মুর্শিদাবাদ, ১০ অক্টোবর(হি স)। জাঙ্গিপাড়ার নাবালিকা হত্যার ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার হল চার জন। ধর্ষণে বাধা দেওয়ার কারণেই ওই নাবালিকাকে খুন করা হয় হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
দশমীর রাতে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় জাঙ্গিপাড়ার শ্রীহট্টো এলাকার বছর বারোর এক নাবালিকা। গত ৭ অক্টোবর জাঙ্গিপাড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঝিলের মধ্যে তাঁর মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। পাশেই পুরুষের এক জোড়া জুতো পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। কিশোরীর পরিবার অভিযোগ, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। নজরদারি চালাতে ড্রোনের ব্যবহার করা হয়। অবশেষে নাবালিকা খুনে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
জাঙ্গিপাড়ায় নাবালিকার মৃত্যুতে শুরু হয় রাজনৈতিক টানা চাপানোতর। রবিবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল দেখা করতে আসেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে তাদেরকে ফেরত যেতে হয়। পরবর্তীতে বিজেপির তরফ থেকে প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দেখা করতে আসেন মৃতের পরিবারের সঙ্গে। রাতে শিশু সুরক্ষা কমিশন থেকেও দুই প্রতিনিধি আসেন জঙ্গিপাড়ায়।
ধৃতদের সোমবার ভোরে হরিপাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। যে চার যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন নাবালক। পুলিশের দাবি, একটি নাবালকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই নাবালিকার। দশমীর দিন বাঁশ বাগানে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই নাবালক। নাবালিকা বাধা দিতে গেলে তাঁকে জোর করে ঝিলের জলে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও উল্লেখ নেই।
সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকার সঙ্গে এক নাবালকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দশমীর রাতে বাঁশ বাগানের মধ্যে নাবালিকাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে মেয়েটি বাধা দেয়। সেই সময়ই নাবালকের তিন বন্ধু বাঁশ বাগানের মধ্যে আসে। ধর্ষণে বাধা দেওয়াতে তখনই তাঁকে জোর করে ঝিলের জলে ফেলে দেওয়া হয়।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও উল্লেখ নেই। গোপনাঙ্গেও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। শরীরে অন্য কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। শুধুমাত্র পায়ে একটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত নাবালিকার সঙ্গে থাকা সাইকেল উদ্ধার হয়নি।
জাঙ্গিপাড়ায় সাংবাদিক বৈঠক করে হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার আমান দ্বীপ জানান, আজ ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হবে। ধৃতদের মধ্যে তিনজন নাবালক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ‘পকসো’ আইনে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
তবে, ইতিমধ্যে হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় নাবালিকার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃতের পরিবার। এমনকি পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। পরিবারের অভিযোগ, দশমীর রাতে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ কর্মীরা সহযোগিতা করেননি। পুলিশের তদন্তের উপর আস্থা রাখতে না পেরেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে তাঁরা।