BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় উপজাতি দলগুলি বুদ্বুদের মত হারিয়ে যায়, ললিপপ দেখানোর রাজনীতি নতুন নয়

৷৷ পরিতোষ বিশ্বাস৷৷ 

ত্রিপুরায় উপজাতিদের জন্য যতখানি না কাজ হয়েছে তার থেকে বেশী দরদ উপচে পড়েছে৷ ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এরাজ্যে কে কত বেশী উপজাতি দরদী তার প্রতিযোগীতা লক্ষ্য করা গেছে৷ সিপিএম এডিসি পত্তনের পক্ষে সওয়াল করে৷ উপজাতিদের স্বশাসনের দাবীতে আন্দোলনে নামে উপজাতি যুব সমিতি৷ পাহাড়ে উপজাতি যুব সমিতি প্রতিপত্তি বাড়াতে থাকে৷ প্রমাদ গুনে সিপিএম৷ তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যে যুব সমিতি থাবা বসাতেই সিপিএমের উপজাতি সংগঠন গণমুক্তি পরিষদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়৷ মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী উপজাতিদের জন্য বিভিন্ন প্রয়াসের কথা ঘোষণা করেন৷ ত্রিপুরায় উপজাতি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা দশরথ দেব উপজাতি জীবনের মানোন্নয়নের পক্ষে প্রচার করেন৷ একথা স্বীকার করতেই হয় যে রাজন্য আমলে উপজাতিদের জন্য তেমন কোন ভূমিকা ছিল না৷ পঞ্চাশ ষাটের দশকেও দেখা গিয়েছে বহু উপজাতি লোক নেংটি পরে থাকতেন৷ কংগ্রেস আমলে উপজাতি দরদের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তেমন কোন কার্য্যকর ব্যবস্থা হয়নি৷ বামফ্রন্ট উপজাতিদের এই বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় হাত বসায় যুব সমিতি নতুন করে আন্দোলনের সূচনা করে৷ বামফ্রন্ট ক্ষমতায় বসেই ত্রিপুরার প্রায় তিনভাগ জায়গা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষেদের অধীনে নিয়ে আসে৷ এর মধ্যে অধিকাংশই রিজার্ভ ফরেস্ট৷ উপজাতি যুব সমিতি দাবী তুলে এডিসিটে ষষ্ঠ তপশিলে উন্নীত করেত হবে৷ প্রচার দাবীর ব্যাপকতা দেখে মনে হয়েছিল এডিসিকে ষষ্ঠ তপশিল চালু করলেই উপজাতি জীবনের সমস্ত বঞ্চনার অবসান হয়ে যাবে৷ উপজাতিরা নতুন করে উজ্জীবিত হবে৷ এডিসিতে ষষ্ঠ তপশিল চালুর দাবী তুলে উপজাতি যুব সমিতি উপজাতিদের মধ্যে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নেয়৷ আর তখনই দেখা যায় স্বাধীন ত্রিপুরার ডাক৷ বিজয় রাঙ্খলের নেতৃত্বে সশস্ত্র উগ্রপন্থী দল টিএনভি রাজ্যে সন্ত্রাস গণহত্যা চালিয়ে যেতে থাকে৷ তাঁরা স্বাধীন ত্রিপুরা চায়৷ উগ্রপন্থী আন্দোলনকে প্রকারান্তরে বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী সমর্থন করেন৷ তিনি বলেন, আমি যদি উপজাতি হতাম তাহলে উগ্রপন্থায় যোগ দিতাম৷ সিপিএমের উপজাতি নেতা দশরথ দেবের চাইতেও যে নৃপেন চক্রবর্তী অনেক বেশী উপজাতি দরদী তা প্রমাণের চেষ্টা করতে থাকনে৷ রাজ্যে উগ্রপন্থার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে৷ একের পর এক গণহত্যা রাজ্যকে সন্ত্রস্ত করে তুলে৷ বহু মানুষ বাড়ি ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে৷ এই বিভৎস অবস্থায় ত্রিপুরায় ১৯৮০ সালে নজিরবিহীন ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় সব ছাড়খার হয়ে যায়৷ সেদিনও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রপতি শাসনের পথে হাটেননি৷ তিনি বিমানে সেনা বাহিনী পাঠিয়ে এই গণহত্যার বিভৎসতা রোধ করেন৷ এদিকে টিএনভির সশস্ত্র আন্দোলন স্বাধীন ত্রিপুরার দাবীতে৷ রাজ্যজুড়ে হত্যা চালিয়ে যায়৷ উপজাতি যুব সমিতি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে উপজাতিদের দাবী আদায়ে অনঢ় থাকে৷ ইন্দিরা গান্ধী সংবিধান সংশোধন করে ত্রিপুরার এডিসিকে ষষ্ঠ তপশিলের আওতায় নিয়ে আসেন৷


১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ দীর্ঘ দশ বছরে ত্রিপুরায় উগ্রপন্থার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে৷ দাঙ্গা হয়েছে৷ ১৯৮৮ এর নির্বাচনে কংগ্রেস উপজাতি যুব সমিতির সাথে জোট বেঁধে অবতীর্ণ হয় এবং ক্ষমতাসীন হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন কংগ্রেসের সুধীর মজুমদার৷ ক্ষমতাসীন হয়েই যুব সমিতি আন্দোলন বিমুখতায় আচ্ছন্ন হয়৷ ১৯৯৩ সালে নির্বাচনে কংগ্রেস যুব সমিতি জোট ক্ষমতা হারায়৷ আবার আসীন হয় বামফ্রন্ট৷ ইতিমধ্যে আরও অনেক উপজাতি দলের জন্ম হয়েছিল৷ কিছুদিন যেতে না যেতেই এই দলগুলি বিলীন হয়ে যায়৷ কত উপজাতি দল এরাজ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে তার হিসেব রাখা মুশকিল৷ উপজাতি যুব সমিতিও একসময় হারিয়ে যায়৷ মিশে যায় নতুন উপজাতি দলে৷ এরআগে সশস্ত্র উগ্রপন্থী দল টিএনভির সাথে শান্তিচুক্তি হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী সুধীর মজুমদার ও টিএনভি প্রধান বিজয় রাঙ্খল দিল্লীতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন৷ বহু উগ্রপন্থী অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করে৷ তাদেরকে চুক্তি মোতাবেক সরকার থেকে সাহায্য করা হয়েছিল৷ স্বাভাবিক জীবনে এসে বিজয় রাঙ্খলের দল টিএনভি সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে দল পরিচালনা করে৷ সেই টিএনভিও বিলীন হয়ে যায় অন্য দলে মিশে৷ ঐক্যবদ্ধ উপজাতি ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা কার্য্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ উপজাতিদের নিয়ে এরাজ্যে বহু দল রাজনীতি করেছে৷ কিন্তু, কোনদলই উপজাতি জীবনে নতুন বার্তা দিতে পারেনি৷ এরাজ্যে উপজাতিদের বঞ্চনার ইস্যুকে পূঁজি করে বিভিন্ন উপজাতি দল রাজনীতিই করে গিয়েছে৷ কার্য্যত ত্রিপুরার উপজাতিদের উন্নতির সোপান রচনা করতে পারেনি৷ আজ তিপ্রা মথা তাদের দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টায় আছে৷ পাহাড়ে আইপিএফটিও তাদের শক্তি হারিয়েছে৷ সিপিএমের উপজাতি সংগঠন গণমুক্তি পরিষদ  মাটি হারিয়েছে উপজাতি এলাকায়৷ এই অবস্থায় ত্রিপুরার সামনের নির্বাচনে উপজাতিরা কী ভূমিকা নেন এটাই আজ দেখার বিষয়৷ (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *