করিমগঞ্জ (অসম), ১২ অক্টোবর (হি.স.) : চিরাচরিত কর্মসংস্কৃতির বাইরে গিয়ে বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন করল ডিস্ট্রিক্ট প্রেস ক্লাব করিমগঞ্জ। সাধারণত এ ধরনের অনুষ্ঠানে গতানুগতিক প্রথা অনুযায়ী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গুণীজনদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়ে থাকে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় করিমগঞ্জ শহরের বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতি ভবনে ডিস্ট্রিক্ট প্রেস ক্লাব আয়োজিত বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠান ছিল কিছুটা ব্যতিক্রমী।
এদিনের অনুষ্ঠানে একক নৃত্য, সমবেত নৃত্য ও যন্ত্রসংগীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করার পাশাপাশি সংবর্ধনা জানান রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও শহরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গুণীজনেরা। জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য ও জেলা কংগ্রেস সভাপতি রজত চক্রবর্তী, পুরপতি রবীন্দ্রচন্দ্র দেব, বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সতু রায়, সুখেন্দুবিকাশ পাল সহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা অনুষ্ঠান শেষে শিল্পীদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেছেন।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ডিস্ট্রিক্ট প্রেস ক্লাব আয়োজিত বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে। করিমগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী রামভদ্রানন্দজি মঙ্গলদ্বীপ প্রজ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। ডিস্ট্রিক্ট প্রেস ক্লাবের সভাপতি পিকে রায়, সম্পাদক চন্দনকুমার রায়, সদস্য গৌরিশ নন্দী, বিশ্বরূপ কর, জগবন্ধু রায়, সুজয় ধর, জাকির হুসেন প্রমুখ সহযোগিতা করেন।
বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা স্বামী রামভদ্রানন্দজি মহারাজ বলেন, জয়ের পরই বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিজয়া সম্মেলন এ ধরনেরই একটি বিজয়ের উৎসব। দেবী দুর্গা অসুর বধ করে স্বর্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অসুর নিধনের সঙ্গে জয়ের সম্পর্ক রয়েছে। রামচন্দ্র বারণ বধের আগে অকাল বোধন করেছিলেন। শরৎকালে রামচন্দ্র দেবীর বোধন করেছিলেন বলেই দুর্গা পুজো শারদোৎসব হিসেবে পরিচিত। স্বামীজি আরও বলেন, দেবতা ও অসুরদের লড়াই এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে অসুর প্রবৃত্তি রয়েছে। অসুর প্রবৃত্তিকে পরাজিত করতে পারেন যাঁরা তাঁরাই প্রকৃত মানুষ। দেবী দুর্গা নারীশক্তির প্রতীক ছিলেন। নারী হচ্ছেন দেবী দুর্গার প্রতিচ্ছবি। রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পুজোর প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে নারীদের মায়ের জাত বলে উল্লেখ করেন করিমগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী রামভদ্রানন্দজি।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। করিমগঞ্জ শহর তথা উপত্যকার বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী অরূপরতন দাস একটি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করে এদিনের বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করেন। শহরের বিশিষ্ট সমাজসেবী গৌতম দে উত্তরীয় পরিয়ে শিল্পী অরূপরতন দাসকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। শিল্পী প্রিয়াঙ্কা দাস চৌধুরি, শুভজিৎ চক্রবর্তী ও তাপস দেব পরিবেশিত গান বিজয়া সম্মেলনের অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। নৃত্য শিক্ষিকা পারমিতা পাল বণিকের পরিচালনায় চণ্ডী নৃত্য, সমবেত নৃত্য, একক নৃত্য ও ধামাইল দর্শক-শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নৃত্যে অংশ নিয়েছে সুমি দাস, তনুশ্রী রায়, সপ্তশিখা দেব, শতুনিকা দত্ত, দেবপ্রিয়া দে, মধুশ্রী চক্রবর্তী ও দেবীমালা দত্ত। একক নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী তানিশা চক্রবর্তী।
শিল্পীদের উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা জানান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম স্বাস্থ্য-অধিকর্তা ডা. সামসুল আলম, সুনীতরঞ্জন দত্ত, সুবীরবরণ রায়, রণজিৎ দেব, প্রবীর ভট্টাচার্য, সুলেখা দত্তচৌধুরি, তাপস পুরকায়স্থ, টিঙ্কু রায়, অপূর্ব দত্ত, সমীর মুখার্জি প্রমুখ। কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা পাঠ করেন অমিতাভ চৌধুরি। গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন রাহুল চক্রবর্তী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অমিতাভ চৌধুরী।