি মেডিক্যাল কলেজের স্বপ্ন দেখতে পারেনি। এভাবে প্রতি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা সাহস নেই কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলোর।

ড. শর্মা বলেন, জাগিরোড এবং পাঁচগ্রাম, দুটি পেপার মিল বন্ধ হওয়ার পর উভয় মিলের কর্মচারীদের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে সরকার। জাগিরোডে ৩০ হাজার কোটি ব্যয়ে বিশাল শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৫ হাজার কর্মচারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে পাঁচগ্রাম পেপার মিলের জমিতে বিশেষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তোলা হবে।

২০২৬ সালের আগে বরাকের মিনি সেক্রেটারিয়েট ভবন উদ্বোধন এবং মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন করার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন। কিন্তু মমতার দলের বা কংগ্রেসের সরকার কখনও হবে না। মোদী সরকারই হবে দেশে।

আজকের দিনে একজনও ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি নেই বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাঙালিদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাঙালি হিন্দুর সব রকমের সমস্যার নিরসন হবে। শিলচরের দলীয় প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্যের প্রসঙ্গে বলেন, পরিমলদার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে। তাই ভদ্র সজ্জন রাজনৈতিক পরিপক্ব ব্যক্তিত্ব পরিমল শুক্লবৈদ্যকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে বরাক তথা অসমের সার্বিক বিকাশকে ঊর্ধ্বগামী করতে সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা।

সমাবেশগুলিতে ভাষণ দিয়েছেন প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিজেপির কাছাড় জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়, প্রভারী বিশ্বরুপ ভট্টাচার্য, সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়, লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক কৌশিক রায়, নিবাস দাস, প্রাক্তন বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন, মণ্ডল সভাপতি তপন মুহুরি, নিত্যগোপাল দাস, সুব্রত চক্রবর্তী, বিপ্লবকান্তি পাল, বিশালাক্ষ দেব, বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি নির্মলেন্দু চৌধুরী, দীপক দে প্রমুখ।

এদিকে করিমগঞ্জ আসনে দলীয় তথা জোটপ্রার্থী বর্তমান সাংসদ কৃপানাথ মালার সমর্থনে দক্ষিণ করিমগঞ্জের নিলামবাজার এবং কাটলিছড়ায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাথরকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল, রাতাবাড়ির বিধায়ক বিজয় মালাকার, প্রাক্তন বিধায়ক তথা এএসটিসি-র চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস, করিমগঞ্জ জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ বহুজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *