BRAKING NEWS

(আপডেট ) টাকা নিয়ে বিবাদের জেরেই বাবাকে খুন, স্বীকার ছেলের

বারুইপুর, ২০ নভেম্বর (হি. স.) টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই বাবাকে খুন করেছে ছেলে। দক্ষিন ২৪ পরগনার বারুইপুরের ডিহি এলাকায় প্রাক্তন নৌসেনাকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রাক্তন নৌসেনা কর্মী উজ্জ্বল চক্রবর্তীর ছেলে রাজু চক্রবর্তী ওরফে জয়ের তিন হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। আই টি আইয়ের ছাত্র জয় চাকরির জন্য চেন্নাইয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য বাবার কাছে টাকা চাইতেই তাঁকে গালিগালাজ ও মারধর করে বাবা উজ্জ্বল চক্রবর্তী। সেই সময় পাল্টা বাবাকেও মারধর করে জয়। মা ও ছেলে মিলে সেই সময়ই উজ্জ্বলকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। এরপর দেহ লোপাট করতে ধারাল কড়াত দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে আসে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি পারিবারিক বিবাদ, অশান্তির জেরেই এই খুন হয়েছে। ঐ নৌসেনা কর্মী গত ২০০০ সালে চাকরি ঠিক অবসর নেন। তারপর তিনি প্রথমে একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করতেন এবং বর্তমানে তিনি আদালতে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করছিলেন। তবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মদ্যপান করে এসে বাড়িতে স্ত্রী, ছেলের উপর অত্যাচার করতেন। সব মিলিয়ে দিনের পর দিন এই অত্যাচার বাড়ছিল। গত ১৪ নভেম্বর ছেলে টাকা চাইলে একইভাবে ছেলে, স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করলে ছেলে পাল্টা বাবাকে মারধর করে। এরপরেই ছেলে জয় ওরফে রাজু চক্রবর্তী ও তাঁর মা শ্যামলী চক্রবর্তী শ্বাসরোধ করে খুন করে বাবা উজ্জ্বল চক্রবর্তীকে। তারপর বাড়ির বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দেহ লোহার কড়াত দিয়ে মোট ছয়টি টুকরো করা হয়। সেই দেহ সাইকেলে চাপিয়ে আশপাশের জঙ্গল ও জলাশয়ে ফেলে রাজু।
এভাবে উজ্জ্বলের দেহ লোপাটের পর নিজেরাই বারুইপুর থানায় বাবার নিখোঁজ ডাইরি করেন মা ও ছেলে। শুধু তাই নয়, এরপর স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে উজ্জ্বলের বাড়ির অদূরে একটি জলাশয় থেকে তাঁর দেহের কিছুটা অংশ উদ্ধার হলে ঘটে বিপত্তি। পুলিশ দেহ উদ্ধার করলে মা ও ছেলে দুজনে মিলে বারুইপুর থানায় উজ্জ্বলকে খুনের মামলা দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় ঘটনার তদন্ত। কিন্তু ঘটনার তদন্তে নেমে বারুইপুর থানার পুলিশ বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করে। জয় ও তাঁর মার কথাবার্তা এবং আচরণ যথেষ্ট সন্দেহজনক লাগে তদন্তকারীদের কাছে। এরপর শনিবার দুপুরে জয়কে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। পুলিশি জেরায় ভেঙে পরে জয়। বাবাকে খুনের কথা স্বীকার করে সে। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় উজ্জ্বলের দেহের বাকি অংশ খুঁজতে জয়কে নিয়ে ডিহি এলাকায় যায় পুলিশ। শনিবার রাতেই উদ্ধার হয় দুটি পা। কিন্তু দেহের বাকি অংশ এবং শরীর টুকরো করার সেই কড়াতের খোঁজে রবিবার সকালে ফের তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

যে পুকুরে প্রথম দেহাংশ পাওয়া গিয়েছিল সেই পুকুরেই কড়াতটি ফেলেছিল বলে পুলিশকে জানায় জয়। সেই মোতাবেক রবিবার পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে চলে তল্লাশি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেলেনি কড়াত। অন্যদিকে ঐ পুকুরের উল্টোদিকে একটি জঙ্গলের মধ্যে শরীরের বাকি টুকরো গুলো ফেলেছে বলে পুলিশকে জানায় জয়। অভিযুক্তের কথা অনুযায়ী সেখানেও তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। অবশেষে সেখান থেকে উজ্জ্বল চক্রবর্তীর কোমরের অংশ উদ্ধার হয়। তবে এখনও পর্যন্ত নিহতের দুটি হাতের খোঁজ মেলেনি।
এরই মধ্যে রবিবার বারুইপুর কাণ্ডে অভিযুক্ত জয় চক্রবর্তী ওরফে রাজু এবং তাঁর মা শ্যামলী চক্রবর্তীকে আদালতে তোলে বারুইপুর থানার পুলিশ। চোদ্দদিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আদালত বারো দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রতি ৪৮ ঘণ্টা অন্তর দুজনেরই শারীরিক পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেন বিচারক। আগামী ২ ডিসেম্বর পুনরায় আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিন আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শ্যামলী বলেন, “ প্রতিদিন বাড়িতে ফিরে আমাকে ও ছেলেকে মারধর, গালিগালাজ করতো। প্রতিবেশীদের সাথেও ছোটখাট বিষয়ে অশান্তি করতো। দিনের পর দিন ওনার অত্যাচার বেড়েই চলেছিল আমাদের উপর। সহ্য করতে পারছিলাম না।”
এই ঘটনায় কার্যত তাজ্জব বনে গিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এমন ঘটনা কখনো এই এলাকায় হয়নি বলেই দাবি তাঁদের। কিভাবে একজনকে খুন করে তাঁর দেহ একাধিক টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হল এটা ভেবেই শিহরে উঠছেন সকলে। দিল্লি খুনের ঘটনার সাথেও কেউ কেউ তুলনা করেছে একে। অন্যদিকে উজ্জ্বলের প্রতিবেশীদের দাবি, এই ঘটনার জন্য উজ্জ্বল নিজেই দায়ী। ছোট থেকেই ছেলেকে নানাধরনের মারামারির টেকনিক শেখাতেন তিনি। কিভাবে মারলে এক মারেই মানুষ কুপকাত হবে সেসব নিজেই শেখাতেন। এছাড়া ছেলে বা স্ত্রীকে প্রতিবেশী কারো সাথেই মিশতে দিতেন না। নিজেও কারো সাথে মিশতেন না। হামেশাই প্রতিবেশীদের সাথে অশান্তি করতেন বলেও অভিযোগ তাঁদের। তবে এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটবে কেউ কল্পনা করতে পারেননি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *