BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় উপজাতি দলগুলি বুদ্বুদের মত হারিয়ে যায়, দশরথের মুখ্যমন্ত্রীত্বে বিদ্রোহী হয়েছিলেন নৃপেন

৷৷ পরিতোষ বিশ্বাস ৷৷

ত্রিপুরার উপজাতিদের অবিসম্বাদিত নেতা দশরথ দেব রাজন্য আমল থেকেই সংগ্রাম আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন৷ তিনি কুমিল্লার কলেজে পড়াশুনা করেছেন৷ তারপরেই তিনি উপজাতিদের স্বার্থে আন্দোলন শুরু করেন৷ মহারাজার বিরুদ্ধে তিনি সশস্ত্র আন্দোলনের পথ হাটেন৷ দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপন করেছিলেন৷ মহারাজা দশরথ দেবের মাথার দামও ঘোষণা করেছিলেন৷ দশরথ দেব উপজাতিদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে রাজবাহিনী  চেষ্টা করেও হদিশ পেত না৷  ত্রিপুরার রাজা উপজাতিদের জন্য কিছুই করেনি এই অভিযোগ কমিউনিস্ট পার্টি বরাবরই করে এসেছে৷ ফলে, মহারাজার গুনকীর্তণ কিংবা মহারাজার স্মরণে কোনও কিছু করার উদ্যোগ বামফ্রন্ট সরকারের ছিল না৷ ২০১৮ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এসে মহারাজার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে৷

আগারতলা বিমানবন্দরে ত্রিপুরার মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদূরের মর্মর মূর্তি প্রতিষ্ঠা পায়৷ মর্মর মুর্র্তি উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ আগরতলা বিমানবন্দরের নামও রাখা হয় মহারাজা বীরবিক্রমের নামে৷ এখনও উপজাতিদের মধ্যে ত্রিপুরার মহারাজার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে৷ মহারাজাকে তারা দেবতুল্য মনে করেন৷ সিপিএমের এই রাজ বিরোধীতা উপজাতিদের একটা অংশকে ক্ষুব্ধ করেছে একথা বোধহয় অস্বীকার করা যাবে না৷ ত্রিপুরা ভারতভুক্তির পর দশরথ দেব আত্মগোপনেই থেকে যান৷ ১৯৫২ সালে লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার একটি মাত্র আসনে দশরথ দেব আত্মগোপনে থেকেই প্রতিদ্বদ্বিতা করেন এবং জয়লাভ করে গোপনে দিল্লীতে পার্লামেন্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন৷ ত্রিপুরায় ১৯৫২ সালের পর থেকে লোকসভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীরাই জয়ী হতেন৷ ত্রিপুরার মানুষ লোকসভায় কমিউনিস্ট প্রার্থীকে জয়ী করত৷ রাজ্যে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় বসাত৷
কংগ্রেস তখন মহারাজ কিরিট বিক্রমের দ্বারস্থ হয়৷ কিরীট বিক্রম যতবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন জয়ী হয়েছেন৷ তার বড় কারণ উপজাতিদের রাজভক্তি৷ এখন সেই রাজাও নেই, সেই রাজত্বও নেই৷ ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দেশে রাজন্য ভাতা বিলোপ করে দেন৷ ভারতবর্ষের বহু রাজা তখন প্রমাদ গুনেন৷ ত্রিপুরার মহারাজার উত্তরসূরিরা রাজবাড়িটাই বিক্রি করে দিলেন৷ এই গহন রাজ্য ত্রিপুরায় উপজাতি অংশের মানুষ এখনও রাজভক্তিতে অটুট আছেন৷ আর এজন্যই কোনও রাজনৈতিক দল রাজার শাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরতে সাহস পায় না৷ রাজন্য শাসনের ব্যর্থতার ইতিহাস আছে৷ ত্রিপুরা যদি তখন রাজন্য শাসিত না হত, সারাসরি ইংরেজ রাজত্ব কায়েম হত তাহলে উন্নয়নে অতটা ঘাটতি দেখা দিত না বলা যেতে পারে৷  ভারতবর্ষকে ইংরেজরা শোষণ করেছে যেমন তেমনি উন্নয়ন মূলক কাজও করেছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না৷ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দূর্বল মহারাজা ত্রিপুরার উপজাতিদের উন্নয়নে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেননি৷ এই ইতিহাস অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই৷


ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠালগ্ণ থেকে মুখ্যমন্ত্রীত্ব করেন নৃপেন চক্রবর্তী৷ যখন পলিটব্যুরোর নির্দেশে দশরথ দেব মুখ্যমন্ত্রীত্বে অভিষিক্ত হন তখন নৃপেন চক্রবর্তী সহজে মেনে নিতে পারেননি৷ সর্বহারা কমিউনিস্ট নেতা নৃপেন চক্রবর্তীও সুখ ভোগে আসক্ত হয়েছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর তিনি কার্য্যত বিদ্রোহ করেন৷ প্রকাশ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নিন্দায় সরব হন৷ তিনি কংগ্রেসের জনসভা মঞ্চেও উপবিষ্ট হন৷ দল বাধ্য হয়ে তাঁকে বহিসৃকত করে৷ নৃপেন চক্রবর্তী আগরতলা দুই নম্বর এমএলএ হোস্টেলে দিন কাটাতেন৷ কমিউনিস্ট দলের জন্য যিনি সারাটা জীবন বিলিয়ে দিলেন সেই নৃপেন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়াকে মেনে নিতে পারলেন না৷ এই বর্ষিয়ান কমিউনিস্ট নেতা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলেন৷ সেবা, চিকিৎসা তাঁর ভাগ্যে কতটা জুটেছে তা আন্দাজ করা যেতে পারে৷ জিবি হাসপাতালের আইসিইউতে এই নেতার জীবনাবসান হয়৷ সঙ্গে সঙ্গে সিপিআইএম ঘোষণা দেয় যে নৃপেন চক্রবর্তীকে আবার দলে নেয়া হল৷ নৃপেন চক্রবর্তী জানতেও পারলেন না মৃত্যুর পর তিনি দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন৷ এই সর্বহারা নেতার মরদেহ পার্টি অফিসে এনে লাল কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল৷ একজন সংগ্রামী উপজাতি নেতা দশরথ দেবের মুখ্যমন্ত্রীকে মেনে না নিয়ে নৃপেন চক্রবর্তী নিজের দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনকেই ছোট করেছেন৷ (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *