BRAKING NEWS

NF Railway : বড়াইল পাহাড়কে এড়িয়ে লংকা-চন্দ্রনাথপুর নতুন বিকল্প রেলপথ নির্মাণের সমীক্ষা শীঘ্রই, ৪৩.২৩ কোটি টাকা মঞ্জুর, উপকৃত হবে ত্রিপুরা, মণিপুর ও মিজোরাম

হাফলং (অসম), ৮ জুন : বড়াইল পাহাড়কে এড়িয়েই এবার লংকা-চন্দ্রনাথপুর নতুন বিকল্প রেলপথ নির্মাণ হবে। লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনে রেলপথ নির্মাণের সমীক্ষার আগেই লংকা-চন্দ্রনাথপুর বিকল্প রেলপথটি নির্মাণের জন্য সার্ভে করেছিল রেল বিভাগ। কিন্তু সে সময় রেলবিভাগ এই বিকল্প রেলপথটি নির্মাণের বিষয়টি হিমঘরে পাঠিয়ে পরবর্তীতে লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনে রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চালিয়ে বরাইলের মধ্য দিয়ে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

বর্তমানে লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনে রেলপথের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এবার বড়াইল পাহাড়কে এড়িয়ে লংকা-চন্দ্রনাথপুর বিকল্প নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত জরিপের কাজ অবিলম্বেই শুরু হবে। ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রক চূড়ান্ত জরিপের জন্য ৪৩ কোটি ২৩ লক্ষ টাকার মঞ্জুরি দিয়েছে।

তবে এবার লংকা থেকে চন্দ্রনাথপুর যে নতুন বিকল্প রেলপথটি নির্মাণ হবে এই রুটে প্রায় পাহাড় নেই বললেই চলে। লংকা থেকে উমরাংসো কবাক হয়ে চন্দ্রনাথপুরে পৌঁছবে প্রস্তাবিত রেলপথটি। পাহাড় বলতে শুধু উমরাংসো থেকে কবাক পর্যন্ত কিছু জায়গা এবং তার আগে ও পরে প্রায় সমতল এলাকা।

এদিকে এই রেলপথ নির্মাণ হলে গুয়াহাটি থেকে বদরপুর পৌঁছতে অনুমানিক ৮ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে লামডিং থেকে বদরপুর পর্যন্ত হিল সেকশনে রেলপথে বদরপুরের দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। এবার লংকা থেকে চন্দ্রনাথপুর পর্যন্ত যে বিকল্প রেলপথটি হবে তার দূরত্ব ২০৮ কিলোমিটার। কিন্তু এই রেলপথটি লামডিং-বদরপুর হিলসেকশন থেকে অনেক নিরাপদ হবে। কেননা ওই রুটে এমন উঁচু পাহাড় নেই। বৃষ্টি হলে ওই সব স্থানে ভূমিঙ্খলনেরও সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। লামডিং-বদরপুর পাহাড় লাইন নির্মাণ করতে গিয়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। এরপর ওই রেলপথ শুরু হওয়ার সাত বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এবার এই রেলপথ সচল করতে গিয়ে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন।

বিশেষ করে হিল সেকশনের লামডিং-বদরপুর রেলপথের ডাইভার্শন এলাকা এই ভূমিঙ্খলনের পর আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। লামডিং-বদরপুর রেলপথ নির্মাণকালে কাজের গুণগত মান নিয়েও বহু প্রশ্ন ওঠেছিল। এমন-কি এই রেলপথের ডাইভার্শন অংশের মাটির গুণগত মান নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছিল ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু রেলবিভাগ এ সবকে তোয়াক্কা না করেই রেলপথটি নির্মাণ করে। এই রেলপথ নির্মাণ হওয়ার পর যে সিআরএস পরিদর্শন হয়েছিল সে সময় কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি সুদর্শন নায়কও নিউহাফলং থেকে ডিটেকছড়া, চন্দ্রনাথপুর পর্যন্ত রেলপথ পরিদর্শন করে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি তাঁর রিপোর্টে বিস্তারিত উল্লেখও করেছিলেন।

রিপোর্টে তিনি বলেছিলেন, এই রেলপথের সেতু ও টানেলের ডিজাইনে গলদ রয়েছে। তিনি এ-কথাও বলেছিলেন, রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে যেভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে তা একেবারে বিজ্ঞানসম্মত হয়নি। যে কোনও সময় এ সব পাহাড় ধসে পড়তে পারে। তাই এই রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল নিরাপদ নয়।

এবারের বৃষ্টিতে লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনের ৮৫ কিলোমিটার অংশ বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি সুদর্শন নায়ক সিআরএস পরিদর্শন করে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রেল বিভাগের এই অদূরদর্শিতার জন্য ডিমা হাসাও সহ বরাক উপত্যকার তিন জেলা এবং পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা, মণিপুর ও মিজোরামের মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এমতাবস্থায় লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনে রেলপথের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এবার লংকা-চন্দ্রনাথপুর বিকল্প নতুন রেলপথের চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ শীঘ্রই সম্পূর্ণ করতে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার আনশুল গুপ্তাকে নির্দেশ দিয়েছে রেলবোর্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *