BRAKING NEWS

১৪ মে শিলচর ‘বরাক সংহতি উৎসব’ পালনের সিদ্ধান্ত পূর্বাচল জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির


শিলচর (অসম), ৪ মে (হি.স.) : বরাকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বকীয়তা রক্ষার লক্ষ্যে ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করেছিল ‘পূর্বাচল জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। ইতিমধ্যে এই উপত্যকা তথা বহির্বরাকের বিভিন্ন বিশিষ্ট, বিদগ্ধ ব্যক্তিদের যোগদান, পরামর্শ ও সহযোগিতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই সংগঠন।‌ এবার বরাকের সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আগামী ১৪ মে শিলচরের গান্ধী ভবন প্রেক্ষাগৃহে সারাদিন ব্যাপী ‘বরাক সংহতি উৎসব’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সংগঠনের কর্মকর্তারা।

আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় পেনশনার্স ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ ব্যাপারে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘পূর্বাচল জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’-র সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন সময়ে সামাজিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণে বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এসেছে এবং আবহমান কাল ধরে বসবাস করে আসছেন। এই সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে কখনও তেমন বিভেদ, বিভাজনের প্রসঙ্গ আসেনি বরং পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও নির্ভরতার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি আরও নিবিড় হয়েছে। কিন্তু ইদানীং রাজনীতির কারবারিরা নিজেদের ন্যস্তস্বার্থে সুকৌশলে এই উপত্যকার ভাষিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজনের বীজ বপন করার চেষ্টা করছেন। তা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে আবার এক মঞ্চে আসতে হবে, হাতে হাত ধরতে হবে। বরাকের এই ঐক্যের ঐতিহ্যকে আগলে রাখার জন্যই এই ‘বরাক সংহতি উৎসব’ পালনের সিদ্ধান্ত।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ বলেন, জনবিন্যাসের সামূহিক বৈচিত্র্যের নিরিখে বরাক উপত্যকাকে ‘মিনি ভারত’ বলা যেতে পারে। কুকি, নাগা, কোচ, মণিপুরি, ডিমাসা, বিষ্ণুপ্রিয়া, খাসি সহ প্রায় ১৮টি জনগোষ্ঠীর বাসভূমি এই উপত্যকা। এ সব প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ কৃষ্টি, সংস্কৃতির সমন্বয়ে এই উপত্যকার স্বকীয় বহুমুখী সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। সাধনবাবু বলেন, আগামী ১৪ মে-র অনুষ্ঠানে এ সমস্ত জনগোষ্ঠী তাঁদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। তাই এদিনের উৎসবকে একটি সাংস্কৃতিক সমারোহ বলা যেতে পারে। তিনি বলেন পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতির যে দীর্ঘ ঐতিহ্য এই উপত্যকায় রয়েছে, এদিনের উৎসবে তাই আরও সুদৃঢ় হবে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।
পূর্বাচল জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সহ-সভাপতি কৃশাণু ভট্টাচার্য উৎসবের রূপরেখা জানাতে গিয়ে বলেন, বিশিষ্ট জনের উপস্থিতিতে উদ্বোধনের পর এদিন অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। বিকালে থাকবে মতবিনিময় সভা। বিষয় – ‘আধিপত্যবাদের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ বহুভাষিক বরাক উপত্যকার ভূমিকা – অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন উপত্যাকার বিশিষ্ট নবীন ও প্রবীণ শিল্পীরা। কৃশাণু আরও বলেন, ১৯ মে-র প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে উনিশের মাতৃভাষা আন্দোলনের বহুভাষিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে। তিনি এতে সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।

বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দিলীপ সিনহা ও খাইদেম কান্ত সিং বহুভাষিক বরাকের ঐক্য ও সংহতির ইতিহাস তুলে ধরে এদিনের অনুষ্ঠানে সবাইকে অংশগ্রহণ ও উপস্থিত থাকতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া সংগঠনের আরেক প্রবীণ সদস্য তথা সমাজকর্মী আইনুল হক মজুমদার বলেন, এই উৎসবের সাথে রাজনীতির কোনও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। তাই তিনি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এই উৎসব উপভোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হৃষীকেশ দে, গোরা চক্রবর্তী, দেবায়ন দেব, নবারুণ দে চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *