BRAKING NEWS

অভিবাসী নির্বাচকদের জন্য রিমোট ভোটিং পাইলট প্রক্রিয়া চালু করতে প্রস্তুত ভারতের নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর৷৷ ভারতের নির্বাচন কমিশন অভিবাসী নির্বাচকদের জন্য রিমোট ভোটিং পাইলট প্রক্রিয়া হিসেবে চালু করতে প্রস্তুত৷ অভিবাসী নির্বাচকদের তাদের নিজস্ব রাজ্যে গিয়ে ভোট দিতে হবে না৷ ইসিআই এক মাল্টি কনস্টিটুয়েন্সি রিমোট ইলেকট্রনি’ ভোটিং মেশিন তৈরি করেছে৷ এই প্রোটোটাইপ আরভিএম-এর ব্যবহার প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷
একটি দূরবর্তী ভোটকেন্দ্র থেকে একাধিক নির্বাচন ক্ষেত্রের নির্বাচন আরভিএম-এর মাধ্যমে করা যাবে৷ এই নতুন পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কিত আইনি, পরিচালনগত, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির অভিমত জানার জন্য ইসিআই একটি কনসেপ্ঢ নোট বিলি করেছে৷
আজ প্রযুক্তি যখন এত উন্নত তখন স্থানান্তকরণের কারণে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া একটা কাম্য সমাধান নয়৷ ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মোট ৬৭.৪ শতাংশ৷ ৩০ কোটিরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে না এবং কোথাও অনিয়মিত ভোট পড়ছে, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ৷ দেখা গেছে বিভিন্ন কারণে এখন ভোটার নতুন জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তি থেকে বিরত থাকছে৷ তাই নিজের ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারছে না৷ নির্বাচনে বেশি পরিমাণে ভোট প্রদান ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে যেসব সমস্যার সমাধান করতে হবে তারমধ্যে রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে থাকা অভিবাসী ভোটার যারা ভোট দিতে পারছে না৷ যদিও এবিষয়ে কোনও কেন্দ্রীভূত তথ্য বা পরিসংখ্যান নেই, তবুও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য এটাই প্রতিভাত করে যে, কাজ, বিবাহ, কিংবা শিক্ষা সংক্রান্ত কারণে মূলত: ভোটারদের স্থানান্তরন ঘটে৷ তারমধ্যে গ্রামীণ এলাকার ক্ষেত্রে মূলত বহিস্থানান্তরন পরিলক্ষিত হয়৷ প্রায় ৮৫ শতাংশ স্থানান্তরন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মধ্যেই ঘটে৷
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই শ্রীকুমার চামোলি জেলার ডমুক গ্রামে ভ্রমণে গিয়ে সরাসরি অভিবাসী ভোটারদের কথা জানতে পারেন এবং তখন থেকেই তিনি তারা যাতে বর্তমান বাসস্থান থেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেদিকে নজর দেন৷ তা করতে গেলে যে বিভিন্ন আইনি, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয় রয়েছে সে ব্যাপারে ইসিআইএর দল বিস্তারিত আলোচনা করেছে, যাতে সমাজের সমস্ত স্তরের অভিবাসী ভোটারগণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে৷ উভয়মুখী পোস্টাল ব্যালট, প্রি’ ভোটিং, বিশেষ কেন্দ্রে প্রাথমিক ভোটিং, পোস্টাল ব্যালটের বৈদ্যতিন উপায়ে একমুখী / উভয়মুখী ট্রান্সমিশন (ইটিপিবিএস), ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভোটদান ইত্যাদি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ সমস্ত অংশীদারদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য, সহজগম্য এবং গ্রহণযোগ্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার শ্রী রাজীব কুমারের নেত’ত্বে নির্বাচন কমিশনার শ্রী অনুপ চন্দ্র পাণ্ডে এবং শ্রী অরুণ গোয়েল নির্ভরযোগ্য এমথি-ইভিএম-এর একটি নতুন সংস্করণ ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছেন যাতে দূরবর্তী এলাকার ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটদান সম্ভব হয়৷ ভোটদান দেশীয় অভিবাসীদের জন্য সম্ভব হয়৷ এইভাবে অভিবাসী ভোটারদের তাদের নিজ জেলায় ফিরে যেতে হবে না৷
রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নিজের এলাকার বাইরে থেকেও দেশীয় অভিবাসী নির্বাচকরা যাতে এই সুুযোগ গ্রহণ করতে পারে সেজন্য অভিবাসীদের নির্বাচক হিসেবে চিহ্ণিত করা, আদর্শ আচরণবিধি বাস্তবায়ন, ভোটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা, ভোটাদের সনাক্তকরণের জন্য পোলিং এজেন্টদের সুুবিধা, দূরবর্তী ভোটদানের প্রক্রিয়া, পদ্ধতিগত ও ভোটগণনা ইত্যাদি সমস্যাগুলির বিষয়ে একটি ধারণা পত্র বিলি করা হয়েছে৷
আইনি বাধা :
* আইন / বিধি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা
* আরপি অ্যাক্ট ১৯৫০ এবং ১৯৫১
* নির্বাচনী বিধিমালা ১৯৬১-র পরিচালনা
* ভোটারদের নিবন্ধন নিয়ম ১৯৬০
অভিবাসী ভোটার চিহ্ণিতকরণ :
* ভোটের দিন অনুপস্থিতি থেকে শুরু করে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে
* আসল বাসস্থানের এলাকায় নথিবদ্ধ রাখা এবং অস্থায়ী অনুপস্থিতির আইনি দিক৷
দূরবর্তী ভোটদান সংজ্ঞায়িত করা :
* আ’লিক নির্বাচনী ক্ষেত্র বিষয়ক সমস্যাবলীর সমাধান করা
* দূরবর্তী ভোটদানের সংজ্ঞা : নির্বাচনী এলাকার বাইরে, জেলার বাইরে বা রাজ্যের বাইরে
প্রশাসনিক বাধা :
* দূরবর্তী ভোটারদের স্বঘোষণা ?
* নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ প্রদান – দূরবর্তী স্থানগুলিতে ভোটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা৷
* দূরবর্তী ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ব্যবস্থা করা এবং নকল ভোটারের সমস্যা এড়াতে ভোটারদের সনাক্তকরণ নিশ্চিত করা৷
* ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ও স্থান
* প্রত্যন্ত ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মী নিয়োগ ও তত্ত্বাবধান৷
* দূরবর্তী এলাকায় মডেল কোড অব কণ্ডাক্ট (নির্বাচনী আচরণবিধি) বাস্তবায়ন (অন্যান্য রাজ্য)      
প্রযুক্তিগত বাধা :
* দূরবর্তী ভোটদানের পদ্ধতি
* পদ্ধতি / মাল্টি কনস্টিটুয়েন্সি রিমোট ইভিএম অথবা অন্য কোনও প্রযুক্তির সাথে ভোটারদের পরিচিতি৷
* দূরবর্তী ভোটকেন্দ্রে গৃহীত ভোটের গণনা এবং অন্য রাজ্যে অবস্থিত আরওকে প্রেরণ৷
একটি পাবলিক সেক্টর আণ্ডার টেকিংয়ের সহযোগিতায় কমিশন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থানকারীদের বর্তমান আবাসস্থল থেকে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় ভোট দেওয়ার জন্য একটি মাল্টি কনস্টিটুয়েন্সি রিমোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পাইলট ব্যবস্থা হিসেবে চালু করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে৷
ইভিএমের এই পরিবর্তিত রূপটি একটি দূরবর্তী ভোটকেন্দ্র থেকে ৭২টি ক্ষেত্রের নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে৷ এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে ভোটারদের জন্য একটি সামাজিক পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং তারা তাদের নিজস্ব এলাকার সাথে যুক্ত থাকার অনুভূতি পেতে পারে৷ ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন, পর্যাপ্ত সামাজিক ও মানসিক সংযোগ না থাকার কারণে অনেকে কাজের জায়গায় নিজেদের তালিকাভুক্ত করতে অনিচ্ছক হয়৷ এছাড়াও নিজেদের স্থায়ী বাসস্থান, সম্পত্তি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে বলে তারা অনেকে নাম মুছে ফেলতে অনিচ্ছক৷
কমিশন ১৬-০১-২০২৩ তারিখে সমস্ত স্বীকৃত ৮টি জাতীয় এবং ৫৭টি রাজ্য রাজনৈতিক দলকে বহু নির্বাচনী প্রোটোটাইপ রিমোট ইভিএমের কার্যকারিতা প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ কারিগরি বিশেষ’ কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন৷ কমিশনের পক্ষ থেকে ৩১-০১-২০২৩ এর মধ্যে স্বীক’ত রাজনৈতিক দলগুলির লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তন, প্রশাসনিক পদ্ধতি, ভোটদানের পদ্ধতি, আরভিএম প্রযুক্তি ইত্যাদি রয়েছে৷ বিভিন্ন অংশীদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়া এবং প্রোটোটাইপের প্রদর্শনের ভিত্তিতে কমিশন যথাযথ দূরবর্তী ভোটিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *