আগরতলা, ১১ জানুয়ারি (হি. স.) : ত্রিপুরায় করোনার প্রকোপে হটাত লাগামহীন বৃদ্ধিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাতে এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেন, সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত রয়েছে। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। করোনার তৃতীয় ঢেউ সকলকে সাথে নিয়ে মোকাবিলা করবে ত্রিপুরা সরকার। সাথে তাঁর কড়া সতর্ক বার্তা, নৈশকালীন কারফিউ কিংবা করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির অজুহাতে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি বরদাস্ত করা হবে না। ত্রিপুরায় পর্যাপ্ত সামগ্রী মজুত রয়েছে। কালোবাজারী কঠোর হাতে দমন করা হবে। সাথে তিনি আশ্বস্ত করেন, খুব শীঘ্রই ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তদের জন্য প্রায় ২০ হাজার শয্যার ব্যবস্থা করা হবে।
আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ সকলের সহযোগিতায় ত্রিপুরা সরকার মোকাবিলা করেছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনশৈলী সুন্দর গতি নেওয়া শুরু হতেই তৃতীয় ঢেউ প্রভাব বিস্তার করছে। তাঁর দাবি, এবারও সকলে মিলে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করব।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ত্রিপুরায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। সম্প্রতি করোনার সংক্রমনে বৃদ্ধিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সকলের তা অবশ্যই পালন করা উচিত। এদিন তিনি মাক্স পরিধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের উদ্বৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাক্স পরিধানে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো অনেকাংশে সম্ভব।
তিনি জানান, ত্রিপুরায় বর্তমানে সংক্রমণের হার ৭.০৯ শতাংশ। তাতে স্পষ্ট, করোনার সংক্রমণ দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই, আগাম সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর আবেদন, ভিড় স্থানে যাবেন না, গাড়িতে যতটা সম্ভব দুরত্ব মেনে বসবেন এবং ১০০ শতাংশ মাক্স পরিধান সুনিশ্চিত করুন। তবেই সংক্রমণ রুখে দেওয়া অনেকটাই সম্ভব হবে, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি।
এদিন তিনি সকলকে অবগত করেন, ত্রিপুরায় বর্তমানে করোনার প্রকোপ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে। তাঁর দাবি, ২২টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট, ১৭২৯টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, ২২৬৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ২৩৯১টি পালস অক্সি মিটার, ১৯৩টি ভেন্টিলেটর ত্রিপুরায় রয়েছে। এছাড়াও, ঔষুধ এবং মাক্স পর্যাপ্ত মজুত আছে।
তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ জোর কদমে চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭৭ হাজার টিকাকরণ হয়ে গেছে। এছাড়াও, ১৮ বছরের উর্ধদের প্রায় ৪৮ লক্ষ ২১ হাজার ৯০৬টি ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন টিকাকরণে অনেকাংশে মানুষ সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
এদিন তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সারা ত্রিপুরায় সংক্রমণের ৭.০৯ শতাংশ হলেও শুধু পুর নিগম এলাকায় সংক্রমণের হার ১৭.২২ শতাংশ। তিনি জেলা ভিত্তিক সংক্রমণের হার তুলে ধরে বলেন, পশ্চিম ত্রিপুরায় ১০.২৯ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ৫.০২ শতাংশ, সিপাহীজলা জেলায় ৫.২৫ শতাংশ, গোমতি জেলায় ৫.২১ শতাংশ, দক্ষিণ জেলায় ৭.১২ শতাংশ, উত্তর ত্রিপুরায় ১.৪৯ শতাংশ, ঊনকোটি জেলায় ৫.২৫ শতাংশ এবং ধলাই জেলায় ৪.২৫ শতাংশ করোনায় সংক্রমিত রয়েছেন।
আজ মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশ্যে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহবান জানিয়েছেন। তিনি অভয় দিয়ে বলেন, ত্রিপুরায় বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার চিকিত্সায় ৩৬১৯টি শয্যা রয়েছে। আরও ২০ হাজার শয্যা খুব শীঘ্রই জুড়তে চলেছে। তাই, ঘাবড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। উপসর্গ বেশি হলে ততক্ষনাত হাসপাতালের চিকিত্সা নিন।
তাঁর পরামর্শ, করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে অধিক মাত্রায় থাকার চেষ্টা করুন। কিন্ত, শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সঙ্গে সঙ্গে সরকারী চিকিত্সা পরিষেবার সান্নিধ্যে যান। সাথে তিনি সতর্ক করেন, ত্রিপুরায় প্রবেশে বাধ্যতামূলক করোনার নমুনা পরীক্ষার আদেশ সকলকে মানতে হবে। ওই আদেশ অমান্য হলে তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি কিছু বিমান যাত্রী করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে অযথা হইচই করেছেন। তাঁদের সকলের প্রতি অনুরোধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সহযোগিতা করুন।
এদিন তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, কোভিদের বাহানায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ত্রিপুরায় পর্যাপ্ত সামগ্রী মজুত রয়েছে। তাই, কালোবাজারী করে মানুষের শোষণ প্রশাসন কঠোর ভাবে দমন করবে।